সুনামগঞ্জের ছাতকে ধর্ষণের শিকার হওয়া এক তরুণীর ভাইকে একঘরে (স্থানীয় ভাষায় পাঁচের বাদ) করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, অভিযুক্ত মাদ্রাসাশিক্ষক মাওলানা আবদুল হকের পক্ষ নিয়ে গ্রামের মোড়লরা ওই পরিবারকে এ শাস্তি দিয়েছে। শাস্তি দেয়ার কারণ হলো, পরিবারটি ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত মাদ্রাসাশিক্ষকের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নেয়নি। তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২০১৮ সালের অক্টোবরে। এ প্রসঙ্গে গত রোববার সহযোগী দৈনিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বুধবার (২১ আগস্ট) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
জানা গেছে, আবদুল হক স্থানীয় হাসনাবাদ কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক। আর ভুক্তভোগী এতিম তরুণীর বাড়ি কালারুকা ইউনিয়নের একটি গ্রামে। অভিযোগ অনুযায়ী ওই তরুণীকে মাদ্রাসাশিক্ষক আবদুল হক কয়েক বছর ধরে ধর্ষণ করে আসছিল। ৩ বছর আগে স্থানীয় এক নিঃসন্তান প্রবাসীর সঙ্গে বিয়ে হয় ওই তরুণীর। বিয়ের পর ওই তরুণীকে আবদুল হক আবারও যৌন সম্পর্কের প্রস্তাব দেয়। তাতে রাজি না হলে সে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে। তরুণীর স্বামী মামলা করতে চাইলে ২০১৮ সালের নভেম্বরে আবদুল হকের সমর্থক গ্রামের মোড়লরা দুই লাখ টাকায় বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চায়। সেই সঙ্গে বিষয়টি গোপন রাখতে গ্রামে ফতোয়া জারি করেন।
সভ্য সমাজে এমন অমানবিক কাজ মনুষ্যত্ব আর বিবেকের চরম অপমান। এমন জঘন্যতম অপরাধের জন্য দ্রুত বিচার আইনে স্বল্পতম সময়ে বিচার ও শাস্তি কার্যকর করা অত্যন্ত জরুরি। একে তো মাদ্রাসাশিক্ষক টানা ধর্ষণ করে আসছিল ওই তরুণীকে তার ওপর তার ভাইকে একঘরে করে রেখে চরম অপরাধ করেছে। এসব ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে যে, এ কোন বর্বরতার মধ্যে আমরা বসবাস করছি। বিচারহীনতা ও ভয়ের সংস্কৃতির কারণেই ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে চলেছে। ধর্মকে ব্যবহার করা হচ্ছে এসব ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য। অথচ ওই তরুণী ধর্ষণের ঘটনা এবং তার ভাইকে যে একঘরে করে রাখা হলো, তারপরও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নিল না কেন? পুলিশ নিশ্চুপ ছিল এবং এখনও নীরব ভূমিকা পালন করছে।
আমরা চাই, এ ঘটনার অপরাধ তদন্তে ও অপরাধীদের বিচারাধীন করায় পুলিশকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সামাজিক প্রতিরোধ গড়তে এগিয়ে আসতে হবে ব্যক্তি-সংগঠনকে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ধর্ষক আবদুল হক ও তাকে মদতদাতা গ্রামের মোড়লদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।