দারুল ইহসানের সনদের বৈধতার সিদ্ধান্ত হয়নি - দৈনিকশিক্ষা

দারুল ইহসানের সনদের বৈধতার সিদ্ধান্ত হয়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সনদ বিক্রি ও বিদেশী অর্থায়নসহ বিভিন্ন অভিযোগে আদালতের রায়ে বন্ধ হওয়া দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদের বৈধতা প্রশ্নে অনুষ্ঠিত সভা কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে। সভায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান ও উপ-পরিচালক মো: মোস্তফা কামাল গংরা চেষ্টা করেছিলেন ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিলের আগে দারুল ইহসান থেকে নেয়া সব সনদের বৈধতার পক্ষে সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়ার কিন্তু উচ্চমহলের সজাগ দৃষ্টি থাকায় তা ব্যর্থ হয়েছে।

দারুল ইহসানের ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিলের আগে নেয়া সব সনদের বৈধতা প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নেয়ার অভিপ্রায়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে  আজ সোমবার (১১ ডিসেম্বর)  এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র দৈনিকশিক্ষাকে জানান, আজকের বৈঠকের যাবতীয় আলোচনা ও মতামত লিখিত আকারে মন্ত্রী ও সচিবের কাছে উপস্থাপন করা হবে। তাঁরাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।

বৈঠকে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও উপ-পরিচালক এই মর্মে যুক্তি দেন যে, আদালতের রায় যেদিন প্রকাশ হয়েছে সেইদিনের আগের সনদের বৈধতা দেয়া যুক্তিসঙ্গত।

অপরদিকে বৈঠকে উপস্থিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপ-পরিচালক জেসমিন পারভীন বলেছেন, আদালতের রায়ের যাতে কোনো ভুল ব্যাখ্যা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দারুণ ইহসানের সব পক্ষের সনদের আনুষ্ঠানিক বৈধতা দেয়ার আগেই কিছু সনদের স্কীকৃতি দেয়া হয়েছে। খোদ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশি’র এক শ্রেণীর কর্মকর্তা এই অপকর্ম করে যাচ্ছেন।

গত নভেম্বর মাসে মাউশি অধিদপ্তরে মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এম এম ওয়াহিদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক পত্রে মাদারীপুর জেলার কালকিনী উপজেলার মোল্লার হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক সিরাজুল হককে এমপিওভূক্তির জন্য মন্ত্রনালয়ের কাছে নির্দেশনা চেয়েছেন। অথচ সিরাজুল হকের বিএড সনদও দারুল ইহসান থেকে পাওয়া।

মন্ত্রণালয় ও মাউশি অধিদপ্তরের এমপিও শাখার কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, আসলে বৈধতার জন্য একটি গ্রুপ উঠে পরে লেগেছেন। যে তারিখেরই বৈধতা দেয়া হোক না কেন। বৈধতার ঘোষণা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার অবৈধ সনদধারী তারিখ পরিবর্তন করে সনদ নিয়ে সরকারি সুবিধা দাবি করবেন। বৈধধা দিলে দের বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া সারাদেশের ভূইফোর দোকানগুলো আবার সার্টিফিকে বানিজ্য শুরু করতে পারবে। এটাই মূল লক্ষ্য।

এদিকে রাজধানীর ধানমন্ডির ৯/এ সড়কের ২১ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত ‘দারুল ইহসান ট্রাস্ট’র সচিব মাহবুব উল আলম তাদের ক্যাম্পাস থেকে প্রদান করা সব সনদের বৈধতা চেয়ে প্রজ্ঞাপন জারির জন্য গত ২৭ সেপ্টেম্বর আবেদন করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। এতে তিনি প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত পাসকৃত শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেটের (সনদ) বৈধতা প্রদানের দাবি জানান।

সোমবারের বৈঠকে আদালতের রায়ে বন্ধ হওয়া প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট বৈধ কারার হঠাৎ উদ্যোগ নেয়ার কারন কি? উপ-পরিচালক মো: মোস্তফা কামাল বলছেন, হ্যা আদালতের একটা আদেশ আছে। আলোচনা হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব সালমা জাহানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
কিন্তু মাউশি অধিদপ্তরের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, আদালতের রায় যেভাবে আছে সেভাবে আমরা বলেছি। আলোচনা পর্যায়ে আছে। এর বেশিকিছু তিনি বলতে রাজী হননি। যুগ্ম সচিব সালমা জাহানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।

তবে মাউশি অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান আদালতের রায়ের বাইরে বা পাশ কাটিয়ে কোন পদক্ষেপের বিপক্ষে। তিনি বলেন, আমি বৈঠকে পুরো সময় থাকতে পারিনি। তবে দারুল আহসান নিয়ে আদালতের রায় আছে। সেখানে বিকল্প কিছু ভাবার সুযোগ নেই।

জোনা গেছে, দারুলের পাঁচটি গ্রুপের মধ্যে ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি দারুল ইহসানের তিনটি পক্ষের ১০৪টি ক্যাম্পাসকে অবৈধ ঘোষণা করে এগুলো বন্ধ করতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের চিঠি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অথচ এর আগে ৩৬ জেলার ১৩৫টি অবৈধ ক্যাম্পাস গুঁড়িয়ে দিতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।

‘দারুল ইহসান ট্রাস্ট’র সচিব মাহবুব উল আলম চিঠিতে আরও বলেন, ‘দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের ধানমন্ডির আবাসিক এলাকার ৯/এ সড়কের ২১ নং বাড়ির ক্যাম্পাসটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক অনুমোদনপ্রাপ্ত এবং এই বিশ্ববিদ্যালয় হতে পাসকৃত শিক্ষার্থীরা ১৯৯৭, ২০০২ ও ২০০৩ সালে সমাবর্তনের মাধ্যমে মূল সার্টিফিকেট গ্রহণ করে সরকারি/বেসরকারি বহু প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত অবস্থায় আছে।’ অন্য পক্ষ এভাবে নিজেদের বৈধ দাবি করে বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন।

মাউশি অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, সারাদেশে মোট ৩২ হাজার নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসায় একটি করে লাইব্রেরিয়ানের পদ রয়েছে। এসব পদে প্রায় ১৩ হাজার নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিই দারুল ইহসানের সনদধারী। আবার দারুলের সনদ নিয়ে বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাও রয়েছেন। তাই মাউশি অধিদপ্তরেরই একটি সিন্ডিকেট এই কর্মকর্তা ও লাইব্রেরিয়ানদের সঙ্গে আর্থিক সমঝোতার ভিত্তিতে সনদের বৈধতা দিতে চেষ্টা করছেন।  সিন্ডিকেটে অধিদপ্তরের ড্রাইভার সমিতির নেতা আলাউদ্দিন, উচ্চমান সহকারি মাহবুব হোসেন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী সমিতির দুজন নেতাও রয়েছেন।

১৯৮৯ সালে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৩ সালের ১৯ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটি সরকারের অনুমোদন পায়। এরপর সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট-১৯৬০ অধীনে প্রতিষ্ঠানটিকে রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেয়া হয়। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিদের মধ্যে দুটি গ্রুপ সৃষ্টি হয়। তাদের মধ্যে শুরু হয় নানা ধরনের বিবাদ। এ সুযোগে অন্য আরও দু/তিনটি অংশের আত্মপ্রকাশ ঘটে। তারা নিজেদের পছন্দমতো উপাচার্য বসিয়ে সনদ বাণিজ্যে লিপ্ত হয়। বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে তারা নিজেদের বৈধ দাবি করে অন্য ট্রাস্টিদের বিরুদ্ধে অবৈধ ক্যাম্পাস ও সনদ বাণিজ্যের অভিযোগ করতে থাকেন। একপক্ষ অন্য গ্রুপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসিকে আহ্বান জানান।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031428337097168