‘শিক্ষার্থী ধরতে সাইফুরসের নতুন ফাঁদ!’- শিরোনামে দৈনিক শিক্ষায় সোমবার সংবাদ প্রকাশের পর কোচিং সেন্টারটির IELTS মেলা -২০১৬ বন্ধের দাবি করে প্রশাসনের কাছে আবেদন করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদফতর খুলনা অঞ্চল । এ আবেদনে সাড়া দিয়ে মঙ্গলবার মহানগরীর ৬১, শামসুর রহমান রোডের খুলনা শাখায় IELTS মেলা -২০১৬ বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।
এর আগে সোমবার দুপুরে সংবাদ প্রকাশের পর বিকেলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর, খুলনা অঞ্চলের পরিচালক টিএম জাকির হোসেন বিতর্কিত কোচিং সেন্টার সাইফুরস প্রচারিত প্রচারপত্রে কলেজ/ভার্সিটির শিক্ষকদের হেয় করার প্রচেষ্টা ও মঙ্গলবারের নির্ধারিত IELTS মেলা -২০১৬ বন্ধের দাবি জানিয়ে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ও অতিরিক্ত খুলনা জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বরাবর আবেদন করেন।এ আবেদনের প্রেক্ষিতে খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান মেলা বন্ধের জন্য খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনারের কাছে পাঠান। কেএমপি ব্যবস্থা নেওয়ায় সাইফুরসের মেলা বন্ধ হয়ে গেছে।
খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, পুলিশ প্রশাসন ব্যবস্থা নেওয়ায় সাইফুরসের মেলা বন্ধ হয়ে গেছে। খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশ গিয়ে বিতর্কিত এ মেলা বন্ধ করে দিয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর, খুলনা অঞ্চলের পরিচালক টিএম জাকির হোসেন বলেন, সংবাদ প্রকাশের পর আমি জানতে পারি, সাইফুরসের মেলার লিফলেটে শিক্ষকদের হেয় করে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে আমি ওই লিফলেট সংগ্রহ করি। এবং সঙ্গে সঙ্গে জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে বিষয়টি জানাই। পরে বিতর্কিত এ কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ও ১৭ মে মহানগরীর ৬১, শামসুর রহমান রোডের খুলনা শাখার মেলা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন করি। প্রশাসন আবেদনের ভিত্তিতে মেলা বন্ধ করে দিয়েছে।
তিনি দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে জানান, মঙ্গলবার সকালে সরেজিমেন গিয়ে মাউশির প্রতিনিধি দল মেলা বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে এসেছে।
এদিকে বিতর্কিত কোচিং সেন্টার সাইফুরসে পুলিশ হানা দেওয়ায় কোচিংটির কর্মকর্তা-কর্মচারী অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন। সমালোচিত এ কোচিং সেন্টারের মেলা বন্ধ হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন শিক্ষক ও সচেতন অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা।
তারা বলছেন, এর আগে বিতর্কিত বিজ্ঞাপন তৈরি ও প্রচার করা ইংরেজি শিক্ষার কোচিং সাইফুরসের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয় নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ জমা পড়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দুদকে সাইফুরসের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের জন্য লিখিতভাবে সুপারিশ করা হয়েছে। সেখানে কোচিং সেন্টারটির অনিয়ম-দুর্নীতির অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
এছাড়া সম্প্রতি রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত ২০১৫ সালের পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষায় কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের ব্যানারে সাইফুর’স কোচিং সেন্টারের নাম থাকায় অনুষ্ঠানস্থলে এসেও অনুষ্ঠানে অংশ নেননি আইনমন্ত্রী। একই কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকও এ অনুষ্ঠানে অংশ নেননি। শিক্ষামন্ত্রীও কোচিংটির অনিয়ম নিয়ে ক্ষিপ্ত।
এসব অনিয়মের কারণে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে অসংখ্য প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। খুলনায় তারা মেলার নামে ছাত্র ধরার ফাঁদ পেতেছিলো। তাও বন্ধ হয়ে গেলো।এবার তারা কোচিংটিও বন্ধের দাবি জানান। মেলার প্রচারণী লিফলেটের একাংশে লেখা হয়েছে- ‘ওবামার কাছে যেমন Spoken শেখা যাবে না, প্রিন্স চার্লসের কাছে IELTS কোচিং করে লাভ হবে না, তেমনি কলেজ/ভার্সিটির ইংরেজি শিক্ষকের কাছে Spoken বা IELTS করেও লাভ হয় না। কারণ, English –এ অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের সিলেবাসে Spoken বা IELTS না থাকাতে তারা তো এসব পড়াতে অভ্যস্ত না। এগুলো গীবত নয়, বাস্তবতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া!’
Skill Test -এ মেলায় অংশ নিয়ে জিতে নিন ৭৫% পর্যন্ত স্কলারশীপে IELTS কোর্স করার দুর্লভ সুযোগ। ‘IELTS সেরা স্কোর নিয়ে এখন মালোয়শিয়াতে খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ছি’ ছবি দিয়ে এক শিক্ষার্থীর বক্তব্য এমনভাবে প্রচার করা হয়েছে।