করোনার অজুহাতে রাজধানীর শান্তিনগরে অবস্থিত হাবীবুল্লাহ বাহার ইউনিভার্সিটি কলেজে তিন মাস ধরে বেতন বন্ধ দুই শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারীর। কলেজের তহবিলে কোটি কোটি টাকা থাকা এ প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের অবহেলায় চরম সঙ্কটে পড়েছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। সঙ্কটে পড়ে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী ইতোমধ্যেই পরিবার পরিজন নিয়ে গ্রামে ফিরে গেছেন। শিক্ষক-কর্মচারীরা অবিলম্বে কলেজের কর্মকা-ের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
করোনার বিস্তার রোধে মার্চেই বন্ধ করা হয় দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বড় বড় কোন প্রতিষ্ঠানে বেতন সঙ্কটের কথা না শোনা গেলেও প্রতিষ্ঠান বন্ধের পরপরই নন-এমপিও সকল শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন বন্ধ করে দেয় হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজ কর্তৃপক্ষ। এমনকি ঈদ-উল-ফিতরেও দেয়া হয়নি বেতন-বোনাস। জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী কলেজটিতে বেতন দেয়া হয়। কিন্তু বেতন চাইলে অধ্যক্ষ সাফ জানিয়ে দেন, কলেজের ফান্ডে টাকা নেই। এমনকি শিক্ষকদের তিনি বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে না জানাতে নির্দেশ দেন।
এদিকে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। শিক্ষকরা পুরো ঘটনার জন্য দায়ী করছেন অধ্যক্ষ ও গত কমিটির কর্তাব্যক্তিদের। বিষয়টি তদন্তে ইতোমধ্যেই ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কলেজের বর্তমান গবর্নিং বডি। গবর্নিং বডির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ইতোমধ্যেই বলেছেন, বেতনের বাজেট আসেনি। আগের বাজেটের বকেয়াও আসেনি। এরপরও বেতন দেয়ার চেষ্টা চলছে। আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত কমিটি হয়েছে। অভ্যন্তরীণ অডিট হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোঃ গোলাম ফারুককে সাংবাদিকরা এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এখনও এমন অভিযোগ তিনি পাননি। ফান্ডে টাকা আছে কিনা সে বিষয়ে তিনি খোঁজখবর নেন। একই সঙ্গে বলেন, ‘আমরা অধিদফতরের পক্ষ থেকে সারাদেশের নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধের নির্দেশ দিচ্ছি। আজ কালের মধ্যেই এ নির্দেশনা চলে যাবে। ওই কলেজের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে বলেও জানান মহাপরিচালক।
শিক্ষকরা কর্তৃপক্ষের কাছে ও গণমাধ্যমের কাছে তথ্য তুলে ধরে বলেছেন, শিক্ষার্থীদের বেতন ও পরীক্ষার ফি বাবদ বছরে ২০ কোটি টাকার বেশি আয় হয়। যেমন ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষেও কলেজের আয় হয়েছে ২১ কোটি টাকা। সব খরচ বাদে বছর শেষে কলেজের ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত থাকার কথা। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে, ফান্ড ফাঁকা। তাও মার্চেই প্রথম জানা গেল। মূলত কলেজের অধ্যক্ষসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীনরা হরিলুট করেছেন। ভবন তৈরির নামে কলেজে কোটি কোটি টাকা লুট হয়েছে বলেও অভিযোগ শিক্ষকদের।
কলেজের দুইজন শিক্ষকের নামে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ছিলো। এছাড়া জামাতপন্থী শিক্ষক সংগঠন শিক্ষক ফেসবুক ফোরামের বিতর্কিত নেতারা গোপনে সভা করেন এই কলেজে। এমন অভিযোগ বিস্তর।