দশ হাজারের বেশি ভবন জরাজীর্ণ - Dainikshiksha

প্রাথমিক বিদ্যালয়দশ হাজারের বেশি ভবন জরাজীর্ণ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

জরাজীর্ণ ভবনগুলোর ছাদ ও দেয়াল থেকে খসে পড়ে পলেস্তারা। বেরিয়ে থাকে ছাদ ও বিমে মরিচা ধরা রড। সামান্য বৃষ্টিতেই ভবনের ছাদ থেকে চুইয়ে পানি পড়ে কক্ষে। দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে ফাটল। জানালার রড ভেঙে গেছে অনেক আগেই। আবার জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বাধ্য হয়ে কখনো খোলা মাঠে, কখনো গাছ তলায় ক্লাস নিতে হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের। সোমবার (৮ এপ্রিল) দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন নিজামুল হক। 

এমন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুরবস্থার চিত্র প্রায় প্রতিটি উপজেলাতেই রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, উপজেলা শিক্ষা অফিস ও আঞ্চলিক কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী এ সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি।

জরাজীর্ণ থাকার পরও এগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয় না এমন দাবি করেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্তারা। আবার থানা শিক্ষা অফিসাররা জানিয়েছেন, তথ্য পাঠানো হলেও এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিলম্ব হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিষয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও উদাসীন। বিদ্যালয়ের কোনো বিষয়ে তাদের অবহিত করা হয় না, আবার জনপ্রতিনিধিরাও নিজ আগ্রহে স্কুলের ভালোমন্দ জানতে চান না। আর ভবন নির্মাণ ও তদারকি নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং এলজিইডির মধ্যে রয়েছে সমন্বয়হীনতা। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, প্রতিটি উপজেলায় ২০ থেকে ৪০ বিদ্যালয় জরাজীর্ণ। ৪৯৩ উপজেলায় এ সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি হবে। এ সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। সংস্কারের মাধ্যমে সাময়িক সমস্যার সমাধান হয়। কিন্তু ওই ভবন কয়েকবছর পর আবার জরাজীর্ণের তালিকায় ওঠে। জরাজীর্ণ ভবনে পাঠদান ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রণালয় জরাজীর্ণ ও ভবন না থাকা ১৪ হাজার ৮৬৭টি স্কুল চিহ্নিত করে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে। এ ভবনগুলোর নির্মাণ কাজ চলছে। এর মধ্যে নতুন জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬ হাজার ৭১৭টি এবং পুরাতন সরকারি বিদ্যালয় ৮ হাজার ১৫০টি । এছাড়া সংস্কারের জন্য প্রতিবছর ৫ হাজার স্কুল চিহ্নিত করে বরাদ্দ দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫৬৩৭ টি এবং চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫৬০৮টি ভবনের সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।

গত শনিবার বরগুনার তালতলীতে ৫নং ছোটবগী পিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের ছাদের বিম ধসে পড়ে মানসুরা নামে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী নিহত হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছে আরো অন্তত ৯ জন। ২০০২ সালে এলজিইডি বিদ্যালয়ভবনটি নির্মাণ করে। এত অল্প সময়ে ভবনের পলেস্তারা ধসে পড়ায় ভবনের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে, প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের মনিটরিং ব্যবস্থা নিয়েও।

দেশে এখন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬৫ হাজার ৫৯৩টি রয়েছে। ১৯৭৩ সালে ৩৬ হাজার ১৬৫ প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই স্কুলগুলোতে বিভিন্ন সময় ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব স্কুলের ভবন জরাজীর্ণের পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণও বেশি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালে ২৬ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেন। এসবের বেশির ভাগেই ভবন নেই। যে ভবন আছে তার বড় একটি অংশ জরাজীর্ণ। অবশিষ্ট বিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশই টিনশেড বা সেমিপাকা ভবনে স্থাপিত। এসব বিদ্যালয়ে রয়েছে শ্রেণিকক্ষ সংকটসহ জরাজীর্ণ ভবন, শৌচাগার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটও।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, দেশের কোনো এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা কেমন তার তথ্য সংগ্রহ করেছি। কাজ চলছে। অতিদ্রুত এ তথ্য ডাটাবেজে যুক্ত করা হচ্ছে। এ চিত্র দেখেই স্কুল ভবনগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হবে।

যে কারণে জরাজীর্ণ ভবনে ক্লাস : প্রাথমিক স্কুলের ভবন মানের তদারকির জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। এই কমিটিতে উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাও সদস্য হিসেবে রয়েছেন। কোনো তথ্য ভবনে সমস্যা দেখা দিলে প্রধান শিক্ষক সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্যদের অবহিত করেন। উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ/জরাজীর্ণ মনে করলেই ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ/জরাজীর্ণ হবে।

ঢাকার অদূরের একটি উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষক ভবনসংক্রান্ত তথ্য থানা শিক্ষা অফিসারকে অবহিত করেন। কিন্তু যখন কোনো প্রকৌশলীকে পরিদর্শনের জন্য পাঠানো হয়, তিনি চোখে দেখেই ভবনকে জরাজীর্ণ/ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা দেন। এ কাজে কোনো যন্ত্র বা মাপকাঠি ব্যবহার করেন না। এই শিক্ষা কর্মকর্তা আরো বলেন, ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ/জরাজীর্ণ ঘোষণা দেয়া হলে শিক্ষার্থী/অভিভাবক এখানে ক্লাস করতে রাজি হবেন না। দ্রুত ভবনও নির্মান করা সম্ভব নয়। ফলে খোলা আকাশের নিচে পড়াশোনা হবে। সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে। তাই নতুন ভবন না পাওয়া পর্যন্ত জরাজীর্ণ ভবনেই ক্লাস চলে।

এলজিইডির নিম্নমানের কাজে বিরক্ত অধিদপ্তর : প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব কোনো প্রকৌশল শাখা নেই। এ কারণে প্রাথমিক স্কুলে ভবন নির্মাণ করে এলজিইডি। ভবন নির্মানের পর এগুলো তদারকিও করার কথা। সংশ্লিষ্টদের মতে, এক শ্রেণীর ঠিকাদারদের কারণে প্রাথমিক স্কুলের ভবনগুলো হচ্ছে নিম্নমানের। নির্মানের মান ও তদারকির কারণেও এসব ভবন জরাজীর্ণের তালিকায় স্থান পাচ্ছে। সরকারের কোটি কোটি টাকা দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে ভবন। অথচ নিম্নমানের কাজ করে পকেটে পুরেছে অসত্ ঠিকাদাররা। আর এর ফলে ভুগতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। পলেস্তারা পড়ে বিভিন্ন সময়ে শিশুরা আহত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, আর যাদের এই ভবনগুলো তদারকি করার কথা তারা তা করেননি। নিম্নমানের কাজ করেও অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ভালো কাজের সনদ দিয়েছেন। এলজিইডির যে ভূমিকা থাকার কথা ছিল, তারা তা করেননি।

পৃথক প্রকৌশল শাখা চায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় : প্রাথমিকের বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের অর্থ দেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। আর ভবন নির্মাণ ও তদারকি করে এলজিইডি। দুই মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ হওয়ার করণে কাজে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব প্রকৌশল অধিদপ্তর থাকলেও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব এমন অধিদপ্তর নেই। অধিদপ্তরের নিজস্ব প্রকৌশল বিভাগ থাকলেও এলজিইডির কাছে যেতে হতো না। ৬৫ হাজার বিদ্যালয়ের এক লাখের বেশি ভবন নির্মাণ ও তদারকির জন্য পৃথক প্রকৌশল শাখা জরুরি বলে মনে করে এই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035898685455322