ধারণার চেয়েও দ্রুতগতিতে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে চীনে উৎপত্তি হওয়া করোনাভাইরাস। চীনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী এ ভাইরাসের সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে। অন্যান্য দেশে এ ভাইরাসে মৃত্যুর খবর পাওয়া না গেলেও রোববার পর্যন্ত চীনে মারা গেছেন ৮০ জন।
দেশটিতে এক হাজার ৯৭৫ ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। গতকাল পাওয়া তথ্যানুযায়ী, সর্বশেষ কানাডাসহ ১৩ দেশে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছে। চীনের বাইরে এসব দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৯ জন। চীন সরকার হুবেই প্রদেশসহ দেশটির ৩০টি প্রদেশ ও অঞ্চলে নাগরিকদের চলাচলে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতেই এ পদক্ষেপ।
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মা জিয়াওউইয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, নতুন ধরনের এই করোনাভাইরাস সম্পর্কে এখনও বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। তবে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শক্তি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। মানুষের শরীরে এ ভাইরাসের লক্ষণ স্পষ্ট হতে এক থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত লাগতে পারে। লক্ষণ স্পষ্ট হওয়ার আগেই শরীরে এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে, যা সেভার অ্যাকুয়িট রেসপিরেটরি সিনড্রোমের (সার্স ভাইরাস) চেয়ে ভিন্ন। ২০০২-০৩ সালে চীনে উৎপত্তি হওয়া সার্স ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে বিশ্বব্যাপী আটশ'র বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন:
করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচবেন যেভাবে
করোনা ভাইরাস : বিশ্বে সাড়ে ৬ কোটি মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা !
করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক নয়, প্রতিরোধে সব ধরনের প্রস্তুতি আছে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
সাময়িকভাবে বন্ধ হতে পারে চীন ভ্রমণ
গতকাল হংকংয়ে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের জন্য নির্ধারিত একটি ভবনে আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। এ ঘটনায় হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি, তবে একজনকে আটক করা হয়েছে। আবাসিক এলাকার কাছের ওই ভবনে ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের রাখার ব্যাপারে বিরোধিতা করেছিলেন স্থানীয়রা। এ নিয়ে তারা বিক্ষোভও করেছেন। করোনাভাইরাসের জন্য এরই মধ্যে হংকংয়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
শনিবার কানাডা প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে ভারতের কেরালা ও মহারাষ্ট্রে শতাধিক মানুষকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তবে দেশটিতে ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার নিশ্চিত কোনো ঘটনা শনাক্ত হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তৃতীয় ব্যক্তির সন্ধান মিলেছে।
চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে ভাইরাসটির উৎপত্তি। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও জাপান তাদের নাগরিকদের উহানসহ আশপাশের এলাকা থেকে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। এই দেশগুলো ছাড়াও চীনের স্বায়ত্তশাসিত তিনটি অঞ্চল হংকং, ম্যাকাও, তাইওয়ানসহ অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, নেপাল, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে।
উহানের পাশাপাশি বেইজিং, সাংহাই ও পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ শানডংয়ে সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে চীন সরকার। এমন পরিস্থিতিতে উহানে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন। মাত্র ছয় দিনের মধ্যে এক হাজার শয্যার ওই বিশেষায়িত হাসপাতালটি নির্মাণ করা হবে। ২০০৩ সালে প্রাণঘাতী সার্স ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে বেইজিংয়ে এমন একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল তৈরি করেছিল চীন। সেই আদলেই তৈরি হবে উহানের হাসপাতালটি। এরই মধ্যে ২৫ হাজার বর্গমিটার জায়গাজুড়ে হাসপাতাল নির্মাণের জন্য শ্রমিকরা প্রস্তুতি সেরে ফেলেছেন। এর আগে তেরোশ' শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মাণে হাত দেন তারা।
গতকাল বাজারঘাট, রেস্টুরেন্টসহ সর্বত্র সব ধরনের পশু কেনাবেচায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে চীনের কর্তৃপক্ষ। সামুদ্রিক খাবার ও পশুর বাজার থেকে নতুন ধরনের এ করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য আসার পর এমন পদক্ষেপ নেওয়া হলো। চলতি সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা জারির কথা বিবেচনা করেও পরে পিছিয়ে আসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। অনেক বিশ্নেষক সংস্থাটির এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা মনে করেন, চীনের পক্ষে একা এই 'মহামারি ভাইরাস' সামাল দেওয়া সম্ভব নয়।
চীনা নববর্ষ উপলক্ষে গত বছর এ সময়টায় উহানসহ পুরো চীন মেতে ছিল উৎসবে। করোনাভাইরাস এ বছরের চিত্রকে পুরো পাল্টে দিয়েছে। এক কোটি দশ লাখ মানুষের শহর উহান যেন পরিণত হয়েছে ভূতুড়ে নগরীতে। রাস্তায় গণপরিবহনসহ সব ধরনের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। একটু পরপর লাউড স্পিকারে আহ্বান জানানো হচ্ছে গুজবে কান না দিতে। কেউ অসুস্থ বোধ করলে দেরি না করে তাকে হাসপাতালে যেতে বলা হচ্ছে।