দুর্নীতির অভিযোগে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসময় শিক্ষাবোর্ডে ছয় কর্মকর্তাকে ঘুষের টাকাসহ আটক করে। সোমবার (২ ডিসেম্বর) অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এসময় দুদকের পক্ষ থেকে ওই ছয় কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। সন্ধ্যায় বিষয়টি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে নিশ্চিত করেছেন দুদক রাজশাহীর উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম।
আটককৃত করা হলেন, শিক্ষাবোর্ডের পত্র প্রাপ্তি শাখার অফিস সহকারী মুরাদ আলী, স্ক্রীপ্ট শাখার দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কর্মচারী রুবেল খান ও মাধ্যমিক সনদ শাখার আসলাম হোসেন ওরফে চৌধুরীকে হাতেনাতে প্রার্থীদের আবেদন ফরম ও ঘুষসহ আটক করা হয়। পরে সংশ্লিষ্ট শাখায় নিয়ে যাওয়া হলে শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ইসমাইল হোসেন, পত্র প্রাপ্তি শাখার শহিদুল ইসলাম ও সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আহসান আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতের কথা স্বীকার করেন তারা।
রাজশাহী দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ছাত্র-ছাত্রীদের সনদপত্র উত্তোলন, নাম সংশোধন, ফলাফল সংশোধন, ভর্তি বাতিল, এক কলেজে ভর্তি বাতিল করে নতুন কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পাদনে সরকার নির্ধারিত ফি-এর অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়। এছাড়া বিদ্যালয় মঞ্জুরী নবায়ন, বিদ্যালয়ে নতুন বিভাগ খোলা, মহাবিদ্যালয়ের এডহক কমিটি, কার্যনির্বাহী কমিটি, অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি ও মহাবিদ্যালয়ের ছাড়পত্র প্রদান ইত্যাদি কাজে উৎকোচ গ্রহণ ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগে একজন ভুক্তভোগী দুদককে হটলাইন ১০৬ নম্বরে জানায়।
এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে আজ সকালে দুদক টিম গোপনে অভিযানকালে সেবা প্রত্যাশীদের থেকে নাম সংশোধন, সনদপত্র উত্তোলন ও সনদপত্র ইংরেজী ভার্সন রূপান্তরের নামে শিক্ষা বোর্ডের কর্মচারীরা নির্ধারিত ফি-এর অতিরিক্ত ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা গ্রহণ করছেন। আবেদন ফরম গ্রহণ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেবা প্রদানের নিশ্চয়তা দিচ্ছে।
এছাড়া কাউন্টারের মাধ্যমে আবেদনপত্র নেয়ার নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ আবেদন ফরম বিভিন্ন কর্মচারীর মাধ্যমে সরাসরি নিয়ে বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ ঘুষের বিনিময়ে কাজ করে দিচ্ছে। ঘুষের টাকার ভাগ তাৎক্ষণিকভাবে বিভিন্ন শাখার স্টাফদের দিচ্ছে মর্মে দেখা যায়। উক্ত চিত্র প্রায় সব শাখায় দেখা যায়।
সেবা প্রত্যাশীগণ এসএমএস-এর মাধ্যমে ডেলিভারী কাউন্টার হতে সংশ্লিষ্ট সেবা পাওয়ার কথা থাকলেও সেটি তারা পাচ্ছেনা। প্রার্থীগণ বাড়তি টাকা দিয়ে সংশ্লিষ্ট শাখায় যোগাযোগ করলে সেবা প্রদান করা হয়। সংশ্লিষ্ট রেজিস্টার পর্যালোচনা করে এর সত্যতা পায় দুদক।
পরে ৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উৎকোচ গ্রহণের বিষয়ে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সচিব ড. মোয়াজ্জেম হোসেনের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় দুদকের পক্ষ দায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য বরা হয়।
এসময় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সচিব ড. মোয়াজ্জেম হোসেন, ওই ছয়জন দায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট শাখাকে নির্দেশ দেন। এছাড়া তিনি দুদকের অভিযানের প্রেক্ষিতে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে আগামীকাল (০৩ ডিসেম্বর) একটি সভা আহŸানপূর্বক অনিয়ম চিহ্নিত করে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। অভিযান পরিচালনাকারী দুদক শিক্ষাবোর্ডে ওয়ান-স্টপ সার্ভিস চালুকরণ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আইডি কার্ড ঝুলানো, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও বহিরাগত দালাল চিহ্নিত করে তাদের বোর্ডে প্রবেশে নিষিদ্ধকরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাৎক্ষণিক নির্দেশনা প্রদান করেন।
দুদক রাজশাহীর উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে সত্যতা মেলে। এসময় ছয়জনকে আটক করা হয়। পরে শিক্ষাবোর্ডে সচিবকে বিষয়টি জানানো হয়। তিনি (সচিব) বিভাগীয় ব্যবস্থাগ্রহণের কথা জানায় দুদককে। এছাড়া ওই ছয় কর্মীর বিরুদ্ধে দুদক কমিশনে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’