ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে গত অক্টোবরে তিন মাসের সময় বেঁধে দিয়েছিল সরকার। ডিসেম্বরে আলটিমেটাম শেষ হলেও খোদ রাজধানীর দেড় হাজার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ৬টি নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। ঢাকা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলো নিবন্ধনের ফরমে ২০টি বিষয় জানতে চাওয়া হয়। প্রতিষ্ঠান কার মাধ্যমে চলে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত, শ্রেণিসংখ্যা, স্থায়ী ভবন নাকি ভাড়া ভবন, স্কুলের ধরন, বিদ্যালয়ের গঠনতন্ত্র, উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠাতার নাম, প্রতিমাসে বা বছরে শ্রেণিভেদে আদায়কৃত টিউশন ফি, ভর্তি ফি, খেলাধুলা ফি, গ্রন্থাগার ফি, টিফিন ফি, মুদ্রন ফি এবং অন্যান্য ফি কত, ভূমি এবং ভবনসহ বর্তমান যাবতীয় সম্পদের বিবরণ, শ্রেণিভেদে পাঠ্যপুস্তক হিসেবে নির্ধারিত সকল পুস্তকের বিবরণ, সংরক্ষিত ও সাধারণ তহবিলে জমাকৃত অর্থের বিস্তারিত বিবরণ (ব্যাংক হিসাব নম্বরসহ), প্রদত্ত সাময়িক নিবন্ধন ফি জমার বিবরণ, টয়লেট, সুপেয় পানির ব্যবস্থার বিষয়ে বিস্তারিত ফরম পূরণ করে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে হবে।
তবে সরকারের এ উদ্যোগের মধ্যে আসতে রাজি নয় প্রতিষ্ঠানগুলো। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, সরকারের নীতিমালায় না আসতে টালবাহানা করছে তারা।
এ ব্যাপারে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট আমিনা রত্না বলেন, কেন আসবে? না আসলে তো তারা ইচ্ছেমাফিক টিউশন ফিসহ অন্যান্য ফি আদায় করতে পারবে। আর নিবন্ধনের আওতায় এলেই তারা সরকারের নীতিমালা মানতে হবে। এজন্য তারা নিবন্ধন করতে চায় না। তারা স্কুলগুলোকে ব্যবসায়িক পণ্য বানিয়েছে।
আর ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জি এম নিজাম উদ্দিন বলেন, সরকারের এমন বার্তা আমরা সবাইকে পৌঁছে দিয়েছি। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠান চালাতে হলে অবশ্যই সবাইকে নিবন্ধন করতে হবে। কেউ যদি না করে তার দায়ভার সে নেবে। পরবর্তীতে কেউ বিপদে পড়লে মালিক সমিতি এগিয়ে আসবে না বলেও জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইংলিশ মিডিয়ামে আসলেই কী শেখানো হয়, যা শেখানো হচ্ছে তার কতটুকু সঠিক আর ভুল, শিক্ষা কতটুকু প্রয়োজনীয় ও বাস্তবমুখী তা জানতে সরকার উদ্যোগী হয় ২০০৯ সালে। কয়েক দফা সময় বেঁধে দিয়ে এর জবাব মিলেনি। সর্বশেষ গত বছর ১লা জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর এই বিষয়টি আরো সামনে আসে। এরপর সরকার অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাস সময় বেঁধে দেয়। এই সময়ের মধ্যে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে মাত্র ৬টি প্রতিষ্ঠান। তবে আর সময় নিতে নারাজ সরকার।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মাহবুবুর রহমান বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডের আওতায় এসে পরিচালনা করতে হবে। যারা মানবে না তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেবো। এছাড়া ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো পর্যবেক্ষণ করতে সরকার আলাদা একটি কমিটি করেছে।