রাজশাহীর তানোর মহিলা ডিগ্রি কলেজের ভূগোল বিষয়ের প্রভাষক আব্দুল্লাহ-আল-মামুন। তিনি তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রায় এক যুগ ধরে শ্রেণিকক্ষে না গিয়ে নিয়মিত বেতন নিচ্ছেন।
কলেজের একাধিক শিক্ষক-কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এ উপজেলাজুড়ে রয়েছে মামুনের অবাধ বিচরণ। দিনভর রাজনীতি নিয়েই বিভিন্ন উপজেলা সদর ও রাজশাহী শহর চষে বেড়ান। ফলে একটি কলেজ থেকে তিনি যে চাকরির নামে মাসের পর মাস বেতন উত্তোলন করেছেন, সেটি হয়তো ভুলেই গেছেন।’
কলেজ সূত্র জানায়, মামুনের গ্রামের বাড়ি কামাগাঁ কচুয়া গ্রামে। তিনি গ্রামের বাড়িতে থাকেন না। বর্তমানে রাজশাহী শহরে বসবাস করেন। সেখান থেকে উপজেলার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন। কিন্তু কলেজের ক্লাস বা শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো প্রভাব নেই তার।
তানোর মহিলা ডিগ্রি কলেজের ভূগোল বিষয়ের ছাত্রীরাও তাকে চেনেন না। কারণ এই শিক্ষক কলেজে যোগদান করার পর থেকে প্রথম দিকে কয়েক বছর ক্লাস করান।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আর শ্রেণিকক্ষে দেখা যায়নি তাকে। কলেজে ভূগোল বিষয়ে আরো দুজন শিক্ষক রয়েছেন সৈয়দ হাকিমুল হাসান ও মুনসেফ আলী। তারাই প্রায় এক যুগ ধরে ক্লাস নেন।
রুটিনে সপ্তাহের দুই দিন বুধ ও বৃহস্পতিবার মামুনের ক্লাস আছে। কিন্তু এই দুই দিনও তিনি ক্লাসে যান না। তাঁর পরিবর্তে আরেক সহকর্মী ও বন্ধু হিসেবে পরিচিত মুনসেফ আলী ক্লাস করান।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার তাকে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় রাজশাহী নগরীর শিল্পকলা একাডেমিতে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। অথচ কলেজের রুটিন অনুযায়ী ওই দিন তার ক্লাস ছিল।
কলেজ সূত্র মতে, দলীয় ক্ষমতার বলে মামুন তানোর মহিলা ডিগ্রি কলেজের ভূগোল বিষয়ের প্রভাষক পদে ১৯৯৬ সালের ৪ নভেম্বর যোগ দেন। কিন্তু ২০১৮ সালে তার বেতন-ভাতা (এমপিও) চালু হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের বেশ কয়েকজন ছাত্রীন বলেন, ‘ভূগোল বিষয়ে মামুন নামের শিক্ষক আছেন শুনেছি। কিন্তু আমরা কখনো ক্লাস নিতে দেখিনি। তিনি কখনো কলেজে আসেন বলেও জানা নেই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানান, কলেজের খাতা-কলমে মামুনকে প্রতিদিন কলেজে উপস্থিত দেখানো হয়। কিন্তু তিনি মাসে এক দিন কলেজের অধ্যক্ষের কার্যালয়ে গিয়ে সারা মাসের হাজিরায় স্বাক্ষর করেন। সরকারি দল ক্ষমতায় থাকায় ক্লাস না করেও তিনি মাসে মাসে বেতন উত্তোলন করছেন। ফলে কলেজের (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারেন না। কারণ কলেজের সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্য। তাঁর ঘনিষ্ঠ হিসেবে মামুন পরিচিত।
মামুনের ক্লাস না করার বিষয়টি স্বীকার করে তানোর মহিলা ডিগ্রি কলেজের (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ অনুকূল কুমার ঘোষ বলেন, ‘তাঁর পরিবর্তে আরেক শিক্ষক মুনসেফ আলী ক্লাস নেন। আব্দুল্লাহ-আল-মামুনের বন্ধু তিনি। এ কারণে তাঁর হয়ে ক্লাস নেন মুনসেফ। তবে কোনো সমস্যা হয় না। শিক্ষক মামুনও মাঝে মাঝে ক্লাস নেন।’
আব্দুল্লাহ-আল-মামুনের বক্তব্য নেয়ার জন্য গত সোমবার সন্ধ্যায় তার মোবাইল ফোনে কল করে ও এসএমএস পাঠিয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
তানোর মহিলা ডিগ্রি কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’