নারায়ণগঞ্জ শহরের এক নম্বর বাবুরাইল এলাকায় চার তলা ভবন ধসে পড়ার ঘটনার ২৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও সেখানে আটকে পড়া স্কুলছাত্র ইফতেখার আহমেদ ওয়াজিদকে (১২) এখনো উদ্ধার করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীরা। অভিযান নিয়ে অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী ও স্বজনরা।
তাদের দাবি, ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীদের গাফিলতি ও আন্তরিকতার অভাবে ২৪ ঘণ্টার উদ্ধার তৎপরতা ব্যর্থ হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ওয়াজিদকে উদ্ধার করা না হলে পরিস্থিতি বিক্ষোভে রূপ নেবে বলে তারা হুঁশিয়ারি দেন।
এদিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের নারায়ণগঞ্জ জোনের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন জানান, ওয়াজিদকে উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। তবে এরই মধ্যে খালের উপর ধসে পড়া ভবনটির নিচের পানি নিষ্কাষণ করতে পাম্প বসিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।
গত রবিবার বিকেলে দিকে এক নম্বর বাবুরাইল এলাকার এমএইচ ম্যানশন নামের সীমানা প্রাচীরের অভ্যন্তরে চার তলা ওই ভবনটি একদিকে কাঁত হয়ে পুরোপুরি খালের উপর ধসে পড়ে। এ ঘটনায় শোয়েব নামে এক স্কুলছাত্র নিহত ও তিনজন আহত হয়। ওইদিন দুপুরের খাবার শেষে ভবনটির নিচ তলার ফ্ল্যাটে আরবি পড়তে গিয়েছিল ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম রুবেলের একমাত্র ছেলে ওয়াজিদসহ আরো পাঁচ স্কুল শিক্ষার্থী।
বিকেলে মসজিদে আসর নামাজের জামাত শুরু হলে বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে পেছন দিকে খালের উপর ধসে পড়ে চার তলা ভবনটি। এ দুর্ঘটনায় আরবি পড়তে আসা স্কুলছাত্রী স্বপ্নাসহ চারজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে সদরের জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় ওয়াজিদের খালাতো ভাই শোয়েবকে উদ্ধার করে হাসপাতাল নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তবে, সন্ধান পাওয়া যায়নি ওয়াজিদের। ধারণা করা হচ্ছে শিশুটি ধসে পড়া ভবনটির ভেতরে আটকা পড়েছে।
এদিকে, ভবন ধসের ২৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও ওয়াজিদকে উদ্ধার করা সম্ভব না হওয়াতে তার বেঁচে থাকা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা। পরিবারে চলছে শোকের মাতম।
নিখোঁজ ওয়াজিদ স্থানীয় সানরাইজ স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। ওয়াজিদের মা কাকলি বেগম ছেলেকে না পেয়ে পাগলপ্রায়। ছেলের জন্য আহাজারি করে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন।
গতকাল সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের নারায়ণগঞ্জ জোনের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, ওয়াজিদ বা অন্য কারো অস্তিত্বের আলামত মেলেনি। তিনি জানান, পাম্প বসিয়ে খালের পানি নিষ্কাশনের কাজ শুরু হয়েছে। পানি সম্পূর্ণভাবে নিষ্কাশন হয়ে গেলে হয়তো ওয়াজিদের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হবে।
জেলা প্রশাসক মো. জসীম উদ্দিনের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রেহেনা আকতারকে আহ্বায়ক করে গতকাল সোমবার তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কমিটির সদস্য সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা বারিক জানান, আগামী ৮ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে তদন্ত কমিটিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।