দ্বিতীয় দিনে শাহবাগে অবস্থান আন্দোলনকারীদের - দৈনিকশিক্ষা

কোটা বহালের দাবিদ্বিতীয় দিনে শাহবাগে অবস্থান আন্দোলনকারীদের

ঢাবি প্রতিনিধি |

কোটা বহালের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের আন্দোলনে শাহবাগে অবস্থান নিয়েছে ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমান্ড’ ও ‘মুক্তিযোদ্ধার পরিবার’ নামে দুটি  সংগঠন। তাদের অবরোধের কারণে বৃহস্পতিবার (৪ অক্টোবর) সকাল থেকে শাহবাগ মোড় হয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে ট্রাফিক পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।  

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের কেন্দ্রীয় সভাপতি শেখ আতিকুর রহমান বলেন, আগামী শনিবার (৬ অক্টোবর) বেলা তিনটায় শাহবাগে মহাসমাবেশ করবেন তাঁরা। দাবি না মানা পর্যন্ত তাঁরা রাজপথ ছাড়বেন না।

ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার  বলেন, ‘গতরাত থেকে তারা এখনও অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন। যান চলাচল বন্ধ আছে, তবে কোনো গোলাযোগ হয়নি।’

বুধবার রাতে শুরু হওয়া এই অবস্থান কর্মসূচিতে ভোরের দিকে লোক সমাগম কমে এলেও সকালে আবার বাড়তে শুরু করে।

এই অবস্থানের কারণে মৎস্য ভবনের দিক থেকে শাহবাগ হয়ে কোনো যানবাহন কারওয়ান বাজার বা এলিফেন্ট রোডের দিকে যেতে পারছে না। শাহবাগ মোড় হয়ে কোনো গাড়ি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে যেতে পারছে না।

আর সায়েন্স ল্যাব মোড়ের দিক থেকে আসা গাড়ি শাহবাগ মোড়ে এসে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের সামনে দিয়ে রূপসী বাংলা মোড় হয়ে অনেকটা পথ ঘুরে মতিঝিলের দিকে যাচ্ছে।

সরকারি চাকরিতে নিয়োগে এতদিন ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত ছিল। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ।

এই কোটা সংস্কার করে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে কয়েক মাস আগে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ নামের একটি প্লাটফর্ম। এরপর কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে দেয় সরকার।

ওই কমিটি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা সম্পূর্ণ তুলে দেওয়ার সুপারিশ করে, যা বুধবার মন্ত্রিসভার অনুমোদন পায়।

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা বাতিল হলেও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি আগের মতোই রয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।

মন্ত্রিসভার ওই সিদ্ধান্তের পর বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমান্ডের প্রায় ১০০ সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল করে শাহবাগে গিয়ে অবস্থান নেন। তারা সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিলে দেখা দেয় যানজট।

মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সংসদ কমান্ডের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শেখ আতিকুর বাবু রাতে শাহবাগের সমাবেশে বলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদের এই সিদ্ধান্ত আমরা মানি না। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য রাখা ৩০ শতাংশ কোটাই বহাল রাখতে হবে।’

মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহালের দাবিতে শনিবার বিকালে সমাবেশ করার ঘোষণা দেন তিনি।

সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত বাতিল না হয়, ততক্ষণ আমাদের কর্মসূচি চলবে।’

তাদের সমাবেশ থেকে ৬টি দাবি উত্থাপন করা হয়। সেগুলো হচ্ছে : কোটা পর্যালোচনা কমিটির প্রতিবেদন বাতিল, বিসিএসসহ সব চাকরির পরীক্ষায় প্রিলিমিনারি থেকে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাস্তবায়ন, মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, স্বাধীনতাবিরোধীদের বংশধরদেরও সরকারি চাকরি থেকে বহিষ্কার, বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটূক্তিকারীদের বিচার, ঢাবি উপাচার্যের বাসভবনে হামলাকারীদের শাস্তি।

তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানাতে শাহবাগে উপস্থিত হন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। তবে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে কোনো কর্মসূচি পালন না করার আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকলে দাবি আদায় করা সম্ভব ৷কোটা ব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কার দরকার ৷কতটুকু কোটা সামঞ্জস্যপূর্ণ, এটা বোঝাতে পারলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনাদের দাবি মেনে নেবেন ৷ আপনারা আমাদের আদর্শিক সহযোদ্ধা। আমরা আপনাদের পাশে আছি ৷’

শাহবাগে এই অবস্থানের মধ্যে কোটা বহাল রাখার দাবিতে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করে ‘মুক্তিযোদ্ধার পরিবার’ ব্যানারে আরেকটি সংগঠন।

এই সংগঠনের মুখপাত্র মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমরা চাই বাহাত্তরের সংবিধানের আলোকে কোটা ব্যবস্থা বহাল হোক।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল বলেছেন, কোটা পর্যালোচনায় গঠিত বর্তমান কমিটি প্রয়োজনে তাদের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করতে পারবে এবং সরকার সে অনুযায়ী কোটা ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস করতে পারবে।

কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেলে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ইঙ্গিত দেন, কোটার পক্ষে জোরাল আন্দোলন হলে নতুন সিদ্ধান্ত আসতেও পারে।

মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পাশাপাশি বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীও তাদের কোটা সংরক্ষণের দাবি তুলেছে।

আদিবাসী সাধারণ ছাত্র কোটা সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নিপুণ ত্রিপুরা  বলেন, ‘আদিবাসীরা যেহেতু তুলনামূলক পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, সেক্ষেত্রে এটা (কোটা) আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। সরকার বলেছে, তারা বৈষম্য কমানোর জন্য কোটা তুলে দিয়েছে। কিন্তু আদতে এতে বৈষম্য বেড়েছে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আদিবাসীদের সাংবিধানিক অধিকারকে ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।’ 

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.006199836730957