৩৬তম বিসিএসের অপর নাম যেন যন্ত্রণা। মূল রেজাল্ট প্রকাশিত হওয়ার পর ৬ মাস অতিবাহিত হলেও দেখা নেই কাঙ্ক্ষিত যোগদানের। বস্তুত ৩৪তম বিসিএসের দীর্ঘসূত্রতাকেও হার মানাচ্ছে ৩৬তম বিসিএস।
উল্লেখ্য, ৩৬তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৫ সালের ৩১ মে। আগামীকাল এটির তিন বছর পূর্তি হচ্ছে, নিঃসন্দেহে যা বেদনাদায়ক।
এদেশে চাকুরিতে যোগদানের নির্ধারিত বয়সসীমা ৩০ বছর। দেখা যাচ্ছে, চাকরিতে আবেদনের সময়ই অনেকে ত্রিশের কোঠায় পা রাখে। এক্ষেত্রে চাকরিতে যোগদান করতেই যদি তার বয়স ৩৩ পেরিয়ে যায়, তবে তা সত্যিই দুঃখজনক।
৩৪তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে শুরু করে নিয়োগ পর্যন্ত সময় লেগেছিল প্রায় ৪০ মাস, যার একটি মুখ্য কারণ ছিল মামলা। কিন্তু ৩৬তম বিসিএসের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করতেই লেগে যাচ্ছে ৩৬ মাস। ফলে অনিশ্চয়তা দানা বাঁধছে ২ হাজার ৩২২ জন নিয়োগ প্রত্যাশীর মনে।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে যেসব নব্য ৩৬তম বিসিএসের ক্যাডাররা অবস্থান করছেন, তারা চাকরিতে যোগদান করে ঈদের বোনাস নিয়ে পরিবারের সবার মুখে হাসি দেখার অপেক্ষায় দিন কাটালেও সে আশায় গুড়েবালি।
তারা এখন মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছেন, দীর্ঘসূত্রতা কী জিনিস! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরই তারুণ্যের জয়গান করেন। ৩৬তম বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার বিষয়টি জানতে পারলে আমার ধারণা, তিনি নিজেও অবাক হবেন।
বলা হচ্ছে দেশ ডিজিটাল হয়েছে। কিন্তু কোনো পরীক্ষার মূল রেজাল্ট প্রকাশের পর ৮ মাসেও যোগদান করতে না পারলে তাহলে তাকে ডিজিটাল বলা যাবে কি? পুলিশ, এনএসআইয়ের তদন্ত, এর সঙ্গে জেলা প্রশাসনের তদন্ত; আরও আছে স্বাস্থ্য পরীক্ষা।
এতগুলো ধাপ যদি রেজাল্ট প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই শুরু করা যায়, তাহলে সর্বাধিক ৩ মাসের মধ্যেই সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব। ৩৪ ও ৩৫তম বিসিএস ব্যতীত পূর্বের বিসিএসগুলোয় মূল রেজাল্ট প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে যোগদানের ক্ষেত্রে অনধিক ৬ মাস সময় লাগত। দেশ যত ডিজিটাল হচ্ছে, আমরা ততই পিছিয়ে পড়ছি।
আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের অংশীদার হতে চাই। কিন্তু সময়ক্ষেপণের ফলে নিয়োগপ্রত্যাশী মেধাবীদের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। মালয়েশিয়ার একজন সিভিল সার্ভিস অফিসারের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে যোগদানে সর্বোচ্চ ৬ মাস লাগে।
অথচ আমাদের দেশে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার ৬ মাস পর নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ শুরু হয়। ভারতের রাজ্যভিত্তিক পাবলিক সার্ভিসে নিয়োগ পরবর্তী ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হয়। সেখানে নিয়েগের আগে শুধু স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়।
আমরা যতই বলি দেশ ডিজিটাল করব, তারুণ্যের সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন পূরণ করব, তারুণ্যের শক্তি, সাহস ও কর্মস্পৃহাকে কাজে লাগাতে না পারলে সে স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সুদৃষ্টিই ২ হাজার ৩২২ জন তরুণদের কর্মস্পৃহা অনেকগুণ বাড়িয়ে দেশকে আরও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে পারে।
বিসিএস মূল রেজাল্ট গেজেট প্রকাশের যোগদানের সময়
প্রকাশের তারিখ তারিখ তারিখ
৩৪তম ২৯ আগস্ট, ২০১৬ ১৬ মে, ২০১৬ ১ জুন, ২০১৬ ৯ মাস
৩৫তম ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ২ এপ্রিল ২০১৭ ২ মে, ২০১৭ ৮ মাস
৩৬তম ১৭ই অক্টোবর, ২০১৭ অনিশ্চয়তা অনিশ্চয়তা প্রায় ৭ মাস অতিবাহিত
৩৬তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত