দাবি আদায়ে পিছিয়ে ইডেনের শিক্ষার্থীরা - দৈনিকশিক্ষা

কলেজে জাগুক প্রাণদাবি আদায়ে পিছিয়ে ইডেনের শিক্ষার্থীরা

সাজিদা ইসলাম পারুল |

প্রায় তিন দশক পর দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসু নির্বাচনের তোড়জোড়। এ হাওয়া লেগেছে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও। ঐতিহ্যবাহী এবং নামি কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরাও এখন নির্বাচনের দাবিতে সরব। তারা চান, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সব স্থবিরতা কাটিয়ে ক্যাম্পাসে জাগবে প্রাণ

প্রসঙ্গত, আশির দশক ও নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ছাত্রশিবিরের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ছিল ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রমৈত্রীসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন। পরবর্তী সময়ে ছাত্রশিবিরের অব্যাহত সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে তাদের মধ্যে ঐক্য গড়ে ওঠে। ওই সময় শিবিরের হাতে এককভাবে ছাত্রদলের নেতাকর্মী বেশি খুন হয়েছেন।

আবার একইভাবে আট বছরব্যাপী আন্দোলনে স্বৈরাচার এরশাদের হাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই বেশি জীবন দিয়েছেন। ১৯৮৮ সালের ২৪ মার্চ চট্টগ্রামে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিছিলে গুলি চালিয়ে একদিনে ২৪ জনকে হত্যা করা হয়েছিল। সে সময় ছাত্র সংগঠনগুলো আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ১৯৯০ সালের ১০ অক্টোবর ইসলামী ছাত্রশিবির ছাড়া আন্দোলনকারী সবক'টি ছাত্র সংগঠন মিলে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য গড়ে তোলার পরই এরশাদবিরোধী আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়।

সাবেক ছাত্রনেতাদের মতে, ক্যাম্পাসে গণতন্ত্রচর্চার সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করতে হলে ডাকসুসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদের নির্বাচন দেওয়া জরুরি। কারণ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাজনীতিবিদ, নেতা তৈরি হয়। অনির্দিষ্টকালের জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ না থাকলে এই দীর্ঘ বছরে অনেক নেতা তৈরি হতো। 

তবে ইডেন মহিলা কলেজ শাখার আহ্বায়ক তাছলিমা আক্তার আশা প্রকাশ করে বলেন, 'আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুনভাবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন শুরু হবে। সেই প্রক্রিয়ার কথা শুনছি। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে ছাত্র সংসদ নির্বাচন জরুরি।'

বর্তমান ছাত্ররাজনীতি নিয়ে ইডেন মহিলা কলেজের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি ও বর্তমান বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের যুগ্ম সম্পাদক জেদ্দা পারভীন খান রিমি বলেন, 'বর্তমানে ছাত্ররাজনীতি আর আগের মতো নেই। আমরা সে সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরতাম। তা সমাধানে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতাম। মূলত ছাত্ররাজনীতি থেকেই রাজনীতিবিদ তৈরি হয়।'

ছাত্ররাজনীতির শুরুর দিকের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'আমাদের ছাত্ররাজনীতির সময়কালকে বলা হয় স্বর্ণযুগ। ছাত্ররাজনীতি বলতে যা বোঝায়, তার প্রকৃত স্বাদ উপভোগ করেছি আমরা। সে সময় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে রাজনীতি ছিল। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন আশি ও নব্বই দশকের ছাত্ররাজনীতিও টিকে থাকবে।

ইডেন মহিলা কলেজের সর্বশেষ ভিপি ছিলেন হেলেন জেরিন খান। সাবেক এই ছাত্রনেত্রী জানান, ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন তিনি। নব্বইয়ের দশকে তৎকালীন স্বৈরশাসক এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ছাত্ররাজনীতির অংশ হিসেবে তিনিও সম্পৃক্ত ছিলেন। দীর্ঘ ছাত্ররাজনীতির পরেই জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। 

এদিকে, ছাত্র সংসদ না থাকায় প্রশাসন শিক্ষার্থী-সংশ্নিষ্ট সব বিষয়ে নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নেয় বলে অভিযোগ করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ইডেন কলেজ শাখার সভাপতি নবীনা আখতার। তিনি বলেন, 'কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন বোধ করে না। তাই ছাত্র সংসদের কোনো বিকল্প নেই।' দীর্ঘদিন ধরে ইডেনে নির্বাচন না হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'শাসকগোষ্ঠী কখনও চায় না নির্বাচন হোক। কারণ এতে শিক্ষার্থীদের কথা বলার জায়গা তৈরি হয়। প্রশাসন একমুখী সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।' নির্বাচনের জন্য ক্যাম্পাসে সব ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি। 

রাজনৈতিক বিশ্নেষকদের মতে, প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর মধ্যে রাজনীতির বীজ বপন হয় ছাত্ররাজনীতির মধ্য দিয়ে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় রাজনীতিবিদ তৈরি থেকে বিরত রাখা হচ্ছে যোগ্য ছাত্রনেতাদের। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আগামীতে দেশ গড়ার জন্য যোগ্য নেতৃত্ব গঠন করতে ছাত্র সংসদের বিকল্প নেই। অথচ নব্বইয়ের কিংবা তার আগের ছাত্র আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাদের বেশিরভাগই ছিলেন বিভিন্ন ছাত্র সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধি। সামরিক স্বৈরাচারের আমলে ডাকসুসহ দেশের ছাত্র সংগঠনগুলোর নির্বাচন হলেও নব্বই-পরবর্তী গণতান্ত্রিক আমলে সেই পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গত ২৮ বছরে কোথাও কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়নি। 

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে নব্বইয়ের স্বৈরশাসকবিরোধী আন্দোলনে অবদান রাখা ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ রয়েছে ২৮ বছর। অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্র সংসদ নির্বাচন হচ্ছে না। অথচ ষাট ও আশির দশকের আন্দোলনে মূল ভূমিকা ছিল ইডেন কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের। ওই সময় ছাত্র সংগঠনগুলো যখনই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, আন্দোলন গতি পেয়েছে।

একক কোনো সংগঠন চেষ্টা করেও আন্দোলনে ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারেনি। দীর্ঘ বছর এই নির্বাচন না হওয়ায় অধিকার আদায়ে পিছিয়ে রয়েছে শিক্ষার্থীরা। রাতের আঁধারেই ছাত্র সংগঠনের নেতাদের মত উপেক্ষা করে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন আইন প্রণয়ন এবং তা প্রয়োগ করছে। যেসব আইন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীদের অধিকারবিরোধী। 

সূত্র: সমকাল

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050251483917236