তরুণরা যেভাবে অন্যদের করোনার ঝুঁকিতে ফেলছে - দৈনিকশিক্ষা

তরুণরা যেভাবে অন্যদের করোনার ঝুঁকিতে ফেলছে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, দেশটিতে তরুণ প্রজন্মের আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ছে। সেখানে ফ্লোরিডা, সাউথ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া ও টেক্সাস সহ আরও কিছু অঙ্গরাজ্যে তরুণদের বেশি আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের বেশি হারে আক্রান্ত হওয়াকে এখন বিশ্বব্যাপী বিশেষ উদ্বেগের সাথে দেখা হচ্ছে। মঙ্গলবার (৩০ জুন) বিবিসি অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শাহনাজ পারভীন। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, তরুণ প্রজন্ম 'সেকেন্ড ওয়েভ' অর্থাৎ সংক্রমণ কমে আসার পর আবার ঊর্ধ্বগতিতে সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য দায়ী হতে পারেন কিনা সেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশেও অপেক্ষাকৃত কম বয়সীরাই করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।

সরকারি সংস্থা রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট আইইডিসিআর তথ্যমতে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে এপর্যন্ত শনাক্ত ব্যক্তির ৫০ শতাংশেরই বয়স ২১ থেকে ৪০ বছর।

তরুণরাই যখন ঝুঁকির কারণ

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগ ৩০শে জুন জানিয়েছে এর আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ৬৪ জন মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃতদের মধ্যে ৪৮ জনেরই বয়স ৫১ থেকে ৮০ বছর।

যাদের উপসর্গ গুরুতর হচ্ছে তাদের মধ্যেও বয়স্করাই বেশি রয়েছেন। বিশ্বব্যাপীই এই প্রবণতা রয়েছে।

আইইডিসিআরের ভাইরলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন বলছেন, "তরুণরা উদ্বিগ্ন বোধ করছেন না। কারণ তারা দেখছেন যে আক্রান্ত হলেও তাদের উপসর্গগুলো খুব গুরুতর নয়। অনেক সময় তাদের মধ্যে কোন উপসর্গই দেখা যায় না। তারা দেখছে যে মূলত বয়স্করাই বেশি মারা যাচ্ছেন। তাই করোনাভাইরাসকে তারা হালকাভাবে নিচ্ছেন।"

এর ফল হল তরুণরা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন কম। তারা যে অন্যদের জন্য ঝুঁকির কারণ সে বিষয়ে আলাদা করে কোন প্রচারণা না থাকায় সংক্রমণ রোধে নিজেদের দায়িত্বটুকু তারা বুঝতে পারছেন না।

অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন বলছেন, "রাস্তায় নামলে দেখা যায় অনেক তরুণ গা ঘেঁষাঘেঁষি করে আড্ডা দিচ্ছেন। কারো মুখে হয়ত মাস্ক আছে, কারো নেই, কেউ আবার মাস্ক গলায় ঝুলিয়ে রেখেছেন। তারা বাইরে বের হন বেশি, তাদের মধ্যে রেকলেস হওয়ার প্রবণতাও বেশি।"

"এই তরুণরাই বাড়ি গিয়ে নিজের পরিবার, প্রতিবেশী, আত্মীয়দের সংক্রমিত করছেন। পরিবারে আগে থেকেই কারো হার্ট, কিডনির সমস্যা বা ডায়াবেটিস আছে তাদেরকেও বড় ঝুঁকিতে ফেলছেন।"

অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন বলছেন, তরুণরা নিজেরা আক্রান্ত হয়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরীক্ষা ব্যবস্থার উপর চাপ তৈরি করছেন।

তাদের কারণেই হয়ত একজন বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর পরিস্থিতিতে হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। এতে হাসপাতাল ব্যবস্থার উপরেও চাপ পড়ছে।

বাংলাদেশে পরিবারের কাঠামো
বাংলাদেশের পারিবারিক কাঠামোর জন্যেও তরুণরা অন্যদের ঝুঁকির কারণ, বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক জোবাইদা নাসরিন।

তিনি বলছেন, "বাংলাদেশে এখনো পরিবারগুলোতে বাবা-মা, ভাই-বোন হয়ত অন্য কোন আত্মীয় সবাই মিলে একসাথে থাকেন। বাংলাদেশে কয়টি পরিবার সবার জন্য আলাদা রুমের ব্যবস্থা করতে পারে? হয়ত দুই ভাই বা দুই বোন একরুমে থাকে। স্বভাবতই তরুণদের কেউ বাইরে আক্রান্ত হলে সে বাড়িতে অন্যদের সংক্রমিত করবে।"

তিনি আরও বলছেন, "তারুণ্যের একটা চরিত্র রয়েছে। তারা বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে পছন্দ করে। হৈ হুল্লোড় তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। দীর্ঘ সময় অবরুদ্ধ থাকায় তারা হয়ত হাঁপিয়ে উঠে বাইরে বেশি বের হচ্ছেন। দিন যত বেশি হচ্ছে, বাংলাদেশ অনেক কিছু শিথিল করছে। তাই সামাজিক বিচ্ছিন্নতাও কিছুটা গুরুত্ব হারিয়েছে।"

তরুণদের ওপর চাপ

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে শনাক্ত ৫০ শতাংশের বয়স ২১ থেকে ৪০ বছর এই তথ্য আর একটি গুরুত্ববহন করে, বলছেন জোবাইদা নাসরিন।

তিনি বলছেন, "এই বয়সীরাই মূলত পরিবারের অর্থের যোগান দেয়ার দায়িত্ব পালন করেন বেশি। তাকে চাকরীর জন্য, ব্যবসা বাণিজ্য বা পরিবারের অন্যান্য কাজে বাইরে যেতে হয় বেশি।

আর করোনাভাইরাস সংক্রমণে বয়স্কদের অবস্থা বেশি গুরুতর হয় এমন তথ্য জানার পর আমরা কিন্তু আমাদের পরিবারের বয়স্কদের এক অর্থে ঘরে বন্দি করে ফেলেছি। তাদের কাজগুলোও তরুণরা করে দিচ্ছে।"

তরুণদের জন্য নেই আলাদা প্রচারণা

ঢাকার মিরপুরের এক গাড়িচালকের সাথে কথা হচ্ছিল। তার বয়স ২৫ হবে। কয়েকদিন আগে তার হালকা জ্বর ও শরীর ব্যথা হওয়ার পর বিষয়টিকে একেবারেই গুরুত্ব দেননি। পরিবারের সাথে সাধারণ সময়ের মতোই ওঠবস করেছেন।

করোনাভাইরাসের জন্য পরীক্ষা করিয়েছেন কিনা তা জানতে চাইলে তিনি বলছিলেন, "বেশি কিছুতো হয়নাই। ওই একটু জ্বর ও শরীর ব্যথা হইছিল। এখন ঠিক হইয়া গেছে।"

আমার বাসার পাশে একটি মুদি দোকানের কর্মচারীকে কোনদিনই মুখে মাস্ক পড়তে দেখিনি। তাকে জিজ্ঞেস করলে প্রতিবারই বলেছেন, "আরে আমাদের কিছু হবে না।"

গত কিছুদিন যাবত জ্বর হলেই চিকিৎসকেরা করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করাতে বলছেন। তিনি যদি আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে অন্যদের জন্য তারা যে ঝুঁকির কারণ হচ্ছেন আর সে কারণেই যে পরীক্ষা করিয়ে নেয়া ভাল, এই দুই তরুণ সেটির গুরুত্ব বুঝতে পারেননি বলেই মনে হল।

অন্যদিকে সরকারের স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের এত বেশি সংখ্যায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে তারা খুব একটা উদ্বিগ্ন বলে মনে হয়নি।

কম বয়সীদের বেশি আক্রান্ত হওয়ার দৈনিক তথ্য ঠিকই পাওয়া যাচ্ছে, তার কারণও তারা বলছেন। কিন্তু সংক্রমণ রোধে তরুণ প্রজন্মের যে বাড়তি দায়িত্ব সেটি তাদের বোঝাতে আলাদা করে প্রচারণার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক পরিচালক ডা. মো: হাবিবুর রহমান।

তিনি বলছেন, "কোভিড ১৯ সম্পর্কে সচেতনতায় আমরা যে প্রচারণা চালাচ্ছি সেখানে তরুণ প্রজন্মকে বোঝানোর জন্য আলাদা কোন প্রচারণা নেই। আমাদের গোটা কর্মসূচি সবাইকে ঘিরে একসাথে। বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাইকে আমরা মোটিভেট করার চেষ্টা করছি। তবে হ্যাঁ আমি আপনার সাথে একমত। তাদের জন্য আলাদা প্রচারণা হওয়া উচিৎ।"

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039160251617432