করোনাভাইরাস নিয়ে এই সংকটে ক্ষতিগ্রস্তদের নগদ অর্থ সহায়তার জন্য করা তালিকায় অসঙ্গতি ধরা পড়ায় তা সংশোধন করে নতুন তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, ৫০ লাখ পরিবারকে ওই নগদ সহায়তা দেওয়া হবে। কিন্তু ৫০ লাখ নামের যে তালিকা করা হয়েছে তাতে আট লাখ নামে একই মোবাইল নম্বর পাওয়া গেছে। এ কারণে সংশোধিত তালিকা পাঠানোর জন্য জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৬৪ জেলা প্রশাসককে শনিবার রাতে এই নির্দেশনা পাঠানো হয়। ১৭ মে’র মধ্যে তাদের নতুন তালিকা চাওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, দেশের ৫০ লাখ পরিবারকে নগদ অর্থ সহায়তা কর্মসূচির মধ্যে আট লাখ পরিবারের নামের তালিকায় একই মোবাইল নম্বর একাধিকবার ব্যবহার হয়েছে। অনেক গরীব মানুষের বিকাশ নম্বর না থাকায় একই নম্বর অনেকে ব্যবহার করেছেন। তাই আট লাখের বেশি নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহে তালিকা পর্যালোচনা করে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অর্থ সহায়তা পাঠানো হবে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে কর্মহীন হয়ে পড়া বিভিন্ন পেশার শ্রমিক ও দুস্থ ৫০ লাখ পরিবারকে ঈদ উপলক্ষে আড়াই হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এই কার্যক্রম শুরুর পর অভিযোগ ওঠে, অর্থ আত্মসাতের জন্য কোনো কোনো তালিকায় একই মোবাইল নম্বর অনেকবার ব্যবহার করা হয়েছে। এ নিয়ে গত দুই দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনা চলছে।
এই প্রেক্ষাপটে এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, কোনোভাবেই একজনের টাকা অন্যের অ্যাকাউন্টে যাওয়ার সুযোগ নেই।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসকদের কাছে নতুন তালিকা চাওয়ার বিষয়টি জানার পর এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সঙ্গে কথা বলেন বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, 'এই কর্মসূচিটি যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত উদ্যোগে নেওয়া হয়েছে, তাই বিষয়টি নিয়ে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব জনাব ড۔ আহমদ কায়কাউসের সাথে টেলিফোনে কথা বলি। তিনি আমাকে বিষয়টি অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করেন। তিনি জানান, এই ডিজিটাল কর্মসূচিতে একজনের নামে বা একজনের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে অন্য কেউ অর্থ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি বলে থাকে যে, কারো কারো মোবাইল ফোন নেই, তাই অন্য কারো মোবাইল নম্বর দেওয়া হচ্ছে, আমাদের সিস্টেমে এটি গ্রহণ করার কোনো সুযোগ নেই। সিস্টেম এটি গ্রহণ করবে না।'
'শুধু মোবাইল নম্বর থাকলেই হবে না, তার সাথে ভোটার আইডি কার্ড নম্বরও থাকতে হবে। প্রতিটি ব্যক্তির মোবাইল ফোন নম্বর আর ভোটার আইডি নম্বর ভেরিফাই করে টাকা ছাড় করানো হবে। তাছাড়া যে ব্যক্তিকে টাকাটা পাঠানো হবে, সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী তিনি এটি প্রাপ্য কি না সেটিও সিস্টেম দেখবে'-বলেন সেলিম মাহমুদ।
তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় সকল পরিবারেই ন্যূনতম একটা মোবাইল ফোন রয়েছে। তাই মোবাইল নম্বর নেই- এই অজুহাতে অন্য কারও নম্বরে টাকা গ্রহণ করা বা পাঠানোর কোনো সুযোগ নেই। অর্থাৎ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই কর্মসূচিতে দুর্নীতি করার কোনো সুযোগ নেই। যারাই দুর্নীতি করার চেষ্টা করবেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
তালিকায় অঙ্গতির পেছনে যেসব জনপ্রতিনিধি রয়েছেন তাদের বিষয়ে ‘সরকারের সংস্থাগুলো খোঁজ-খবর করছে’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আরও বলেন, 'বাংলাদশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো সরকার প্রধান ৫০ লাখ পরিবারকে নগদ আড়াই হাজার টাকা করে ঈদ উপহার হিসেবে ১২৫০ কোটি টাকা দিচ্ছেন। এটি একটি ইতিহাস। প্রতি পরিবারে ন্যূনতম চারজন সদস্য ধরলে দেশে মোট উপকারভোগী মানুষের সংখ্যা দুই কোটি। আর প্রতি পরিবারে সদস্য পাঁচজন ধরলে মোট উপকারভোগী মানুষের সংখ্যা আড়াই কোটি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার এই নগদ সহায়তা পেয়ে খুশি তৃণমূলের সাধারণ মানুষ।'