নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রাক্কালে কিছু প্রস্তাব - দৈনিকশিক্ষা

নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রাক্কালে কিছু প্রস্তাব

ড. মো. রফিকুল ইসলাম |

যে কোনো জাতির উন্নয়নের জন্য উচ্চশিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। আর উচ্চশিক্ষার জন্য মূল প্রতিষ্ঠান হল বিশ্ববিদ্যালয়, যাকে বলা হয় বিশ্বমানের বিদ্যালয়। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, বর্তমানে দেশে ৪১টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ১০৩টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নিয়ে বহুবিধ প্রশ্ন রয়েছে।

৪১টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার ধরন অনুযায়ী এগুলো আবার সাধারণত প্রধান পাঁচভাগে বিভক্ত, যেমন- ১. সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়, ২. প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ৩. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ৪. মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, এবং ৫. কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। জাতীয় উন্নয়নের জন্য উচ্চশিক্ষার নিমিত্তে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার বিপরীতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা একেবারেই অপ্রতুল। সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায়, অতিসম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তিনটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলো হল- ১. বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ২. লক্ষ্মীপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৩. চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

উল্লেখিত তিনটি নতুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অত্যাবশ্যক তিনটি মৌলিক উপাদান নিয়ে আলোচনা করাই এ প্রবন্ধটির মূল উদ্দেশ্য।

নতুন তিনটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে শুরুতেই যে প্রধান তিনটি মৌলিক উপাদান অবশ্যই সরকারকে বিবেচনায় রাখতে হবে, সেগুলো হল- ১. বিদেশে উচ্চতর গবেষণা সম্পন্ন করেছেন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে অভিজ্ঞ- প্রতিটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ভিসি নিয়োগ দেয়া দরকার।

নিজ নিজ গবেষণা ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানের আইএসআই ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর সম্মৃদ্ধ জার্নালে কমপক্ষে ১০টি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশনা থাকা বাধ্যতামূলক সাপেক্ষে ভিসি নিয়োগ দেয়া উচিত, ২. প্রতিটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদে শিক্ষকতার যোগ্যতা থাকার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানের আইএসআই ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টরের জার্নালে কমপক্ষে পাঁচটি গবেষণা প্রবন্ধ থাকা বাধ্যতামূলক সাপেক্ষে অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগ দেয়া এবং ৩. সাবজেক্ট খোলার ব্যাপারে গতানুগতিক পন্থা পরিহার করে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর্মসংস্থানমুখী সাবজেক্ট খোলার ব্যাপারে অগ্রাধিকার প্রদান করা।

প্রশ্ন আসতে পারে, শুরুতেই এ ধরনের কড়াকড়ি বিধি আরোপ করতে হবে কেন? উল্লেখিত তিনটি মৌলিক উপাদানের প্রথমটির বিষয়ে বলা যায়, একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রশাসনিক ব্যক্তি হলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি), যাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ/বিধি মেনে চলার জন্য শপথবাক্য পাঠ করানো হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রয়োজনের তাগিদে অনেক ক্ষেত্রে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রজ্ঞার ওপর ভিত্তি করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে গঠনমূলক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আর বুদ্ধিবৃত্তিক প্রজ্ঞার ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও উচ্চতর গবেষণা জ্ঞানের ব্যাকগ্রাউন্ড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ফ্যাক্টর।

এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদে কোনো ব্যক্তিকে নিয়োগ পেতে হলে তাকে অবশ্যই ডক্টরেট ডিগ্রিধারী প্রকৌশলী হতে হয়, অন্য কোনো বিষয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতার ব্যাকগ্রাউন্ড এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। এটা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটা লিখিত বিধি বলে জানা গেছে।

অনুরূপভাবে, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি পদে নিয়োগ পেয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞ সিনিয়র অধ্যাপক ডাক্তাররা এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভিসি পদে নিয়োগ পেয়ে থাকেন সিনিয়র বিশেষজ্ঞ অধ্যাপকরা। এটাই স্বাভাবিক রীতি। কারণ একজন প্রকৌশল ব্যাকগ্রাউন্ডের ভিসি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সমস্যাগুলো যেভাবে বুঝবেন ও সমাধান করতে সচেষ্ট হবেন, অন্য ব্যাকগ্রাউন্ডের ভিসি তা বুঝবেনও না, সমাধান করতে চেষ্টাও করবেন না, বরং অবস্থা হবে হ-য-ব-র-ল।

অনুরূপভাবে, একজন সিনিয়র অধ্যাপক ডাক্তার বুঝবেন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের ভাষা, সমস্যা ও সমাধানের পথ। একইভাবে একজন বিশেষজ্ঞ কৃষিবিদ ভিসি বুঝবেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের ভাষা, সমস্যা ও সমাধানের পথ।

নতুন তিনটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে অ্যাপ্লাইড সায়েন্স ও প্রকৌশল ব্যাকগ্রাউন্ডের ডক্টরেট ডিগ্রিধারী ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগের বিষয়টি জাতীয় সংসদ কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন/বিধিতে অন্তর্ভুক্ত করা অত্যাবশ্যক।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসি পদে অ্যাপ্লাইড সায়েন্স ও প্রকৌশল ব্যাকগ্রাউন্ডের ডক্টরেট ডিগ্রিধারী ব্যতিরেকে কোনোভাবেই ভিন্ন অনুষদের ব্যাকগ্রাউন্ডের কোনো ব্যক্তি যাতে নিয়োগ না পান, সে ব্যাপারে আগামী জাতীয় সংসদে অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন নতুন তিনটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন/বিধিতে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকা দরকার। ভিসি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরেট ডিগ্রিধারী হওয়া বাধ্যতামূলক শর্ত আরোপ করা দরকার। কারণ বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরেট ডিগ্রিধারী একজন যোগ্য ভিসি বিভিন্ন বিভাগে নিয়োগদানের ক্ষেত্রে যোগ্য ব্যক্তিদেরকেই শিক্ষক পদে নিয়োগ দেবেন। এ ব্যাপারে রসায়ন বিজ্ঞানের জনক বিশ্ববিখ্যাত মুসলিম বিজ্ঞানী জাবির ইবনে হাইয়্যানের একটি গবেষণালব্ধ ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা প্রণিধানযোগ্য।

তিনি বলেছিলেন, ‘যেমন তেমনকেই কাছে টানে’, অর্থাৎ সহজভাবে বলা যা, ক্ষার জাতীয় রাসায়নিক উপাদান ক্ষারকে এবং এসিড জাতীয় রাসায়নিক উপাদান এসিডকে কাছে টানে। যদিও তিনি এ কথাটা বলেছিলেন বিভিন্ন রাসায়নিক মৌলিক উপাদানের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটানোর পর গবেষণাগারে প্রাপ্ত গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে, কিন্তু মানবজাতির বহুমুখী চরিত্রের ক্ষেত্রেও এ কথাটা প্রায় শতভাগ সত্য। কারণ মানবদেহের সব রাসায়নিক উপাদানের সঙ্গে ভূপৃষ্ঠের মাটির বিভিন্ন রাসায়নিক মৌলিক উপাদানের শতভাগ মিল রয়েছে। আর এসব কারণেই ‘যে যেমন লোক’, ‘সে তেমন লোককেই’ কাছে টানবে। সুতরাং জাবির ইবনে হাইয়্যানের গবেষণার ভিত্তিতে এ কথা বলা যায়, যোগ্য ভিসিরা যোগ্য ব্যক্তিদেরকেই শিক্ষক পদে নিয়োগ দেবেন। পক্ষান্তরে, অযোগ্য ভিসিরা অযোগ্য ব্যক্তিদেরকেই শিক্ষক পদে নিয়োগ দেবেন।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসিদের যোগ্যতা নিয়ে কিছুদিন আগে (২৮/৭/২০১৮) শাবিপ্রবি’র কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক ‘ন্যাশনাল ক্যাম্পাস জার্নালিজম ফেস্টিভ্যাল-২০১৮’ উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদানকালে আমার একজন সম্মানিত সিনিয়র সহকর্মী প্রফেসর ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল প্রায় শতভাগ সত্য একটা গুরুত্বপূর্ণ উক্তি করেছিলেন, যা নিয়ে দেশব্যাপী সর্বমহলে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। তার উক্তিটি এ জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে, বিগত সাতচল্লিশ বছরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসিদের নিয়ে এরকম বক্তব্য এর আগে শোনা যায়নি, যদিও বিভিন্ন ভিসিদের নিয়ে কিছু রসাত্মক সমালোচনা বিভিন্ন সময়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

এ লেখকের মতে, এসব কারণেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে জাতীয় দৈনিকসমূহে বিভিন্ন সময়ে মুখরোচক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাননীয় চ্যান্সেলর মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি এ প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয়কে আমলে নিয়ে এবং প্রফেসর ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের উক্তিকে সামনে রেখে নতুন তিনটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে গঠনমূলক ও যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, তাহলেই সুদূরপ্রসারী একটি ভালো ফল আশা করা যেতে পারে, অন্যথায় নয়।

ভিসি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথম শর্ত যদি বিদেশি ডক্টরেট ডিগ্রিধারী হওয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানের আইএসআই ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর সমৃদ্ধ জার্নালে কমপক্ষে দশটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশনা থাকা বাধ্যতামূলক আইন জাতীয় সংসদে পাস করা হয়, তাহলে নতুন তিনটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সরকারের পক্ষেও যোগ্য ব্যক্তিদের বাছাই করে ভিসি পদে নিয়োগ দেয়া সহজ হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শুভযাত্রা শুরু হবে যোগ্য স্কলারদের হাত ধরে। প্রবাদ আছে, শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। কিন্তু শেষ ভালো ফলাফলের জন্য ভালো দিয়েই শুরু করতে হয়।

এবার দ্বিতীয় মৌলিক উপাদান নিয়ে আলোচনা করা যাক। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ চালু করার প্রাক্কালে সিনিয়র, অভিজ্ঞ এবং উচ্চতর গবেষণাজ্ঞান সমৃদ্ধ ফ্যাকাল্টিকে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়ার উপর ওই বিভাগটির ভবিষ্যৎ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ জন্য একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগ চালু করার প্রাক্কালে দেশে-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দক্ষ ও উচ্চতর গবেষণাজ্ঞানসমৃদ্ধ ব্যক্তিদের হায়ার করে এনে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।

‘উচ্চতর গবেষণাজ্ঞান’ কথাটা এ জন্য বলা হচ্ছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হল ‘উচ্চতর গবেষণাজ্ঞান’, যার মাধ্যমে জাতির বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে গবেষণা করে এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য জার্নালে প্রবন্ধ আকারে প্রকাশনার পর তা জাতিকে করণীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করবে। উচ্চতর গবেষণাজ্ঞানই যদি না থাকে তাহলে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আর একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এবং হাইস্কুল ও কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য থাকে না।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হল জ্ঞান সৃষ্টির জায়গা আর প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাইস্কুল ও কলেজগুলো হল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকদের সৃষ্ট জ্ঞান বিতরণের জায়গা। কাজেই সিনিয়র, অভিজ্ঞ এবং আন্তর্জাতিক মানসম্মত ও উচ্চতর গবেষণাজ্ঞানসমৃদ্ধ ফ্যাকাল্টিদের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিয়োগ না দিয়ে যদি সদ্য পাস করা অনভিজ্ঞদের হাতে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব তুলে দেয়া হয়, তাহলে ওই বিভাগগুলোর বারোটা তো অতি সহসা বাজবেই, সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গ্রহণযোগ্যতার মান দেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রমাবনতির একেবারে তলানিতে অতি দ্রুত পৌঁছে যাবে। কাজেই এ ধরনের সম্ভাব্য সব পরিণতির দিক থেকে শুরুতেই সাবধান হতে হবে।

এবার তৃতীয় মৌলিক উপাদান নিয়ে আলোচনায় আসি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য হল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন করে উদ্ভাবন করা বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তির বিষয়গুলোকে আমাদের দেশে চলমান কোর্সের সঙ্গে আপডেট করার পাশাপাশি টেকসই ও উদ্ভাবনীমূলক প্রযুক্তির দ্বার উন্মোচন করার ব্যবস্থা করা। সেই সঙ্গে দেশের সেবা ও বিদেশে দক্ষ জনশক্তি রফতানি করার কৌশল অবলম্বন করা। কিন্তু আমাদের দেশে এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা একেবারেই ভিন্ন।

নাম দেয়া হচ্ছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কিন্তু কার্যত দেখা যাচ্ছে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অবস্থা। কলা অনুষদের বিভিন্ন সাবজেক্টের চাপের মুখে বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদগুলোর ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রাজনৈতিক বিবেচনায় কলা অনুষদের কোনো ব্যক্তি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি হয়ে এসেই প্রথমে তার নিজের ব্যাকগ্রাউন্ডের সাবজেক্ট খুলে ডিগ্রি প্রদান করার জন্য উঠেপড়ে লেগে যাবেন এবং বিভাগগুলোর বার্ষিক উন্নয়নের বাজেটের ক্ষেত্রে গৃহীত নীতির ফলে বিজ্ঞান ও প্রকৌশল সাবজেক্টগুলোর বারোটা বেজে যাবে।

কাজেই নতুন তিনটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদগুলোর শিক্ষার্থীদের সহায়ক কোর্স হিসেবে পাঠদানের জন্য কলা ও বাণিজ্য অনুষদের কয়েকটি বাছাই করা সাবজেক্ট হিসেবে খুলতে হবে। কোনোক্রমেই ডিগ্রি প্রদানকারী সাবজেক্ট হিসেবে নয়। এর একটু ব্যতিক্রম ঘটলেই মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে তিনটি নতুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি।

তিনটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পেছনে প্রয়োজনীয় যাবতীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সাধুবাদ জানাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়কে। সর্বশেষ যে বিষয়টি স্মরণ রাখা দরকার তা হল- শুধু নতুন নতুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করলেই চলবে না, ধরে রাখতে হবে শিক্ষার মান এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের শিক্ষার গ্রহণযোগ্যতা।

 

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

 

সৌজন্যে: যুগান্তর

নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0043990612030029