ধর্ষণের শিকার হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি নুরসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা করে উল্টো হুমকির মুখে পড়েছেন ভুক্তভোগী ঢাবি ছাত্রী। নূর ও র্তা সহযোগীদের সংগঠন সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের এ নারী সহকর্মী নিরুপায় হয়ে এবার আসামীদের গ্রেফতারের জন্য আদালতের সরনাপন্ন হয়েছেন। ধর্ষণ মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশনা চেয়ে রবিবার আদালতে আবেদন করেছেন ছাত্রী। এদিকে তদন্তের নামে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে হয়রানি ও হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্র অধিকার পরিষদের বিরুদ্ধে।
রবিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা আক্তারের আদালতে ভুক্তভোগী ছাত্রী হাজির হয়ে আসামীদের গ্রেফতারের আবেদন করেন। আদালত নথি পর্যালোচনা করে আদেশে বলেন, মামলাটি আমলযোগ্য। পুলিশ চাইলে আসামিদের যেকোনো সময় গ্রেপ্তার করতে পারেন। মামলায় আলাদা করে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার প্রয়োজন নেই। তাই ভুক্তভোগীর আবেদনটি নথিভুক্ত করা হলো।
বাদীর আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন খান হিরন গণমাধ্যমেকে এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, পুলিশ অজ্ঞাত কারণে এখনও এরকম একটি মামলার আসামিদের গ্রেফতার না করার ফলে বাদী চরম নিরপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আসামিরা গ্রেফতার না হলে মামলার তদন্ত প্রভাবিত হওয়ায় আশঙ্কা রয়েছে। সেক্ষেত্রে বাদী ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হইতে পারেন।
আদালতে করা আবেদনে বলা হয়েছে, বিষয়টি অত্যন্ত নির্মম ও জঘন্য। মামলার ধারাও জামিন অযোগ্য। ধর্ষণের বিষয়টি সমালোচনা ও প্রতিবাদের কারন হলেও আজ পর্যন্ত কোন আসামী গ্রেফতার হয়নি। বাদী চরম হতাশায় ভুগছেন। কারন আসামীদের সহযোগীরা প্রতিনিয়ত বাদিনীকে বিভিন্নভাবে ভয় ভীতি প্রদর্শণ ও হুমকি দিয়ে আসছেন।
তিনি আরো বলেন, বাদী আসামিদের বিরুদ্ধে পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করলেও আসামিদের গ্রেফতার না করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উদাসীনতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। বাদী আদালতে হাজির ছিলেন। এর আগে গত ২০শে সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থী লালবাগ থানায় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনকে প্রধান আসামি করে ছয় জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।
এ মামলায় ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরসহ ছয় জনকে আসামি করা হয়। মামলার অপর আসামিরা হলেন- বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগ (২৮), একই সংগঠনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন (২৮), বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাইফুল ইসলাম (২৮), বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি নাজমুল হুদা (২৫) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহিল বাকি(২৩)। এর আগে ২১শে সেপ্টেম্বর বাদী কোতোয়ালি থানায় একই অভিযোগে আরেকটি মামলা দায়ের করেন।
এদিকে ধর্ষণের ঘটনায় ছাত্র অধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে গঠন করা তদন্ত কমিটির বিরুদ্ধেও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পরিবারকে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত সংগঠনটির নেতারা বলেছেন, তদন্তের স্বার্থেই ওই ছাত্রীর পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, তদন্ত কমিটির প্রধান বিন ইয়ামিন মোল্লা ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রীর বাবা এবং ভাইকে ফোন করে নানা বিভ্রান্তিমূলক প্রশ্ন করেন। এর ফলে ওই শিক্ষার্থীর পরিবার হীনমন্যতায় ভুগছেন। ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী জানান, ছাত্র অধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে আমার কাছে রাফিয়া রাফি ফোন করে ঘটনার বিস্তারিত জেনেছে।
এর পরও তদন্তের নামে বিন ইয়ামিন মোল্লা আমার বাবা-ভাইয়ের কাছে কি জানতে চায় সেটা আমার জানা নেই। তদন্তের নামে প্রতিনিয়ত আমার পরিবারের বিভিন্ন সদস্যকে ফোন করে এভাবে হয়রানি করার কোনো মানে হয় না।
তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান জানিয়ে ওই ছাত্রী আরো বলেন, ধর্ষণের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেটি নিরপেক্ষ না। কেননা আমি মামলা করার পরই কমিটির প্রধান বিন ইয়ামিন মোল্লা আমার বিরুদ্ধে ঢাবিতে বিক্ষোভ করেছিলেন। এই কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে আমি যথেষ্ট সন্দিহান।