নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকায় এক হাজারেরও বেশি চীনা নাগরিকের ভিসা বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্সিয়াল প্রোক্লেমেশন ১০০৪৩ (পিআরসি)-এর আওতায় জুন থেকে এসব ভিসা বাতিল করা হয়। অভিযোগ, চীনা গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থী ও গবেষকরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে তথ্য পাচার করে। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক আছে চীনা সেনাবাহিনীর।
এ বিষয়ে বযুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়, গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থী ও গবেষণায় লিপ্ত থাকা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রেসিডেন্সিয়াল প্রোক্লেমেশন ১০০৪৩ এর অধীনে তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাই তাদের ভিসা এখন আর বৈধ নয়।
বলা হয়, প্রেসিডেন্সিয়াল প্রোক্লেমেশন মে মাসের শেষের দিকে জারি করেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তা বাস্তবায়ন শুরু হয় ১লা জুন। প্রেসিডেন্টের ওই ঘোষণায় বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা সম্পদের মতো স্পর্শকাতর ইস্যুগুলোর বিষয়ে ব্যাপক ও গভীরভাবে যুক্ত চীন। এর মধ্য দিয়ে তারা তাদের সেনাবাহিনী পিপলস লিবারেশন আর্মিকে আধুনিকায়ন ও সক্ষম করে গড়ে তুলতে চায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি, গোয়েন্দা প্রপার্টি এবং আধুনিক সামরিক সক্ষমতার বিষয়ে তথ্য বাইরে পাচার বন্ধে চীনা গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থী ও গবেষকদের পিআরসির অধীনে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। এ কারণে তাদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি চাদ উলফ বলেছেন- অর্থনীতি, সেনাবাহিনী এমনকি তার কূটনৈতিক ক্ষমতা সহ সবকিছু ব্যবহার করেছে চীন। এর মধ্য দিয়ে তারা পশ্চিমা উদার গণতন্ত্রকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তারা নিজেদের কর্তৃত্ববাদী ভাবমূর্তি নিয়ে ওয়ার্ল্ড অর্ডারকে পুনর্নির্মাণে প্রতিশ্রুতি পাল্টাচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে,মার্কিন সরকারের সাম্প্রতিক এ সিদ্ধান্তে যারা বহিষ্কার হয়েছেন তারা পুরো চীনা শিক্ষার্থী ও পন্ডিতজনের মধ্যে ক্ষুদ্র একটি অংশ। বৈধভাবে যেসব শিক্ষার্থী ও গবেষক, চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টির লক্ষ্যের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক নেই,এবং চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চায়,তাদেরকে অব্যাহতভাবে স্বাগত জানানো হবে বলে বলা হয়।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করছেন প্রায় তিন লাখ ৬৯ হাজার চীনা নাগরিক। তবে অনেকের পড়াশোনা করোনা ভাইরাসের কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে। ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনের মতে, এক দশক ধরে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ হলো চীনের। চীনই এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় উৎস।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ ওই ঘোষণায় এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি বেইজিং। এর আগে জুনে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছিল, চীনের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার যেকোন উদ্যোগ নিলে তারা তার বিরোধী এবং স্বাভাবিক শিক্ষা বিষয়ক বিনিময়ের ক্ষেত্রকে রাজনীতিকরণের যেকোনো উদ্যোগের কঠোর নিন্দা জানায় তারা।
সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে যে সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে,তা আরো তীব্র হবে বলে মনে করা হচ্ছে। চীনও এক্ষেত্রে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে। অন্তত এতদিনে তেমনটাই হয়ে এসেছে। জুনে ট্রাম্প প্রশাসন হিউজটনে চীনের একটি কনস্যুলেট বন্ধ করে দেয়। তার জবাবে চীনও চেংদুতে যুক্তরাষ্ট্রের মিশন বন্ধ করে দেয়।