করোনা ভাইরাসে এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বে ১ কোটি ৪৪ লাখ ৫০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। আর মৃত্যু হয়েছে ৬ লাখের বেশি মানুষের। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা বলছেন-নারীপ্রধান দেশগুলোর তুলনায় পুরুষশাসিত দেশে মৃত্যু প্রায় সাড়ে চার গুণ বেশি। পুরুষশাসিত দেশে মৃত্যুর হার বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে-এসব দেশের সরকারপ্রধানরা জনস্বাস্থ্যের চেয়ে অর্থনৈতিক বিষয়টির ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। অর্থাত্ লকডাউন কার্যকরে কিছুটা দেরি করেছেন। ডাবলিনের ট্রিনিটি কলেজের অধীনে একটি আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ দলের এই গবেষণায় বিশ্বের ৩৫টি দেশের ওপর জরিপ করা হয়েছে; যেখানে ২৫টি দেশ পুরুষশাসিত এবং বাকি ১০টি দেশের সরকারপ্রধান নারী।
গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে করোনা ভাইরাসে প্রতি ১০ লাখে কত জনের মৃত্যু হয়েছে সেই হিসাব থেকে দেখা যায়— পুরুষশাসিত দেশে গড়ে ১০ লাখ মানুষের মধ্যে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। পক্ষান্তরে নারীপ্রধান দেশে এই সংখ্যা মাত্র ৪ দশমিক ৮ জন। আর মোট মৃত্যুর দিক দিয়ে পুরুষশাসিত দেশে মৃত্যুর সংখ্যা নারীপ্রধান দেশের তুলনায় ছয় গুণ বেশি।
নারীপ্রধান দেশ নিউজিল্যান্ড, তাইওয়ান, গ্রিস, এস্তোনিয়া এবং ফিনল্যান্ডের মোট জনসংখ্যা ও মোট মৃত্যুর সঙ্গে পুরুষশাসিত দেশ যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ইতালি এবং সুইডেনের মোট জনসংখ্যার মধ্যে মোট মৃত্যুর একটি তুলনামূলক পরিসংখ্যানেও এই বিষয়টি স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। ঐ গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে জার্মানি, নিউজিল্যান্ড, ডেনমার্ক এবং ফিনল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে নারী সরকারপ্রধান। আর ঐ দেশগুলোতে করোনা ভাইরাস মহামারিতে সরকারপ্রধানরা যেভাবে ভূমিকা রেখেছেন তা বিশ্বব্যাপী দারুণ প্রশংসিত হয়েছে।
নারীপ্রধান দেশগুলোর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, মৃত্যুর গ্রাফ দ্রুত নিচের দিকে নেমেছে এবং প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যাও কম ছিল। গবেষকরা বলছেন, এসব দেশের সরকারপ্রধানরা করোনা ভাইরাসের মহামারি ছড়িয়ে পড়ার আগেই লকডাউন কার্যকর করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র কিংবা যুক্তরাজ্যের মতো পুরুষশাসিত দেশে অর্থনীতির কথা বিবেচনা করতে গিয়ে লকডাউন কার্যকর করতে কিছুটা বিলম্ব করেছে। সেখানে জনস্বাস্থ্যের চেয়ে অর্থনীতির ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে।
গবেষণায় আরো দাবি করা হয়েছে, নারীপ্রধান দেশগুলোর সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ভিত্তি পুরুষশাসিত দেশের তুলনায় ভারসাম্যপূর্ণ। এসব দেশে জনস্বাস্থ্যের পাশাপাশি জাতীয় নীতিমালায় মানবিকতা এবং বদান্যতার বিষয়টিকেও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। পুরুষশাসিত দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের সঙ্গে তুলনা করে বিশেষ প্রশংসা করা হয়েছে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল এবং নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডেনের।—ডেইলি মেইল