পটুয়াখালীর দশমিনায় বেগম আরেফাতুন্নেছা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। দফায় দফায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ বদলানো ও প্রার্থীদের মামলায় নাজেহাল ম্যানেজিং কমিটি অবশেষে ৩০ জুলাই সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিলে ঘুষ বাণিজ্যের এ অভিযোগ তুলেন প্রার্থীরা। গত ৩ আগস্ট এ নিয়োগ বাতিল চেয়ে দশমিনা সহকারী মোকাম জজ আদালতে ফের একটি মামলা দায়ের করেন বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক পদপ্রার্থী মো. জসিম উদ্দিন।
জানা যায়, ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠার পর বেশ কয়েকবার ফলাফলের দিক থেকে উপজেলায় শীর্ষ অবস্থানে ছিল প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম অবসরে গেলে নতুন প্রধান ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয়টি নিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন প্রভাবশালী মহল ও সংশ্লিষ্টরা মেতে ওঠেন নোংরা রাজনীতিতে। নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলে শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি বিভক্ত হয় কয়েকটি ভাগে। এতে করে শিক্ষার মান কমে গিয়ে বর্তমানে ফলাফলের দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রথম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক ওই পদের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু অদৃশ্য কোনো এক কারণে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন না করে দ্বিতীয় দফায় আবার শুধু প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য পুনঃনিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। দ্বিতীয় দফার বিজ্ঞপ্তির পর গত বছরের ৮ আগস্ট নিয়োগ পরীক্ষার জন্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু নিয়োগ পরীক্ষার আগেই মো. জহিরুল আলম নামে এক প্রধান শিক্ষক পদপ্রার্থীর মামলার কারণে কার্যক্রম পণ্ড হয়ে যায়।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তৃতীয় দফায় শুধু সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্টরা। ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা। পরে উপজেলার খারিজাবেতাগী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. লুৎফর রহমানকে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়।
এ ঘটনায় বেগম আরেফাতুন্নেছা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক পদপ্রার্থী মো. জসিম উদ্দিন ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে নিয়োগে অর্থ বাণিজ্য ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. লুৎফর রহমানের নিয়োগ বাতিল চেয়ে চলতি মাসের ৩ তারিখ দশমিনা সহকারী মোকাম জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক পদপ্রার্থী ও দশমিনা উপজেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হেলাল উদ্দিন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, তিনি ও মো. খলিলুর রহমান শনিবার পর্যন্ত নিয়োগ পরীক্ষার কোনো প্রবেশপত্র (তৃতীয় দফার নিয়োগ পরীক্ষার) হাতে পাননি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি ঘুষ বাণিজ্য, চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করে নিয়োগ প্রদান করেছেন। ঘুষ বাণিজ্যে আমরা বাধা হতে পারি মনে করায় আমাদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেয়নি ম্যানেজিং কমিটি। শুধু তাই নয়। সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে আমিসহ আমাদের প্রতিষ্ঠানের আরও বিভিন্ন শিক্ষকের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ম্যানেজিং কমিটি।
এ বিষয় নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. লুৎফর রহমানের বক্তব্য নেয়ার জন্য তার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নিলুফার রাউফ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ঘুষ বাণিজ্য ও অনিয়মের অভিযোগ সত্য নয়। সঠিক নিয়ম মেনেই সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয় পটুয়াখালী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।