নাটোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষার্থী সুমাইয়া খাতুনকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামীর পরিবারের বিরুদ্ধে। গত রোববার রাতে শহরের হরিশপুর বাগানবাড়ি এলাকার সুমাইয়ার শ্বশুরবাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ সুমাইয়ার শাশুড়ি সৈয়দা মালিকা বেগম (৫০) ও ননদ জুঁই খাতুনকে (২৬) গ্রেফতার করেছে। তবে ঘটনার পর থেকে সুমাইয়ার স্বামী ডিপ্লোমা প্রকৌশলী মোস্তাক হোসাইন ও শ্বশুর জাকির হোসেন পলাতক।
অভিযোগ উঠেছে, শ্বশুরবাড়ির লোকজন সুমাইয়াকে নির্যাতন করে বালিশচাপা দিয়ে হত্যার পর মরদেহ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করে। এ ঘটনায় সোমবার রাতে সুমাইয়ার মা নুজহাত সুলতানা বাদী হয়ে নাটোর সদর থানায় সুমাইয়ার স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ননদকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। সুমাইয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে অনার্স পাস করেন। বর্তমানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির ফলপ্রত্যাশী ছিলেন।
নিহত সুমাইয়ার চাচা আহম্মদ আলী বলেন, 'নাটোরের হরিশপুর বাগানবাড়ি এলাকার জাকির হোসেনের ছেলে মোস্তাক হোসাইন নিজেকে বুয়েট পাস করা ইঞ্জিনিয়ার পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আমার ভাতিজি সুমাইয়া খাতুনকে গত বছর বিয়ে করেন। পরে জানা যায়, ছেলে নাটোরের একটি বেসরকারি টেকনিক্যাল কলেজ থেকে পাস করা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। বিয়ের পর থেকেই জামাতা মোস্তাক হোসাইন বেকার থাকার কারণে সুমাইয়ার বাবা ইসলামি বক্তা সিদ্দিকুর রহমান যশোরী তাদের সমুদয় ব্যয়ভার বহন করতেন। তার দেওয়া খরচে মেয়ে সুমাইয়া ও জামাতা মোস্তাক হোসাইন ঢাকায় বাস করত। কিন্তু ছয় মাস আগে সিদ্দিকুর রহমান মারা যাওয়ার পর থেকে সুমাইয়ার পরিবার কোনো খরচ দিতে না পারায় সুমাইয়াকে নিয়ে নাটোর সদর উপজেলার হরিশপুর গ্রামে চলে আসে মোস্তাক।
সুমাইয়ার চাচা আহম্মদ আলী আরও বলেন, মাঝেমধ্যেই সুমাইয়াকে তার শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদ ও স্বামী মিলে নির্যাতন করত। তার মা নুজহাত সুলতানা স্ট্রোকের রোগী হওয়ায় সে মাকে কিছু না জানিয়ে আমাকে বলত। গত রোববার রাতে তারা সুমাইয়া নির্যাতন করে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করে মরদেহ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করে।'
সুমাইয়ার মা ও মামলার বাদী নুজহাত সুলতানা বলেন, বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়ির লোকজন সুমাইয়ার পড়ালেখা ও পরে চাকরি করার ইচ্ছা মেনে নিতে পারছিল না। এ কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমার মেয়ে বড় হতে চেয়েছিল। সেটাই তার কাল হলো। পাষ মোস্তাক তাকে বাঁচতে দিল না। আমি মেয়ে হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।'
নাটোর সদর থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ দাফন করা করা হয়েছে। মোস্তাক ও তার বাবাকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।'