রাজধানীর দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কলেজের ৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষসহ কয়েকজন শিক্ষক ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যের বিরুদ্ধে। ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছর থেকে শুরু করে চলতি ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে এই টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।
দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত কলেজটিতে বর্তমানের ৭ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী এবং ১৭৪ জন শিক্ষক রয়েছেন। এই বিপুল শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ইচ্ছেমতো টিউশন ফি আদায় ও খরচ করে আসছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। আর্থিক বিধিবিধান অনুযায়ী কলামনার ক্যাশ বইয়ে হিসাব সংরক্ষণ করেনা, কেনাকাটাসহ বিভিন্নখাতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও পিপিআর অনুসরণ করেনি। এছাড়া শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বিধি মোতাবেক না দিয়ে ইচ্ছেমতো দিয়ে আসছে।
বিভিন্ন খাতে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ ও অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ জমা হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সরকারের কয়েকটি দপ্তরে। অভিযোগের একটি কপি দৈনিক শিক্ষা অফিসেও আসে। অনুসন্ধানে জানা যায় বিদায়ী অধ্যক্ষ ও শিক্ষক নেতা মু. শাহাদত হোসাইন রানাসহ তিনজন এই সময়ের মধ্যে অবৈধভাবে বেতন-ভাতা বাবদ ৮৮ লাখ টাকারও বেশি নিয়েছেন। এর মধ্যে অধ্যক্ষ (অবসরপ্রাপ্ত) মু. শাহাদত হোসাইন রানা নিয়েছেন ১৫ লাখ টাকা। উপাধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন নিয়েছেন ৬৪ লাখ টাকা আর সহকারি অধ্যাপক মো: জিল্লুর রহমান নিয়েছেন আট লাখ টাকার বেশি। জানা যায়, শাহাদত হোসাইন রানা গত বছর অবসরে গেছেন।
জানা যায়, এফডিআর করা প্রায় ১০ কোটি টাকার সুদ কোথায় যায় তা কেউ জানে না। সাধারণ তহবিলের ৯ কোটি টাকায়ও রয়েছে হিসেবের গোঁজামিল।
শিক্ষকদের মধ্যে কে কত টাকা আত্মসাৎ করেছন:
প্রভাষক লুৎফুন্নেসা লাকী ৮ লাখ, সেলিনা ইয়াসমিন ১৩ লাখ, ড. মো. রেজাউল করিম ৩৪ লাখ, মো. আবিদ মিয়া ২৪ লাখ, মো. মজিবর রহমান ১১ লাখ, মো. মাসুদুর রহমান ৫ লাখ, খালেদা আক্তার ৬ লাখ, মোসা. ফাহমিদা শারমিন খান ২৩ হাজার, সাগর চন্দ্র দেবনাথ ৬ লাখ।
বিধি বর্হিভূত টাইম স্কেল ও সহকারী অধ্যাপকের স্কেল হিসেবে কে কত বেশি নিয়েছেন:
সহকারী অধ্যাপক নাজিবা আক্তার ৪ লাখ ১৮ হাজার টাকা, জাকিয়া আক্তার ৪ লাখ ২২ হাজার, সাহানা আক্তার ৩ লাখ, খাদেম আশরাফুল আলম ৫ লাখ, মো. মতিউর রহমান চৌধুরী ২ লাখ, সাখাওয়াদ হোসেন ৪ হাজার, প্রভাষক এমদাদুল হক ৪ হাজার, জুয়েলা জেবুন্নেছা খানম ৬ হাজার, মুহাম্মদ ইব্রাহিম মোল্লা ১১ হাজার টাকা, মো. সমীর হোসেন ১১ হাজার, মো. আব্দুল জব্বার ১২ হাজার টাকা, ড. মো. রেজাউল করিম ৮ হাজার ৯৯০ টাকা।
জানা যায়, ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে করা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে দনিয়া কলেজের কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারীকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়া এবং তাদের কাছ থেকে বেতন-ভাতার টাকা আদায় করার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু আজও তা করা হয়নি বলে দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায়।
অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীরা হলেন: সহকারী অধ্যাপক মতিউর রহমান, মো. শাহাবুদ্দিন আহমেদ, শিল্পী রায়, প্রভাষক শিকদার মো. জিন নুরাইন, শাখাওয়াত হোসেন, এ এস এরশাদুল আলম, মো. নুরুল ইসলাম, মো. এমদাদুল হক, মো. আব্দুল জব্বার ও গ্রন্থাগারিক মো. অহিদুজ্জামান এবং অতিরিক্ত কর্মচারী মো. কামরুজ্জামান।
লুটপাটের বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদের কেউ কথা বলতে চাননি। দৈনিক শিক্ষার প্রশ্নের জবাবে কয়েকজন শিক্ষক বলেছেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদেরকে টাকা দিয়েছেন। বৈধ নাকি অবৈধ তা তারা জানেননা।