প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিশুদের পরীক্ষা উঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এখন এসব শ্রেণিতে শিশুদের মূল্যায়নের পদ্ধতি কী হবে, সেটি নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। পরীক্ষা উঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছেন শিক্ষাবিদরা। পরীক্ষার চাপ কমাতেই সরকারি এ সিদ্ধান্ত। পরীক্ষার বদলে বছর জুড়ে শ্রেণিকক্ষে ধারাবাহিক মূল্যায়নের পরামর্শও দিচ্ছেন অনেকে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে কারণে পরীক্ষা উঠিয়ে দেওয়া হলো, ধারাবাহিক মূল্যায়নের নামে সেই চাপ-ই আরও বেশি করে শিশুদের ঘাড়ে চেপে বসবে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এই তিন শ্রেণিতে মূল্যায়নের পদ্ধতি কী হবে সে সম্পর্কে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে একটি রূপরেখা তৈরি করেছে 'জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড' (এনসিটিবি)।
এনসিটিবির প্রস্তাব : প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া এনসিটিবির রূপরেখায় বলা হয়েছে, প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের একটি ধারাবাহিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে পরবর্তী শ্রেণিতে উন্নীত করা যেতে পারে। এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের শোনা, বলা, পড়া ও লেখা-এমন চারটি বিষয়ের ওপর মূল্যায়ন করে পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করা হবে।
ধারাবাহিক মূল্যায়নের ধারণাপত্রে বলা হয়েছে, এ মূল্যায়নের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে শিশুর পাঠের দুর্বল দিক চিহ্নিত করে সঠিক শিক্ষা দেওয়া। চারটি দক্ষতা অর্জনেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, 'প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোন পদ্ধতিতে ক্লাসে মূল্যায়ন করা হবে, সে বিষয়ে ১৭ এপ্রিল একটি সভা করেছি আমরা। এনসিটিবির প্রণয়ন করা মূল্যায়ন প্রস্তাবনা নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে।'
শিশুর ওপর থেকে পরীক্ষার চাপ কমাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির সব পরীক্ষা তুলে দিতে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেন। অতিরিক্ত চাপে লেখাপড়া নিয়ে শিশুদের মধ্যে যেন ভীতি তৈরি না হয় সেজন্য শিক্ষক ও অভিভাবকদের নজর দিতে গত ১৩ মার্চ এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, 'শিশুদের শিক্ষার জন্য অতিরিক্ত চাপ দেওয়া উচিত না। তাদের পড়াশোনাটা তারা যেন খেলতে খেলতে, হাসতে হাসতে সুন্দরভাবে নিজের মতো করে নিয়ে পড়তে পারে, সেই ব্যবস্থাটাই করা উচিত। সেখানে অনবরত পড়, পড়, পড় বলা বা তাদের ধমক দেওয়া- এভাবে আরও বেশি চাপ দিলে শিক্ষার ওপর থেকে তাদের আগ্রহ কমে যাবে। একটি ভীতি সৃষ্টি হবে। সেই ভীতি যেন সৃষ্টি না হয়, সে জন্য আমাদের শিক্ষক ও অভিভাবকদের আমি অনুরোধ করব।'