বাংলাদেশ উন্নতির পথে ক্রমশ এগিয়ে চলেছে এ কথাটি অস্বীকার করার কোনো অবকাশ নেই। আর এ উন্নয়নের পথে পুরুষদের পাশাপাশি নারীর দৃঢ় অবস্থানও জরুরি, তা না হলে উন্নয়ন স্তিমিত হয়ে যাবে। আর নারীর এ দৃঢ় অবস্থান সম্ভব কেবলই তার শিক্ষা ও পরিপূর্ণ বিকাশের মাধ্যমে। যদিও নারীশিক্ষার পরিমাণ অতীতের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে, তবুও এখনো বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের দিকে নারীশিক্ষার বিস্তার সে রকমভাবে ঘটছে না। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও জানা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গ্রামাঞ্চলের স্কুল-কলেজগুলোতে দেখা যায় নবম-দশম শ্রেণিতে উত্তরণের পূর্বেই অনেক মেয়ের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। এর পেছনে কিছু কারণও ভূমিকা রাখে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাবা-মায়েরা তাদের মেয়ে সন্তানদের নিরাপত্তার কথা ভেবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভালো পাত্রস্থ করতে উদ্বিগ্ন থাকেন। এতে করে মেয়েদের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য যতটুকু শিক্ষা প্রয়োজন সেটুকু গ্রহণ করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। আর তারাই সংসার জীবনে গিয়ে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে জানে না, এমনকি অধিকার খর্ব হলে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদও করতে জানে না। এভাবে অনেক নারীই অন্যের হুকুম তামিল করে, সবকিছু সহ্য করে ও তাদের সমস্ত প্রতিভাকে রান্নাঘরের চার দেওয়ালের মধ্যেই আবদ্ধ রাখে। পত্রিকা খুললেই যৌতুকের দায়ে পুড়িয়ে হত্যা, শ্বাসরোধ করে গৃহবধূ হত্যা এসব অসংখ্য খবর প্রতিদিনই আসে।
এমন আরো অনেক নির্যাতিতা আছে যাদের খবর আসে না কিংবা তারা বলতেও সাহস পায় না। শিক্ষিত সমাজে এ রকম ঘটনা ঘটে না এ রকমটি নয়। তবে তুলনামূলকভাবে কিছুটা হলেও কম। কারণ নারীরা যখন শিক্ষা গ্রহণ করবে, সচেতন হবে, তার অধিকার সম্পর্কে জানবে তখন সে কোনোভাবেই পুরুষ কর্তৃক শাসিত হতে চাইবে না। সমাজের আরেকটি বদ্ধমূল ধারণা হচ্ছে নারীশিক্ষা গ্রহণ করলে সংসার ভেঙে যায়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, শিক্ষিত ছেলে নিজে কিংবা তার পরিবার শিক্ষিত মেয়ে পাত্রী হিসেবে চায় না। এখন সব দোষ কী তাহলে শিক্ষার? শিক্ষা যদি পুরুষের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ না হয় তাহলে নারীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে কেন? দোষ শিক্ষার নয় বরং মানুষের মানসিকতার, চিন্তার ও মূল্যবোধের। মানুষ এখনো পুরুষশাসিত মন-মানসিকতা থেকে বেরোতে পারছে না। একজন পুরুষ যখন তার প্রভাব খাটাতে চায় তখন অত্মনির্ভরশীল, আত্মপ্রত্যয়ী শিক্ষিত নারী এর প্রতিবাদ করবেই। আর সেটি যখন পুরুষটি মেনে নিতে পারে না তখনই পরিণতি পায় ডিভোর্সে। আর সমস্ত দোষ তখন অর্পিত হয় শিক্ষা ও শিক্ষিত নারীর ওপর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘বর্তমানে মেয়েরা অনেক বেশি স্বাধীন, শিক্ষিত, আত্মপ্রত্যয়ী হচ্ছে যার কারণে ডিভোর্স বাড়ছে। আগে মেয়েরা কষ্ট করে হলেও সংগ্রাম করে স্বামী সংসারে টিকে থাকতে চাইত। এখন নারী নির্যাতনের শিকার হলে সেটা মেনে নিচ্ছে না’।
আর এজন্যেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী নারীদের ডিভোর্স দেওয়ার সংখ্যাই বেশি। সেক্ষেত্রে কী নারীশিক্ষা রোধকেই এর সমাধান হিসেবে গ্রহণ করা উচিত? সমাজ কী সেক্ষেত্রে এগুতে পারবে? নারীশিক্ষাকে বাধাগ্রস্ত না করে বরং এটা করাই সমীচীন হবে যে সমাজের সকলের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। নারীকে ছোটো করে না দেখে বরং যোগ্যতার দিক থেকে সমান মনে করতে হবে। একটি দুই চাকা বিশিষ্ট গাড়ির ডান পাশের ও বাম পাশের চাকার মধ্যে ভারসাম্য না থাকলে সেটি দুর্ঘটনার কবলে পড়বেই। সমাজ সে রকমই একটি গতিশীল চাকা বিশিষ্ট গাড়ি, যার সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য নারী-পুরুষ উভয়েরই যোগ্যতার ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনয়ন প্রয়োজন।
লেখক : শায়লা ইসলাম নীপা, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।