দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির কর্মকান্ডের সঙ্গে অনেকেই মিল খুঁজে পান আমেরিকা-বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির। জানা গেছে, এই ইউনিভার্সিটিরও রয়েছে একাধিক ট্রাস্টি বোর্ড। নেই শিক্ষা কার্যক্রম, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। এই ভার্সিটি নিয়ে চলছে ৫টি মামলা। অভিযোগ রয়েছে সার্টিফিকেট বাণিজ্যেরও। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি আমেরিকা-বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি পরিদর্শন করে এমন নানা অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে। এর আগে মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব ও সার্টিফিকেট বাণিজ্যে অভিযুক্ত হবার পর দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছিল সরকার। এ কারণে সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, আমেরিকা-বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির পরিণতিও দারুল ইহসানের মতোই হবে।
সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়টি অনুমোদনের সময় ঠিকানা ছিল বনানী। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১৩ সালে ৫৪/১ প্রগতি সরণি, বারিধারা ঠিকানায় এর অনুমোদন দেয়। এখন এই ঠিকানায় চলছে সার্টিফিকেট বাণিজ্য। বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী একটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য ২৫ হাজার বর্গফুটের অবকাঠামো থাকতে হবে। কিন্তু এই ইউনিভার্সিটির অবকাঠামো রয়েছে মাত্র ২২০০ বর্গফুটের। প্রগতি সরণির আট তলা ওই ভবনের নীচতলা থেকে সপ্তম তলা পর্যন্ত বারিধারা জেনারেল হাসপাতাল। রয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও দোকান। শুধুমাত্র অষ্টম তলার ২২০০ বর্গফুট ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে ভাড়া নেয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য। এখানে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোন অবকাঠামো নেই। কোন আসবাব পত্রও দেখতে পায়নি তদন্ত কমিটি।
কমিটির সদস্যরা তিনজন কর্মচারীকে ৩ টি কম্পিউটারের সামনে দেখতে পান। কম্পিউটারে রক্ষিত ফাইল দেখে নিশ্চিত হন, বিভিন্ন প্রোগ্রামের প্রায় ১১২ জনকে সার্টিফিকেট প্রদানের কাজ চূড়ান্ত করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ঠিকানায় কোন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাও হয় না। অথচ সেখানে সার্টিফিকেট তৈরি করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে মাত্র ১৩ হাজার টাকায় জাল সনদ বিক্রি করতো আমেরিকা-বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি। আর এই সনদ তৈরি করা হতো বিশ্ববিদ্যালয়টির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বাসায়। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নারী রেজিস্ট্রারকে গ্রেফতার করেছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ওই সময়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল বিপুল সংখ্যক জাল সনদ। বিশ্ববিদ্যালয়টি সিলগালা করে শাহজাহানপুর থানায় বিশ্ববিদ্যালয় চেয়ারম্যান, ভিসি ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিল।
ওই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন প্রফেসর সরদার মজিবর রহমান, ভিসি ছিলেন মাসুদ হোসেন এবং আদিল হোসেন। তবে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি দাবি করছেন শাহ আলম মুসা। প্রতিষ্ঠাকালীন যারা পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন বর্তমানে তারা কেউ নেই। গত ৪ এপ্রিল নতুন করে ডিড হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ তিনটি গ্রুপে বিভক্ত। উচ্চ আদালতে মামলা চলছে ৫টি। মামলাগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের আদেশের বিরুদ্ধে। ২০০৭ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে এই মামলাগুলো করা হয়।
তদন্ত কমিটি সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০২ সালে ১ সেপ্টেম্বর বনানীর কামাল আতাতুর্ক সড়কে বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচালনার অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু নিয়ম মেনে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ব্যর্থ হলে সরকার ২০০৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ ঘোষণা করে। সরকারি এই আদেশের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রিট মামলা করলে আদালত স্থগাতিদেশ প্রদান করে। এক পর্যায়ে আদালত ইউনিভার্সিটির পক্ষে রায় প্রদান করে। তবে আদালতের এক রায় অনুযায়ী, ইউনিভার্সিটি শুধু মেইন ক্যাম্পাসে চলতে পারবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ওয়েবসাইট ও লোগো রয়েছে। একটি ওয়েবসাইটে পাওয়া মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে নিজেকে সহকারী জনসংযোগ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি জানান, আগামী সেমিস্টার থেকে ভর্তি কার্যক্রম চলবে। তিনি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের নাম বা অন্য কোন তথ্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
সৌজন্যে: ইত্তেফাক