ধর্ষণ প্রতিরোধে এবার আসছে ‘অ্যান্টি রেপ ডিভাইস’। যা ধর্ষণ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এটি বিশেষ ধরনের একটি ডিভাইস। যা কোনো নারীর কাছে থাকলে, সেই নারী কোনো দুর্ঘটনায় পড়লে, সঙ্গে থাকা ডিভাইসটি জোরে শব্দ করতে থাকবে। এসব তথ্য জানিয়েছেন ডিভাইস তৈরিতে সংশ্লিষ্টরা।
তারা মনে করছেন এই ডিভাইস ব্যবহার করলে মানুষ তখন আক্রান্ত নারীকে উদ্ধার করতে পারবে। এই ডিভাইসটির ব্যবহার ব্যাপকভাবে শুরু হলে, ধর্ষকরা ভয় পাবে এবং ধর্ষণ কমে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে ‘অ্যান্টি রেপ ডিভাইস’ ধর্ষকদের মাঝেও আতঙ্ক ছড়াবে। সহজে আর কেউ ধর্ষণে উদ্বুদ্ধ হবে না। তারা বলছেন, ‘অ্যান্টি রেপ ডিভাইস’ ব্যবহারে রাষ্ট্রের সহযোগিতা প্রয়োজন। এই ডিভাইসের সঙ্গে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জাতীয় জরুরি সেবা সংযুক্ত করতে পারলে এর সুফল পাওয়া যাবে।
দেশব্যাপী নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা উদ্বেগজনকহারে বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, ১৪টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে মোট ৪ হাজার ৬২২ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১ হাজার ৩৭০ জন, গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ২৩৭ জন, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৭৭ জনকে, ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছে ১৯ জন। এছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ২৪৫ জনকে। শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছে ৯১ জন। যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৮৫ জন।
২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে মোট নির্যাতনের শিকার হয় ৩ হাজার ৯১৮ নারী ও কন্যাশিশু। এর মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে মোট ৯৪২টি। গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৮২ জন, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৬৩ জনকে। এছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ১২৮ জনকে, শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছে ৭১ জন, যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৪৬ জন।
অনেক দেশেই ধর্ষণ প্রতিরোধে ডিভাইস ব্যবহার করা হচ্ছে। ধর্ষণ প্রতিরোধে বেশ কয়েকটি ডিভাইস তৈরিও হয়েছে। এর মধ্যে সাংকেতিক বার্তা দিতে পারদর্শী এমন একটি ডিভাইস বেশি গ্রহণযোগ্য হয়েছে। প্রথমদিকে আফ্রিকা ও ইউরোপের কিছু দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এসব ডিভাইস প্রস্তুত করেন। পরে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে এগুলো বাণিজ্যিকভাবে তৈরি শুরু হয়।
আফ্রিকা, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও ভারতে এই ডিভাইসগুলো ব্যাপকহারে বিক্রি হয়ে থাকে। ক্ষুদ্র এই ডিভাইসটি হাতঘড়ি, আঙুলের রিং কিংবা গলায় বা কোমরে চেইনের সঙ্গে রাখা যায়, আবার পরিধেয় বস্ত্র এবং ব্যাগের ভেতরেও রাখা সম্ভব। বাংলাদেশে ধর্ষণ প্রতিরোধে নারীদের ‘অ্যান্টি রেপ ডিভাইস’ সরবরাহের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ও চিলড্রেনস চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন। রিট দায়েরের পর গত ১৯ জানুয়ারি এ বিষয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।