দেশব্যাপী কাগজবিহীন বিদ্যালয় পরিদর্শন ব্যবস্থার যাত্রা শুরু - দৈনিকশিক্ষা

দেশব্যাপী কাগজবিহীন বিদ্যালয় পরিদর্শন ব্যবস্থার যাত্রা শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক |

দেশব্যাপী ডিজিটাল পদ্ধতিতে কাগজবিহীন বিদ্যালয় পরিদর্শন ব্যবস্থা ই মনিটরিং এর উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর গুলশানে স্পেকট্রা কনভেনশন সেন্টারে ই-মনিটরিং উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আকরাম-আল-হোসেন। 

 প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু হেনা মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, সেভ দ্যা চিলড্রেনের শিক্ষা সেক্টরের পরিচালক বুশরা জুলফিকার। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে কাগজবিহীন বিদ্যালয় পরিদর্শন ব্যবস্থা ই মনিটারিং যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে। এতে করে বিদ্যালয় পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণে স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সহজ হবে। তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে। তাই বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার বাড়াতে হবে। তাই প্রাথমিকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে হাজিরা ব্যবস্থা প্রণয়নের পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ হবে প্রাথমিকে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণের ভিত্তি বছর। প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।  ১ জানুয়ারির মধ্যে সব স্কুলে বই পৌঁছে যাবে। ২ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে একযোগে পাঠদান শুরু হবে। এসময় সরকারের লক্ষ্য বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তাদের সর্বাত্মক সহায়তা কামনা করেন তিনি। 

এসময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আকরাম-আল-হোসেন বলেন, আগামী বছর সারাদেশে ২৬ হাজার বিদ্যালয়ে একযোগে প্রাক প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। তিনি বলেন, আগামী বছরের শুরু থেকে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষকদের সভায় ভিডিও কনফারেন্স করে আমি যোগ দিবো। সচিব থেকে সহকারী শিক্ষক পর্যন্ত প্রত্যেককে নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষার প্রত্যেকটি স্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পরিবেশ তৈরিতে কাজ করা হচ্ছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ই প্রাইমারি স্কুল সিস্টেম বাস্তবায়নে ই মনিটরিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আগে কখনো ৪ পৃষ্ঠা কখনো ৮ পৃষ্ঠা প্রতিবেদন দেয়া লাগতো। এখন কর্মকর্তারা সহজেই পরিদর্শন তথ্য আপলোড করতে পারবেন। এ পদ্ধতির মাধ্যমে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রকৃত অবস্থা জানা যাবে। তিনি বলেন, শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে প্রাথমিক শিক্ষার উপর জোর দিতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তা উপলব্ধি করতে পেরে যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশে একযোগে ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি করেছিলেন। তার সুযোগ্য কন্যা দেশনেত্রী শেখ হাসিনা ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি করেছেন। 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ বলেন,  ই মনিটরিং ব্যবস্থায় বিদ্যালয় পরিদর্শনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে। এ ব্যবস্থায় শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ব্যবস্থা থাকতে হবে। 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সেভ দ্যা চিলড্রেনের শিক্ষা সেক্টরের পরিচালক বুশরা জুলফিকার প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাথে থাকার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এসময় ই মনিটরিং ব্যবস্থা প্রণয়নে সহযোগিতা করায় সেভ দ্যা চিলড্রেন ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সকলকে ধন্যবাদ জানান তিনি। 

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সোহেল আহমেদ, সেভ দ্যা চিলড্রেনের পরিচালক রিফাত বিন সাত্তার, আইসিটি ইন এডুকেশন বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার রুকসানা হোসেনসহ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

অনুষ্ঠানে কাগজবিহীন বিদ্যালয় পরিদর্শন ব্যবস্থা ই মনিটরিং সিস্টেম সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়। এ পদ্ধতিতে কিভাবে বিদ্যালয় পরিদর্শনের বিস্তারিত তথ্য আপলোড করা হয় তা প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়। এসময় অতিথিরা বরিশালের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আবদুল লতিফ মজুমদারের সাথে ই মনিটরিং সিস্টেমে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বরিশাল সদর উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। অনুষ্ঠানে ৫ জন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ই মনিটরিং সিস্টেমে বিদ্যালয় পরিদর্শনের জন্য ট্যাবলেট পিসি বিতরণ করা হয়।
 
প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শন ব্যবস্থা ডিজিটালকরণে ই-মনিটরিং সিস্টেম নামে এ ব্যবস্থার প্রণয়ন করছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ। সনাতন পদ্ধতিতে বিদ্যালয় পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থায় অনেক তথ্য বিভ্রাট হয়। এ সমস্যা কাটাতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিদ্যালয় পরিদর্শন ও তথ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি থেকে দেশের প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এ পদ্ধতিতে পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শন করা হবে। এ পদ্ধতিতে সার্ভারে তথ্য আপলোড করার সাথে সাথে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন বিভাগ তা পর্যবেক্ষণের সুযোগ পাবে। ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেম থেকে শিক্ষা কর্মকর্তারা দক্ষতা ও স্বচ্ছতার সাথে স্থানীয় পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহের সুযোগ পাবেন। দেশব্যাপী কাগজবিহীন স্কুল পরিদর্শন ব্যবস্থা ই-মনিটরিং বাস্তবায়নে অধিদপ্তর ৩৭২০টি ট্যাবলেট কিনেছে। ই-মনিটরিং কাজে ব্যবহারের জন্য অক্টোবর-নভেম্বর মাসে দেশব্যাপী মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাঝে তা বিতরণ করা হয়। ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাস থেকে ৬৪টি জেলায় ই-মনিটরিং কার্যক্রম সম্প্রসারিত ও বাধ্যতামূলক করা হবে। 

উল্লেখ্য, ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে গাজীপুর ও মানিকগঞ্জের ৫টি উপজেলায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে ই-মনিটরিং সিস্টেম চালু হয়। এরপর ২০১৬ থেকে ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আরো ৮০টি উপজেলায় ই-মনিটরিং ছড়িয়ে দেয়া হয়। মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য ৬৪ জেলা থেকে তৈরি করা হয়েছে মাস্টার ট্রেইনার। এছাড়া ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে ঢাকা মেট্রোপলিটনের ১২টি থানার শিক্ষা কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের ঘোষণার মাধ্যমে ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে এসব থানা পেপারলেস মনিটরিং এলাকায় পরিণত হয়। 

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0068750381469727