ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফিন্যান্স এন্ড ব্যাকিং বিভাগের প্রভাষক সঞ্জয় কুমার সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রী নিপীড়নের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগে শিক্ষকের নানামুখী অপকর্ম ও কু প্রস্তাবের কথা তুলে ধরা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলে। এ অভিযোগের দায়েরের কারনে অভিযোগকারী ছাত্রী স্বর্ণাকে (ছদ্মনাম) পরীক্ষায় ফেল করানো ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন বলে অভিযোগ উঠেছে। সে একই বিভাগের ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল মহল গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বিভাগীয় সূত্রে ও ভোক্তভোগী ছাত্রীর বন্ধুরা জানান, ফিন্যান্স বিভাগের ওই শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রীদের যৌন হয়রানী করার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে প্রস্তাব দিয়ে আসছে। ইতিপূর্বে ফিন্যান্স বিভাগে যৌন কেলেঙ্কারীর দায়ে এক শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে ঐ বিভাগের শিক্ষকদের ছাত্রীরা সবসময় এড়িয়ে চলা শুরু করে।
গত ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ১৭ সেপ্টম্বর যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ সেলের এক অনুষ্ঠানে সঞ্জয় কুমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন ওই বিভাগের ছাত্রীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. রাশিদ আসকারী ড. সঞ্জয়কে তিরস্কার করেন। ভবিষ্যতে যেন কোন অপকর্ম না হয় সেই বিষয়ে সেলের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারী জানানো হয়। এরপরে ওই ছাত্রীকে বিভিন্ন নাম্বার থেকে পরীক্ষায় ফেল করানোসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।
এরপর স্বর্ণা তার সহপাঠীদের কাছে ওই শিক্ষকের কু প্রস্তাবের বিষয়ে জানিয়ে তাকে বাঁচানোর আকুতি জানান। শিক্ষকের অপকর্মের সব প্রমাণ দিতে চায়। এরপর দ্বিতীয় সেমিস্টারে ফল প্রকাশের পর ওই ছাত্রীকে ১২৩ নম্বর কোর্সে ফেল দেখানো হয়। আবারো গত ১ জুলাই তৃতীয় সেমিস্টারে ভাইভাতে বিভিন্ন প্রশ্ন ও হুমকির মুখে ওই শিক্ষার্থী মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন।
এখন ওই ছাত্রী সঞ্জয়ের কাছ থেকে তাকে বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন প্রলাপ বকেন।এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে শুক্রবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন মহল ব্যাপক কানাঘুষা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এর আগে ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার সময় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীর সঙ্গে শ্লীলতাহানির অভিযোগ আছে।
উল্লেখ্য, গত ২৩ আগস্ট একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আসাদুজ্জমান কে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বিধি ৪ (ফ) অনুযায়ী ছাত্রীর সঙ্গে যৌন কেলেঙ্কারী প্রমাণিত হওয়ায় ২৫৬ তম সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চাকরিচ্যুত করানো হয়।
স্বর্ণার বন্ধু তাসফিয়া মাহি বলেন, ‘স্বর্ণা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কুমিল্লা বোর্ড স্টান্ড করেছিল। আসলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ সেলে অভিযোগের পর থেকে হেনেস্তার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। যা বলাটাই রীতিমত রীতিমত লজ্জাস্কর ব্যাপার।’
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বড় বোন শাম্মী আক্তার বলেন, ‘আমার ছোট বোন বাড়ি এলে ব্যক্তিগতভাবে আমাকে সঞ্জয় সাহেবের ব্যাপারে নানা আপত্তিকর কথাবার্তা বলত। শিক্ষকের মতো পবিত্র পদে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মত পবিত্র আঙ্গিনায় এসব অপকর্ম অত্যন্ত দুঃখজনক।’
সঞ্জয় কুমারের সঙ্গে কথা বলতে একাধিকবার তার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
ভিসি প্রফেসর ড. রাশিদ আসকারী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় হবে নারীদের অভয়ারণ্য। প্রশাসন যে কোন যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’