কুড়িগ্রামের রৌমারীতে একটি মাদরাসায় দুইজন কর্মচারী নিয়োগে ২২ লাখ টাকা ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। মাদরাসার সুপার জামাত নেতা রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেছেন নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্র না পাওয়া প্রার্থীরা। মাদরাসার এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো অনুযায়ী নবসৃষ্ট পদে নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া নিয়োগে এ গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
ঘুষের টাকা হাসিল করতে গোপনে নিয়োগ বোর্ড গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সদস্যদের। এজন্য মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তাকে বিশেষ ব্যবস্থায় রৌমারীতে এনে এক ঘণ্টার মধ্যে নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
মাদরাসা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ফুলজান বছিরিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার ও ইউনিয়ন জামায়াতের আমির রফিকুল ইসলাম সম্প্রতি গোপনে দুটি পত্রিকায় একজন নিরাপত্তা কর্মী ও একজন আয়া পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেন। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিষয়টি গোপন রেখে স্থানীয় চাকরি প্রত্যাশী ২-৩ জনের পরিবারের সাথে সুপার দর কষাকষি শুরু করেন। এরমধ্যে নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া পদে নিয়োগের জন্য ৬ শতাংশ জমি ও ২২ লাখ টাকায় রুহুল আমিন ও আর্জিনা খাতুনদের পরিবারের সাথে চূড়ান্ত রফা করেন সুপার।
অভিযোগ উঠেছে, মাদরাসার সুপার অত্যন্ত গোপনে তার নিয়োগ প্রক্রিয়া গুছিয়ে আনেন। আয়া পদে ১০ জন প্রার্থী আবেদন করলেও ৬ জন প্রার্থীকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের প্রবেশপত্র না দিয়ে তার পছন্দের প্রার্থীর নিয়োগ চূড়ান্ত করতে তিনজন প্রক্সি প্রার্থীকে নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রবেশপত্র দেন।
অন্যদিকে নিরাপত্তাকর্মী পদে সুপারের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে ৮ জন প্রার্থীর মধ্যে রুহুল আমিনসহ মাত্র দুইজন প্রক্সি প্রার্থী হিসেবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রবেশপত্র দেন। জানা গেছে, মাদরাসা সুপারের স্বাক্ষরিত বাংলায় লেখা ওই প্রবেশপত্রটির ৬টি স্থানে বানান ভুল ছিল।
অভিযোগ উঠেছে, ভেন্যু হিসেবে নির্বাচিত উলিপুর উপজেলার ধরনীবাড়ি মাঝবিল বালিকা দাখিল মাদরাসাটি সুপারের জামাতার বাড়ির কাছে হওয়ায় নিয়োগ প্রক্রিয়াটি নির্বিঘ্ন করতে ওই এলাকা নিয়োগ পরীক্ষা নেন সুপার। এদিকে, গোপন নিয়োগের বিষয়টি ফাঁস হলে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়।
মাদরাসা ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আব্দুর রশিদ, আব্দুল সালাম অভিযোগ করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘মাদরাসা সুপার রফিকুল ইসলাম ও কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশ করে গোপনে নিয়োগ বোর্ডের বিষয়টি চূড়ান্ত করেন। নিয়োগ বোর্ডের বিষয় আমরা কিছুই জানি না।’
এছাড়াও পরিকল্পিতভাবে গত ১১ জুলাই ওই কর্মকর্তাকে অনুরোধ করে বিমানে করে সৈয়দপুর পরে সড়কপথে উলিপুরে নিয়ে আসেন। মাত্র ঘণ্টা খানেকের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রতিনিধি আবারও বিমানে করে ঢাকায় ফিরে যান বলে নিয়োগ বোর্ড সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে নিশ্চিত করেন। এ গোপন নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাস্টার মাইন্ড হিসেবে রৌমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এ বি এম নকিবুল হাসান নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে, ওই মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেন।
মাদরাসা সুপার রফিকুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘বিধি অনুযায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় হয়েছে।’ তবে টাকা লেনদেনের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
ডিজির প্রতিনিধি বিমানে আসার বিষয় জানতে চাইলে মাদরাসা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. শফিয়ার রহমান স্বীকার করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘নিয়োগ বোর্ডে আমি উপস্থিত ছিলাম। কোনো প্রকার আর্থিক লেনদেন হয়নি।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ বি এম নকিবুল হাসান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ডিজির প্রতিনিধি ওই দিনই বিমানে এসে বিমানে চলে গেছেন। নিয়োগ পরীক্ষায় কোনো অনিয়ম হয়নি।’