দেশে দেশে শিক্ষকরা আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালন করছেন। এ বছর ইউনেস্কো বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘তরুণ শিক্ষকরাই পেশার ভবিষ্যৎ’। এতে যুক্তি আছে স্বীকার করতে হবে। তরুণদের পক্ষেই শিক্ষাব্যবস্থার ধমনিতে নতুন সৃজন, ভাবনা সংযোজন এবং পুরনো জট ও জঞ্জাল অপসারণ তুলনামূলকভাবে অনেক সহজসাধ্য। কিন্তু সে জন্য নিশ্চিত হওয়া দরকার তরুণসমাজ শিক্ষকতায় আকৃষ্ট হচ্ছে কি না। দেশ-বিদেশের তথ্য পরিসংখ্যানে এখন এটা স্পষ্ট- ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও সিঙ্গাপুরের কথা বাদ দিলে পেশা হিসেবে শিক্ষকতা তরুণ, এমনকি মধ্য বয়সীদেরও খুব একটা আকর্ষণ করে না। অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক উন্নত দেশেই তরুণদের কাছে পেশা হিসেবে শিক্ষকতা তাদের অগ্রাধিকার তালিকায় নেই। এমনকি তরুণদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশই এ পেশা ছেড়ে দেয়ার পক্ষে। যুক্তরাজ্যে বেশি কাজ ও কম বেতনের কারণে যাদের বয়স ৩৫ বছরের কম, তাদের প্রায় অর্ধেকসংখ্যক শিক্ষক আগামী ৫ বছরের মধ্যে শিক্ষকতা ছেড়ে দিতে পারেন বলে ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব টিচার্সের এক জরিপে জানা যায়। আমেরিকায় ৪১ শতাংশ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক পেশায় যোগদানের ৫ বছরের মধ্যে পেশা ত্যাগ করেন বলে ইউনেস্কো বিশ্ব শিক্ষক দিবস-২০১৯ উপলক্ষে প্রকাশিত ধারণাপত্রে উল্লেখ করেছে। শনিবার (৫ অক্টোবর) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
আরও দেখুন: বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপন শুরু হলো যেভাবে (ভিডিও)
নিবন্ধে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে সরকার থেকে বেতন-ভাতাপ্রাপ্তির জন্য যোগ্যতার সব শর্ত পূরণ সত্ত্বেও এমপিও না পেয়ে বেসরকারি মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ে পাঠদানকারী শত শত শিক্ষক যেমন অনিচ্ছা সত্ত্বেও পেশা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন, একইভাবে একই যোগ্যতার অধিকারী অন্যান্য পেশায় কর্মরতদের থেকে বেতন-ভাতা ও সামাজিক মর্যাদা কম হওয়ার কারণেও শিক্ষকতা থেকে দূরে চলে গেছেন। এ প্রেক্ষাপটে ইউনেস্কো বিশ্ব শিক্ষক দিবসে এ বছর যে প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে, তাতে এটা বুঝতে বেগ পেতে হয় না যে, শিক্ষকতা পেশায় তরুণদের প্রত্যাশার প্রতিকূলে বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, সেদিকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে সৃজনশীল তরুণদের পক্ষে অবস্থান তৈরি এর লক্ষ্য।
দেশের ১০ লক্ষাধিক শিক্ষক বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালন করবেন। দেশে প্রাথমিক বাদ দিলে পরবর্তী শিক্ষা স্তরগুলোর ৯০ শতাংশের বেশি বেসরকারি হলেও সেখানে পাঠরত শিক্ষার্থী ও কর্মরত শিক্ষক উভয়েই বৈষম্য-বঞ্চনার শিকার। বঞ্চনা বুকে পুষে না রেখে তা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে আত্মানুসন্ধানে ভর করে এবং আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংহতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে শিক্ষকতা পেশায় নবীনের আগমন নিশ্চিতে নেবেন সংগঠিত, সুচিন্তিত পদক্ষেপ। দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে অতীতের মতো প্রত্যাশা পূরণে তারা আস্থা রাখতে চান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ওপর।
অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ : বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য।