পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র এমন এক ধরনের চৌম্বক ক্ষেত্র যা পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগ থেকে শুরু করে মহাশূন্য পর্যন্ত বিস্তৃত। ভূপৃষ্ঠে এর আয়তন ২৫ থেকে ৬৫ মাইক্রোটেসলা (০ দশমিক ২৫ গস থেকে ০ দশমিক ৬৫ গস)। এই শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রের কারণেই মহাবিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে থাকা কোটি ধরনের মহাজাগতিক রশ্মি থেকে রক্ষা পাচ্ছে আমাদের এ ধরিত্রী। পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র যদি কোনোদিন শূন্য হয়ে যায় তাহলে এ গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব টিকে থাকাটাই কঠিন হবে। আতঙ্কের কথা—দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের চৌম্বক ক্ষেত্র ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়ছে।
আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যবর্তী অঞ্চলটি যা কিনা সাউথ আটলান্টিক আনোমালি নামে পরিচিত; সেখানে চৌম্বক ক্ষেত্রের ঘনত্ব অনেক কমে গেছে। গত পাঁচ বছরেই এই ঘনত্ব প্রায় ৯ শতাংশ কমেছে। আর চৌম্বক ক্ষেত্র দুর্বল হয়ে পড়ায় ঐ অঞ্চল দিয়ে কোনো উড়োজাহাজ চলাচল কিংবা স্যাটেলাইটের কার্যক্রমও ব্যাহত হয়ে থাকে।
গবেষকদের ধারণা ভূচৌম্বক ক্ষেত্র দুর্বল হয়ে যাওয়া পৃথিবীর মেরুর পরিবর্তনের লক্ষণ হতে পারে। অর্থাত্ উত্তর মেরুর জায়গায় দক্ষিণ মেরু চলে যাবে আর দক্ষিণ মেরুর জায়গায় উত্তর মেরু। আজ থেকে ৭ লাখ ৮০ হাজার বছর আগেও একইভাবে একবার পৃথিবীর মেরু পরিবর্তন ঘটেছিল। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির পাঠানো একগুচ্ছ স্যাটেলাইটের সমন্বয়ে তৈরি ‘সুয়ার্ম’ স্যাটেলাইটের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করেই তারা এমন ধারণা করছেন। এই স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ভিন্ন ভিন্ন চৌম্বক সিগন্যাল বিশ্লেষণ করে চৌম্বক ক্ষেত্রের শক্তি পরিমাপ করে চলেছে।
২০১৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি সমুদ্রের তলদেশে বেশ কয়েকটি জায়গায় পৃথিবীর চৌম্বক বলরেখা পরিমাপের কাজ শুরু করে। সেই সঙ্গে বেশ কিছু স্যাটেলাইট পৃথিবীর চতুর্দিকে ঘূর্ণায়মান গুচ্ছ নক্ষত্রপুঞ্জের সঙ্গে পৃথিবীর আকর্ষণ-বিকর্ষণ পরিমাপ করে এসব তথ্য জানতে পেরেছে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, গত কয়েক বছরে এ অঞ্চলের ভূ-চৌম্বক ক্ষেত্র প্রায় ৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগুতে থাকবে পৃথিবী নামক এ গ্রহ। মঙ্গলগ্রহের বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড হ্রাস পাওয়ার হিসাব থেকে দেখা যায়—মঙ্গলগ্রহে চৌম্বক ক্ষেত্রের বিলুপ্তির ফলে এর বায়ুমণ্ডল প্রায় সম্পূর্ণ হ্রাস পায়। পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রটি সৌর বায়ুকে অগ্রাহ্য করে। চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবেই সূর্য থেকে নির্গত অতিবেগুনি রশ্মি এবং মহাজাগতিক বিকিরণ থেকে রক্ষা পায় আমাদের এই পৃথিবী। কিন্তু যদি চৌম্বক ক্ষেত্র কোনো দিন বিলুপ্ত হয় তাহলে বিলুপ্ত হবে আমাদের বায়ুমণ্ডলও।
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, পৃথিবী রক্ষাকারী চুম্বক দিনে দিনে দুর্বল হয়ে পড়ছে! বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তারা পশ্চিম গোলার্ধের বেশ কিছু জায়গায় রহস্যময় কিছু গর্তের সন্ধান পেয়েছেন, যেগুলোকে দুর্বল চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রাথমিক ফলাফল হিসেবেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। —ডেইলি মেইল