দুদকের এই বাছিরই ঘুষ দিয়ে স্ত্রীকে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ বানাতে চেয়েছিলেন - দৈনিকশিক্ষা

দুদকের এই বাছিরই ঘুষ দিয়ে স্ত্রীকে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ বানাতে চেয়েছিলেন

নিজস্ব প্রতিবেদক |

৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া দুদকের উপপরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরেই তাঁর স্ত্রীকে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ বানাতে চেয়েছিলেন। এর জন্য মোট চারজনকে ৩০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন। এনামুল বাছিরের স্ত্রী মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুমানা শাহীন শেফা। ৩০ নম্বরের নিয়োগ পরীক্ষায় সাড়ে তিন পেলেও ভিকারুননিসার পরিচালনা কমিটির কতিপয় সদস্য ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কলেজ শাখার পরিচালক অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবিরের যোগসাজশে অধ্যক্ষ বানাতে চাওয়ার অভিযোগ ওঠে। দৈনিক শিক্ষাসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে ওই নিয়োগ স্থগিত হয়ে যায়। তদন্ত কমিটিও হয়। তদন্ত প্রতিবেদন এখনও আলোর মুখ দেখেনি। খন্দকার এনামুল বাছিরকে বিতর্কিত ডিআইজি মিজানুর ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন মর্মে অভিযোগ ওঠে। গত রোববার বেসরকারি টিভি এটিএন নিউজের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। এর প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন হয়। সোমবার (১০ জুন) বাছিরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। 

সূত্র জানায়, বাছিরের স্ত্রীকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডি একটি নিয়োগ কমিটি গঠন করে। কমিটিতে গভর্নিং বডির সদস্য আতাউর রহমান, মাউশির পরিচালক (কলেজ) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেরদৌস আরাও ছিলেন। ২৭ এপ্রিল সকালে লিখিত পরীক্ষা আয়োজন করা হয়। নিয়োগ পরীক্ষায় মোট ১৫ জন প্রার্থীর অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও ১৩ জন উপস্থিত ছিলেন। মোট ১০ জন প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুমানা শাহীন শেফাকে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়, যিনি লিখিত পরীক্ষায় মাত্র সাড়ে ৩ নম্বর পেয়েছেন। তবে মৌখিক পরীক্ষায় ও একাডেমিক পারফরমেন্সের মাধ্যমে তাকে পরীক্ষায় প্রথম করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

সূত্র জানায়, পরীক্ষার দিন বিকালে গভর্নিং বডির বৈঠকে সদস্য অ্যাডভোকেট ইউনূস আলী আকন্দ সব প্রার্থীর পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বর জানতে চান। ওই সদস্য জানান, লিখিত পরীক্ষায় কে কত নম্বর পেয়েছে আমি জানতে চাই। কে কত নম্বর পেয়েছে তা গভর্নিং বডির অন্য সদস্যদের জানাতে গড়িমসি করা হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা পর কে কত নম্বর পেয়েছে তা জানানো হয়। দেখা গেছে, সবাই ফেল করেছে। এই সদস্য বলেন, সবাই যেহেতু পরীক্ষায় ফেল করেছে এ কারণে আমাকে খাতা ও নম্বর দেখাতে চাইছিল না।

জানা যায়, লিখিত পরীক্ষায় ফেল করলেও মৌখিক পরীক্ষায় ও একাডেমিক পারফরমেন্স মিলিয়ে রুমানা শাহীন শেফাকে ১৯ নম্বর দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে থাকা প্রার্থীরা যথাক্রমে সাড়ে ১৮ ও ১৮ নম্বর পেয়েছেন। আর প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন অধ্যক্ষ হাসিনা বেগম পেয়েছেন ১৭।

জানা যায়, অবৈধভাবে অধ্যক্ষ নিয়োগে বিতর্কিত পরিচালনা কমিটির এজেন্ডা বাস্তবায়নে জড়িত মো. শাহেদুল খবিরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবকরা। সব অনিয়ম দূর ও শাহেদুলের শাস্তি দাবিতে তারা প্রধানমন্ত্রীরও হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। ২ মে দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

অভিভাবকদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ.কে.এম খোরশেদ আলম বলেন, ভিকারুননিসায় যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক কর্মরত থাকলেও গভর্নিং বডির কতিপয় সদস্য আর্থিকভাবে লাভবান হতে না পেরে গত ৮ বছরেও অধ্যক্ষ নিয়োগ দেননি। তবে, মেয়াদের শেষ দিকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কমিটি। এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষককে নিয়োগ দেয়ার দাবি ছিল অভিভাবকদের। কিন্তু নিয়োগ কমিটি তাদের পছন্দের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজির সহকারী অধ্যাপক রুমানা শাহীন শেফাকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অধ্যক্ষ নিয়োগের পাঁয়তারা করে। বিষয়টি অভিভাবকরা জানতে পেরে গত ২৫ এপ্রিল অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধের জন্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু মহাপরিচালক এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ২৬ এপ্রিল পরিচালক শাহেদুল খবির চৌধুরীকে ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে পাঠান। নিয়োগ কমিটি তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য উত্তরপত্রে ৩০ নম্বরের ১০টি প্রশ্নের মধ্যে ৭টি প্রশ্ন ইংরেজি ভাষায় উত্তর দেয়ার জন্য এবং ৩টি বাংলা ভাষায় উত্তর দেয়ার জন্য নির্ধারণ করেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভিকারুননিসায় পছন্দের ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ১০টির মধ্যে ৭টি প্রশ্ন করা হয়েছে ইংরেজিতে। তবুও তাকে লিখিত পরীক্ষায় পাস করানো যায়নি। ইংরেজিতে প্রশ্ন করার পরও ইংরেজির শিক্ষক যখন পরীক্ষায় ফেল করেন, তখন তার যোগ্যতা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে।

নিয়োগ কমিটিতে থাকা মাউশির প্রতিনিধি শাহেদুল খবির চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, কে কত নম্বর পেয়েছে তা মনে নেই। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় পৃথক পাসের প্রয়োজন নেই বলে তিনি মত দেন। তবে পরিচালকের এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন মাউশি অধিদপ্তরের অন্তত ২০ জন কর্মকতা; যারা বিভিন্ন সময় নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মাউশির প্রতিনিধি হিসাবে অংশ নিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষকদের নিয়োগ সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলন ও টকশোতে কটূক্তি করেন বিলুপ্ত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির মহাসচিব  মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী গং। অথচ প্রতিটি নিয়োগ বোর্ডে ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে থাকেন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারাই। ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ নিয়োগে শাহেদুল খবিরের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। 

 

আরও পড়ুন: 

সাড়ে তিন পেয়ে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ হচ্ছেন রুমানা শাহীন

শাহেদুল খবিরের শাস্তি দাবি ভিকারুননিসার অভিভাবকদের

শাহেদুল খবিরকে স্বপদে বহাল রেখে তদন্তের বিরোধিতা ভিকারুননিসার শিক্ষকদের

ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ নিয়োগ স্থগিত

 

 

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.008577823638916