নাশকতায় জড়িত ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে- এমন সন্দেহের যুক্তিসঙ্গত কারণ পেলেই কোনো সরকারি কর্মচারীকে চাকরি থেকে অপসারণ করতে পারবে সরকার। এ ছাড়া কোনো সরকারি কর্মচারীর ছেলেমেয়ে বা তার ওপর নির্ভরশীল কোনো ব্যক্তি অবৈধ সম্পদের মালিক হলে সেসবের দায়ও নিতে হবে তাকে। এজন্য তার বিরুদ্ধে সরকার বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে। এ অপরাধেও সরকার তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে পারবে। এমন বিধান রেখে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ প্রণয়ন করেছে সরকার। ১৮ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ বিধিমালার গেজেট জারি করা হয়েছে। নতুন বিধিমালা শুধু সিভিল প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য হবে।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান দৈনিকশিক্ষাকে বলেন, বিদ্যমান বিধিমালাকে আরও সুস্পষ্ট করে নতুন বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে কিছু ধারা সংযোজন করা হয়েছে। অপরাধের ধরন অনুযায়ী শাস্তির বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। আগের বিধিমালায় কিছু কিছু অপরাধের বিষয়ে কিছু বলা ছিল না। নতুন বিধিমালায় অপরাধের শাস্তি ও অভিযুক্ত ব্যক্তির অভিযোগের তদন্ত কীভাবে হবে তার উল্লেখ রয়েছে।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে নাশকতার সঙ্গে সরাসরি অথবা নাশকতায় যুক্ত কারও সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তাকে ছুটি দিয়ে কর্মস্থল ত্যাগের সুযোগ দেওয়া হবে। অর্থাৎ বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হবে। কারণ তাকে চাকরিতে বহাল রাখা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এ ছাড়া কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে নাশকতায় জড়িত কিংবা নাশকতাকারী কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে- এমন সন্দেহের যুক্তিসঙ্গত কারণ পাওয়া গেলে তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হবে। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তি চাইলে আত্মপক্ষ সমর্থন করে অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে পারবেন। কিন্তু অভিযুক্ত ব্যক্তিকে এ ধরনের সুযোগ দেওয়া রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি- রাষ্ট্রপতি এ রকম মনে করলে কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই তার বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারবে।
বিধিমালায় আরও বলা হয়েছে, বিনা অনুমতিতে কোনো সরকারি কর্মচারী ৬০ দিন কর্মস্থলে ধারাবাহিকভাবে অনুপস্থিত থাকলে, বিনা অনুমতিতে দেশ ত্যাগ করলে বা ৩০ দিনের বেশি বিদেশে অবস্থান করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। সেক্ষেত্রে তাকে বিভাগীয় মামলার মুখোমুখি হতে হবে। অনুপস্থিতির নির্দিষ্ট কারণ জানাতে না পারলে, কর্তৃপক্ষ চাইলে তাকে চাকরি থেকে সরিয়ে দিতে পারবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘ যাচাই-বাছাই শেষে শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে তা তদন্তে তিনজন গেজেটেড কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। অভিযুক্তকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। তবে কোনো ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি যদি দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে না চান, তাহলে তাকে তা দেওয়া হবে না। তদন্ত কমিটি যে ধরনের দণ্ডের সুপারিশ করবেন, তাই কার্যকর করা হবে। তিনি বলেন, বিধিমালায় কর্মচারীদের খুশিমতো অফিসে আসা-যাওয়া বন্ধে একটি বিশেষ বিধান রয়েছে। এ ছাড়া কর্মচারীদের বিনা নোটিশে অফিসে অনুপস্থিতির জন্য থাকছে বেতন কাটার নিয়ম।
জানা যায়, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা রেল কর্মচারী, মেট্রোপলিটন পুলিশের অধস্তন কর্মচারী, অন্য কোনো পুলিশ বাহিনীর পরিদর্শকের নিম্ন পদমর্যাদার কর্মচারী, বডার গার্ড বাংলাদেশ ও জেল কর্মচারীর ক্ষেত্রে কার্যকর হবে না। কারণ তাদের আলাদা শৃঙ্খলা বিধিমালা রয়েছে। এটি শুধু সিভিল প্রশাসনের কর্মচারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। এই বিধিমালা আদেশ জারির তারিখ থেকে কার্যকর হবে। ভূতাপেক্ষভাবে কার্যকারিতা দেখিয়ে কোনো আদেশ জারি করা যাবে না। তবে চাকরি থেকে নিরুদ্দেশের ক্ষেত্রে আরোপিত দণ্ড নিরুদ্দেশের তারিখ থেকে কার্যকর হবে। এই বিধিমালা কার্যকরের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল ১৯৮৫ বাতিল বলে গণ্য হবে।
বিধিমালায় কর্মচারীদের অপরাধের বিষয়ে বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারী শিষ্টাচারবহির্ভূত কোনো কাজ করতে পারবে না। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আইনসঙ্গত আদেশ অমান্য করা যাবে না। কর্তব্যকর্মে অবহেলা করা যাবে না। আইন, আদেশ, পরিপত্র সঙ্গত কারণ ছাড়া অবজ্ঞা করা যাবে না। এগুলো অমান্য করলে ওই কর্মচারীর বিরুদ্ধে দণ্ড আরোপ করা যাবে। এই বিধিমালার অধীনে সবাই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে বিবেচিত। তাই কোনো কর্মচারী যেখানে যেভাবেই কর্মরত থাকুক না কেন, তার ওপর এই বিধিমালার দণ্ড আরোপ হবে।
বিধিমালায় আরও বলা হয়েছে, কোনো অভিযুক্ত কর্মচারী ফৌজদারি অপরাধে সাজা পেয়ে চাকরি থেকে বরখাস্ত, অপসারিত অথবা পদবনমিত হয়ে থাকলে তাকে কারণ দর্শানোর সুযোগ দেওয়া হবে না। বিধিমালায় শারীরিক ও মানসিক অসামর্থ্যের জন্যও সরকারি কর্মচারীকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। তবে সিভিল সার্জনের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কেউ মেডিকেল বোর্ডের কাছে পরীক্ষার জন্য উপস্থিত হতে অস্বীকার করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ ধরনের ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মামলা করা হবে। কোনো সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে আদালতে বিচারাধীন মামলা থাকা অবস্থায় বিভাগীয় মামলার বিষয়ে বিধিমালায় বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে বিভাগীয় মামলা নিষ্পত্তিতে কোনো বাধা থাকবে না।