‘এসএসসি পরম পূরণে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায়’ শিরোনামে দৈনিক শিক্ষা ডটকমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন প্রকাশের পর তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে। জেলা প্রশাসনসহ উপজেলা প্রশাসনের নজরে এসেছে স্কুলটির অনিয়মের চিত্র। প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে সেই প্রতিষ্ঠানটি তদন্ত শুরু করেছেন রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শামীমুর রহমান। তদন্তে প্রাথমিকভাবে ফরমপূরণে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার দাদপুর সাহেবগঞ্জ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠে। অভিযোগটি দৈনিক শিক্ষাডটকমের পক্ষ থেকে সরেজমিন খতিয়ে দেখলে বেড়িয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পরীক্ষার্থীরা অভিযোগ করে প্রতিবেদককে জানান, নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের ফরম পূরণের সুযোগ দিয়ে ৪ থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। তারা জানায় এবছর স্কুল থেকে ১০৯ জন শিক্ষার্থী এসএসসির নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে সব বিষয়ে কৃতকার্য হয় ২২ জন শিক্ষার্থী। তবে, এসএসসির ফরম পূরণে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড নির্ধারিত ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের এসএসসি পরীক্ষার ফি বিজ্ঞান বিভাগে ১৯৭০ টাকা ও মানবিক বিভাগে ১৮৫০ টাকা। কিন্তু তা মানেনি দাদপুর সাহেবগঞ্জ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকল বিষয়ে কৃতকার্য পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ক্লাসের নামে ১ হাজার টাকাসহ বিজ্ঞান বিভাগে নেয়া হচ্ছে ৩ হাজার ৩৫৫ টাকা। মানবিক বিভাগে নেয়া হচ্ছে ৩ হাজার ২৩৫ টাকা।
অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের জন্য ৪ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা। এর সাথে অতিরিক্ত ক্লাসের জন্য বাড়তি আরও ১ হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বাধ্য হয়েই অনেকে ফরম পূরণ করেছে। এর মধ্যে নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্যরাও রয়েছে।
২০২০ খ্রিষ্টাব্দের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ১০৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২২জন সব বিষয়ে কৃতকার্য হয়। আর এক বিষয়ে ১৬ জন, দুই বিষয়ে ৮ জন এবং তিন বিষয়ে অকৃতকার্য হয় ১০ জন। অবশিষ্টরা আরও বেশি বিষয়ে ফেল করেছে।
বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, নির্বাচনী পরীক্ষায় ৯৮ জন পরীক্ষার্থী কৃতকার্য হয়েছে। তবে তিনি দাবি করেন নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত টাকা নেয়া হচ্ছে না। অতিরিক্ত ক্লাসের বিষয়ে তিনি জানান, ফি নিয়ম মেনেই নেয়া হচ্ছে।
এ নিয়ে গত ১৩ নভেম্বর দৈনিক শিক্ষাডটকমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে তা ভাইরাল হয়ে পড়ে। বিষয়টি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসে। গত ১৪ নভেম্বর স্কুলটিতে পরিদর্শনে যান রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীমুর রহমান। তবে তদন্তের আগাম সংবাদ পেয়ে যান প্রধান শিক্ষক। পরিস্থিতি বেগতিক ভেবে পরীক্ষার্থীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীমুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, প্রাথমিকভাবে অতিরিক্ত টাকা নেয়া ও ফেল করা পরীক্ষার্থীদের ফরমপূরণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তদন্ত প্রতিবেদনটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে পাঠানো হয়েছে। এদিকে উপজেলা প্রশাসনের এ ধরনের তদন্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।