নতুন ক্লাসে ভর্তি, গুনতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা - Dainikshiksha

নতুন ক্লাসে ভর্তি, গুনতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সন্তানের নতুন ক্লাসে উঠা আননেন্দর হলেও বরিশালের মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে পড়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কপালে চিন্তার রেখা দেখা যায়। এসব স্কুলে নতুন শ্রেণিতে ওঠা মানে শ্রেণিবদলের জন্য হাজার হাজার টাকা ঢালা। একজন শিক্ষার্থী তার নিজের স্কুলেই নতুন ক্লাসে উঠতে ‘ভর্তি ফি’র নামে কেন এত টাকা দিতে বাধ্য হবে তার যৌক্তিক ব্যাখ্যা নেই। আর এই টাকা দিতে না পারলে মিলবে না বিনামূল্যের সরকারি বই। 

বরিশালের মহানগরী ও জেলা-উপজেলার অধিকাংশ স্কুলে নতুন বই পেতে তৃতীয় থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়া শিশুদের অভিভাবকদের গুনতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। নগরীর বিদ্যালয়গুলোতে সর্বনিম্ন দু হাজার থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে পাস করে নতুন ক্লাসে উঠতে। তাই এসব স্কুলে পড়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বছরের শুরুতেই এই টাকা সংগ্রহ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। 

অভিভাবকরা বলেন, সরকারি স্কুলগুলোতে ভর্তি যুদ্ধে টেকা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। তাই বাধ্য হয়ে সন্তানকে এসব স্কুলে ভর্তি করাতে হয়। সরকার এসব স্কুলে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে বিতরণের বই দিচ্ছে। কিন্তু বিদ্যালয়ের নির্ধারিত রশিদে টাকা জমা না দেওয়া পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থীর হাতে সেগুলো দেওয়া হচ্ছে না।

সরেজমিনে গত তিনদিন ধরে এসব বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বেতন আদায়ের রশিদে ২৭ রকমের খাত দেখিয়ে ২ হাজার থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা লিখে অভিভাবকদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে তা জমা দেওয়ার জন্য। কেউ কেউ ধারদেনা করে এই টাকা জমা দিয়ে ভর্তি করাতে পারলেও বেশিরভাগই এসব ফি থেকে অব্যাহতি পাওয়া কিংবা কিছুটা কমানোর জন্য ধর্না দিচ্ছেন দ্বারে দ্বারে। এসব বিদ্যালয়গুলো সুচতুরভাবে তাদের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি করে উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা কিংবা এমন প্রভাবশালী রাজনীতিকদের যাদের কাছে টাকা কমানোর সুপারিশ করতে যাওয়া সাধারণ অভিভাবকদের কাছে কল্পনারও অতীত। অনেক অভিভাবক কিছুটা ফি কমানোর জন্য প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তারা সাক্ষাত্ও দেন না। অথচ এ সপ্তাহের মধ্যেই এই টাকা জমা দেওয়ার নোটিস দেয়া হয়েছে অধিকাংশ স্কুলে। 

এক হিসাবে দেখা গেছে এসব স্কুলের এক একটিতে ১২শ থেকে ১৮শ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। নতুন ক্লাসে ওঠার সময় এদের সবার কাছ থেকে এই গলাকাটা ফি নিয়ে আদায় করা হয় লাখ লাখ টাকা। কোনো কোনো স্কুলে এই আদায়ের পরিমাণ অর্ধকোটি ছাড়িয়ে যায়। অথচ এই টাকা খরচের হিসাব সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক ছাড়া আর কেউ জানেন না। ব্যাংক থেকে এই দু’জনের যৌথ স্বাক্ষরে এই টাকা তোলা হয় যার খরচের খাত অন্যরা জানতে পারে না। অভিভাবকদের অভিযোগ, প্রভাবশালী কাউকে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি করা হয় মূলত প্রতিবাদ এড়িয়ে সহজে এসব গলাকাটা ফি আদায়ের জন্য। পরে এসব টাকা তুলে ভূয়া ভাউচারে খরচ দেখানো হয় । এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক প্রতিবাদ করলে তাদের চাকরি হুমকির মুখে পড়ে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ ইউনুস বলেন, নগরীর বিদ্যালয়গুলোতে ম্যানেজিং কমিটিতে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক সহ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রয়েছেন। শিক্ষাবোর্ড থেকে বার বার এসব স্কুলগুলোকে ন্যায্য ফি নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রতিও বিশেষ খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে। তবু তারা শিক্ষাবোর্ডের নির্দেশনা মানছে না।

বরিশাল জেলা প্রশাসক অজিয়র রহমান নগরীর একটি বিদ্যালয়ের সভাপতি। তিনি বলেন, সভাপতি হলেও নতুন ক্লাসে ওঠার সময় তার স্কুলে কত টাকা ফি ধার্য করা হয়েছে তা তিনি জানেন না। নিয়ম নীতির বাইরে টাকা নেয়া হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, তাদের প্রায় ১২শ শিক্ষার্থীর জন্য ২২শ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, তার পাশের স্কুলে আরো বেশি নেয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে, কয়েকজন অভিভাবক বলেন, শিশুরা পাস করার পর স্কুলগুলো যা করছে তা তাদের শিক্ষাজীবনকে ‘জিম্মি’ করে টাকা আদায় ছাড়া আর কিছু নয়। সরকারি স্কুলে সবাই ভর্তি হতে পারে না। আর এসব স্কুলে ভর্তি করিয়ে অভিভাবকদের বেতন দেয়ার সক্ষমতা থাকলেও বছরের প্রথমে এই গলাকাটা ফি’র রশিদ ধরিয়ে দেয়ার অনৈতিক চর্চা বন্ধ করতে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ করা উচিত।

অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034160614013672