দেশের বিভিন্ন লাইব্রেরি ও বইয়ের দোকানে দেদার বিক্রি হচ্ছে নোট-গাইড। বিভিন্ন শ্রেণির জন্য এমনকি দ্বিতীয় শ্রেণির জন্যও নোট-গাইড বের করেছে নোট-গাইড ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর বাংলাবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বই দোকানগুলো ছেয়ে গেছে এসব নোট-গাইডে। ফুটপাথেও নোট-গাইডের পসরা সাজিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে এসব বই। বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আকতারুজ্জামান।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, অভিযোগ রয়েছে- অনেক শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রীদের বাধ্য করছেন নোট-গাইড কিনতে। শিক্ষাবিদরা বলছেন, এসব নোট-গাইড পড়ে শিক্ষার্থীরা সৃজনশীলতা শিখতে পারছে না। অভিযোগ রয়েছে- শিক্ষা আনন্দময় হওয়ার কথা থাকলেও নোট-গাইডের কারণে তা হচ্ছে না। শিক্ষক নামধারী অসাধু কিছু লোক বিভিন্ন প্রকাশনীর কাছে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের বাধ্য করছেন এসব নোট-গাইড কিনতে। এমন কয়েকটি অভিযোগ আসার পরিপ্রেক্ষিতে নির্ধারিত কারিকুলামের বাইরে নোট ও গাইড বই পড়ানো বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। গত ২১ জানুয়ারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু নোট-গাইড বিক্রি থেমে নেই।
আরও পড়ুন: অবৈধ গাইড বই কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে ধামরাইয়ের শিক্ষার্থীদের
অতিরিক্ত বই ও নোট-গাইড না পড়াতে নতুন নির্দেশ
গাইড বইয়ের আগ্রাসন, প্রকাশনীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন শিক্ষকরা
সেই নিষিদ্ধ লেকচার গাইডের মালিক শিক্ষক সমিতি
শিক্ষক সমিতিকে ম্যানেজ করে নোট-গাইড ব্যবসার অভিযোগ
উদ্দেশ্য যদি হয় কোচিং ও নোট-গাইড বাণিজ্য বহাল রাখা তবে সেটা হবে দুর্ভাগ্যজনক
সরেজমিনে দেখা গেছে- দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে বিক্রি চলছে এসব নোট। বাংলাবাজারের হক লাইব্রেরি, রাজধানী বুক হাউস, ঢাকা টাউন লাইব্রেরি, বই পরিচয়, ফেমাস লাইব্রেরি, আজিজিয়া বুক হাউসসহ বিভিন্ন বইয়ের দোকানে দেখা গেছে পসরা সাজিয়ে দেদার বিক্রি করা হচ্ছে এসব নোট-গাইড বই। দ্বিতীয় থেকে বিভিন্ন শ্রেণির নোট-গাইড বিক্রি চলছে পাঞ্জেরি, লেকচার, জুপিটার, অনুপম, অ্যাকটিভ চমক, ফুলকুড়ি, দোলনা, সংসদ, পপিসহ অন্যান্য প্রকাশনীর। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, দ্বিতীয় শ্রেণির নোটগাইডগুলো পাওয়া যাচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। তৃতীয় শ্রেণির গাইড ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায়, চতুর্থ শ্রেণির গাইড ৩১০ থেকে ৩৩০ টাকায় ও পঞ্চম শ্রেণির গাইড প্রকাশনীভেদে পাওয়া যাচ্ছে ৪৮০ থেকে ৫১০ টাকায়। এভাবে ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম-দশম শ্রেণির জন্যও বিক্রি হচ্ছে গাইড। গাইড বইগুলো কোনো কোনো প্রকাশনী বিক্রি করছে অনুশীলনমূলক বই নামে।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে- চলমান এসএসসি পরীক্ষার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে বাংলা প্রথম পত্রের কয়েকটি প্রশ্ন হুবহু তুলে দেয়া হয়েছে বিভিন্ন প্রকাশনীর গাইড বই থেকে। শিক্ষা বোর্ডের একটি সূত্র জানায়, প্রকাশনী থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এসব প্রশ্ন সংযোজন করছে তারা।
এ ব্যাপারে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা প্রতিবেদককে বলেন, মূল বইয়ের বাইরে কোনো নোট-গাইড পড়ার প্রয়োজন নেই। গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নোট-গাইড না কেনার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের সতর্ক করেছে এনসিটিবি। এরপরেও যারা এসব বিক্রি করছেন, যারা নোট-গাইড কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করছেন তারা গর্হিত কাজ করছেন। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এ প্রসঙ্গে বলেন, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নোট-গাইড কোম্পানির যোগসাজশে শিক্ষার্থীদের এসব কিনতে বাধ্য করছে। কেউ শিক্ষার্থীদের কিনতে বাধ্য করলে বর্তমানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হয়। শিক্ষা আইনে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট ধারা সংযোজন করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সহজ হবে।
তিনি বলেন, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাত্র-ছাত্রীদের অতিরিক্ত বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দেয়। এটাও অনুচিত।