সুবিধাবঞ্চিত হাটহাজারী উপজেলার দুর্গম মনাই ত্রিপুরা পল্লীর চিত্র পাল্টে গেছে। ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের দক্ষিণ উদালিয়ার পশ্চিমে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করা এ পল্লীর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৫৫ পরিবারের জন্য চলতি বছরের জানুয়ারিতে সরকারের ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে বিনা মূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে সৌরবিদ্যুৎ।
হাটহাজারীর ইউএনও রুহুল আমিনের উদ্যোগে দুর্গম এ পল্লীতে দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও গড়ে ১২-১৫ ফুট প্রস্থের একটি মাটির তৈরি সড়ক, পানি নিষ্কাষনের জন্য ৬টি কালভার্ট, ৮টি সেমিপাকা স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার, সুপেয় পানির জন্য ৩টি গভীর নলকূপ ও টিনশেড সেমিপাকা বিদ্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে। এলাকায় বিদ্যালয় না থাকার কারণে এ এলাকার শিক্ষার্থীদের প্রায় সোয়া তিন কিলোমিটার পথ হেঁটে লেখাপড়া করতে হয়। কিন্তু ছয় বছরের কম বয়সী শিশুরা বরাবরের মতোই লেখাপড়ায় পিছিয়ে ছিল। হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মাত্র তিন মাস সময়ের মধ্যে নির্মিত এই বিদ্যালয়ে অবহেলিত এ পল্লীর ২৬ জন শিক্ষার্থী বিনা মূল্যে লেখাপড়া করার সুযোগ পেয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য বিশুদ্ধ পানির নলকূপ ও টাইলস করা শৌচাগার নির্মাণ ছাড়াও পাঠদানের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে একজন শিক্ষকও। প্রতিটি শিশুকে বিনা মূল্যে বই, খাতাসহ শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ইউএনও রুহুল আমিন বলেন, শতাব্দীকাল ধরে বসবাস করে আসা মনাই ত্রিপুরাপাড়ার বাসিন্দাদের জন্য প্রথমবারের মতো নির্মিত স্কুলে ৬ আগস্ট থেকে আনুষ্ঠানিক পাঠদান শুরু হয়েছে। জাতীয় পতাকাকে সম্মান জানানোর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দিনের পাঠদান শুরু হয়। স্কুল নির্মাণ থেকে শুরু করে পাঠদান শুরু করার সব কাজ উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়। ভবিষ্যতে এখানকার শিশুদের বিদ্যালয়মুখী করতে ইউনিফর্ম, শিক্ষা বৃত্তি, খেলনা ও প্রয়োজনে স্বাস্থ্যসম্মত মুখরোচক খাবার প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।
ত্রিপুরা পল্লীর বিবন ত্রিপুরা ও আদিবাসী ফোরামের সভাপতি সচিন কুমার ত্রিপুরা বলেন, আমাদের এলাকার ৩০-৩৫ জন শিক্ষার্থী সোয়া তিন কিলোমিটার হেঁটে বিদ্যালয়ে গিয়ে লেখাপড়া করলেও যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় বর্ষা মৌসুমে স্কুলে যাওয়া হয় না। সেখানে ছয় বছরের কম বয়সী শিশুদের লেখাপড়ার বিষয়টি ছিল অকল্পনীয়। এখন রাস্তা হয়েছে, সুপেয় পানির জন্য নলকূপ স্থাপন, স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন হয়েছে। সেমিপাকা স্কুলও পেয়েছি। অবশেষে ২৬ জন শিশুও ঘরের কাছে নির্মিত স্কুলে পড়ালেখার সুযোগ পেল।