তিন বছরের কাজ ৯ বছরে - Dainikshiksha

সরকারি কলেজের অবকাঠামো উন্নয়নে ধীরগতিতিন বছরের কাজ ৯ বছরে

হামিদ-উজ-জামান |

জেলা পর্যায়ে সরকারি পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ ছিল তিন বছর। কিন্তু সেটি সময়মতো শেষ না হওয়ায় এখন সময় লাগছে ৯ বছর। শুধু অতিরিক্ত ছয় বছর সময়ই লাগছে না, দফায় দফায় বেড়েছে ব্যয়ও।

সেই সঙ্গে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প শেষ না হওয়ায় সুফল বঞ্চিত হয়েছে শিক্ষার্থীরা। তবে এর নেপথ্যে তিনটি প্রধান কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- রেট সিডিউলের পরিবর্তন, প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না পাওয়া এবং কোনো কোনো কলেজে নতুন ভবন নির্মাণে স্থান বুঝে না পাওয়া। এসব কারণে এখন প্রকল্পটির পেছনে অতিরিক্ত যাচ্ছে হাজার কোটি টাকা।

‘শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে জেলা সদরে অবস্থিত সরকারি পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজগুলোর উন্নয়ন (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্পের নিবিড় পরিবীক্ষণে উঠে এসেছে এসব চিত্র। সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) চলমান এ প্রকল্পটির পরীবক্ষণ করেছে।

প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলেছে- নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে না। বাস্তবায়নে ধীরগতিকে প্রকল্পের বড় দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কলেজ থেকে চাহিদা না নিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটির প্রস্তাব করাকেও দুর্বলতা বলে মনে করে আইএমইডি।

প্রকল্প পরিচালক মো. তাহিয়াত হোসেন সোমবার বলেন, আইএমইডির প্রতিবেদনের জবাব আমরা ইতিমধ্যে দিয়েছি। আরও জবাব দেব। তবে এটুকু বলতে পারি- প্রকল্প যখন অনুমোদন পায় তখন ২০০৮ সালের রেট সিডিউল অনুযায়ী ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল। কিন্তু নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১১ সালে। দেরিতে কাজ শুরু হওয়ায় পরবর্তীতে রেট সিডিউল সংশোধন করে ২০১৬ সালের রেট সিডিউল অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এটি প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হওয়ার অন্যতম কারণ। এ ছাড়া অনেক নতুন কাজও যুক্ত করা হয়েছে। সংশোধন করে ২০১৬ সালের রেট সিডিউল অন্তভুক্ত করা হয়েছে।

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় ৭৯টি হোস্টেল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। হোস্টেল নির্মাণসহ এ সব কলেজের অবকাঠামো উন্নয়নের সময়সীমা ছিল ২০১৩ সাল পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ের পাঁচ বছর বেশি সময়ে নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে মাত্র চারটি হোস্টেলের। বিভিন্ন জটিলতায় পাঁচটির কাজ এখনো শুরু হয়নি। অধিকাংশ হোস্টেলের কাজ অর্ধেকে থেমে আছে। ৫৮ ছাত্রী হোস্টেলের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কথা থাকলেও কাজ শুরু হয়নি ৫৫টির। ১০তলা ভিত্তির ১১ একাডেমিক ভবনের একটিরও কাজ শুরু হয়নি আট বছরে। ইতিমধ্যেই শেষ হওয়া কিছু কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। নির্মাণের পরপরই টাইলস খসে পড়েছে অনেক ভবনের। কাজের নিুমান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, আমি নিয়মিত তদারকি করছি। এ বিষয়ে তেমন কোনো অনিয়মের ঘটনা ঘটেনি।

সূত্র জানায়, তিন বছরের জন্য নেয়া প্রকল্পে দুই দফায় ছয় বছর সময় বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়েছে হাজার কোটি টাকার বেশি। দেড় বছরের কম মেয়াদ থাকা এ প্রকল্পে এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে সংশোধিত বরাদ্দের ৪৩ শতাংশ অর্থ। অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে দেড় বছরে ৯৫৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয় করতে হবে। অথচ চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে এ প্রকল্পে বরাদ্দ আছে ২০০ কোটি টাকা। এ অবস্থায় প্রকল্পটির কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে না বলে মনে করছে আইএমইডি। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি আবারো ব্যয় বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, ৬৫৫ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয় ধরে এ প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। ২০১০ সালের আগস্টে নেয়া প্রকল্পটির ব্যয় প্রথম দফায় বেড়ে দাঁড়ায় ৯৭৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। পরে ধীরগতির কারণে দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে এক হাজার ৬৯০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয় ধরে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। স্থবিরতার কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বাড়তি ব্যয় হচ্ছে এক হাজার ৩৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কোনো অর্থবছরই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় প্রত্যাশিত অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়নি। এতে বলা হয়েছে, প্রথম অর্থবছর ৫০ কোটি টাকা চাহিদার বিপরীতে দেয়া হয়েছিল মাত্র দুই কোটি ৬৬ লাখ টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছর ২৪২ কোটি টাকা চাহিদা থাকলেও প্রকল্প অফিস চেয়েছিল ৯৩ কোটি টাকা। এর বিপরীতে দেয়া হয় মাত্র ৩৫ কোটি টাকা। পরের অর্থবছর ১০০ কোটি টাকা চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ দেয়া হয় ৫৩ কোটি টাকা। সর্বশেষ গত অর্থবছর ৩০৪ কোটি টাকা চাহিদার বিপরীতে দেয়া হয় মাত্র ১৭০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত চাহিদার মাত্র ৫৩ দশমিক ৮০ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে প্রকল্পটিতে।

এ ছাড়া মহানগর এলাকার কলেজগুলোতে অবকাঠামো নির্মাণে অতিরিক্ত ভিতের প্রয়োজন হওয়ায় কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। কিছু কলেজে ভবন নির্মাণের জায়গা বুঝে পেতে বিলম্ব হওয়ায় কাজে বাড়তি সময় লেগেছে। এ ছাড়া প্রশাসনিক জটিলতা, বৈরী আবহাওয়া, পরীক্ষা চলাকালে কাজ বন্ধ থাকা, ঠিকাদারের গাফিলতিসহ বিভিন্ন কারণে কাজে বিলম্ব হয়েছে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবকাঠামো উন্নয়ন কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করা যায়নি বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা। তারা জানিয়েছেন, নির্মাণ করা ভবনে নিুমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় কেনা আসবাবপত্রের মানও ভালো নয়। সব কাজ একসঙ্গে বুঝে পাওয়া যায়নি। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার আগেই অনেক ভবনের টাইলস খুলে পড়েছে। দরজার ফিনিশিং অত্যন্ত নিুমানের। এমনকি প্রকল্পে নিম্নমানের নির্মাণসাগ্রমী ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্পের আওতায় চার হাজার শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য ১৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ব্যয় হয়েছে ১৪ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি মাত্র এক শতাংশ।

 

সৌজন্যে: যুগান্তর

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0065591335296631