দূতাবাস থেকে ভিসা প্রত্যাখ্যান হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসায় যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) চার শিক্ষার্থীর একটি দলের। শুক্রবার (১৩ জুলাই) বিকেলে সাস্ট অলীক নামে ওই দলের দলনেতা আবু সাবিক মাহদি এ তথ্য জানিয়েছেন।
নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতা-২০১৮-এর বেস্ট ইউস অব ডেটা ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল দলটি। এরপর দলের সব সদস্যকে আমন্ত্রণ জানায় নাসা। আমন্ত্রণ পাওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন
জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের ছাত্র আবু সাবিক মাহদি ও কাজী মইনুল ইসলাম, একই বিভাগের সাব্বির হাসান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এসএম রাফি আদনান এবং অলীক দলের তত্ত্বাবধায়ক কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী।
মাহদি জানান, গত ২৯ মে ও ১২ জুন দুটি আলাদা ই-মেইলের মাধ্যমে তাদের আমন্ত্রণ জানায় নাসা এবং ২১ জুন নাসা থেকে প্রত্যেক সদস্যের নাম উল্লেখ করে আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছিল। আমন্ত্রণপত্র পেয়ে তারা ১ জুলাই ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করেন। ভিসার জন্য তারা সাক্ষাৎকার দেন গত বৃহস্পতিবার। পরে তাদের ভিসা আইএন-এর ২১৪ (বি) ধারায় প্রত্যাখ্যান করে দূতাবাস।
মাহদি বলেন, ভিসা প্রত্যাখ্যান করায় নাসার আমন্ত্রণে অংশগ্রহণ করা পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অথচ হোটেল বুকিং থেকে শুরু করে নাসায় যাওয়ার সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। সব খরচ বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগ বহন করছে।
তিনি আরও জানান, নাসার আমন্ত্রণ রক্ষা করতে হলে ২০ জুলাইয়ের মধ্যে তাদের নাসাতে উপস্থিত হতে হবে। সেখানে ২১, ২২ ও ২৩ জুলাই নাসার বিভিন্ন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। ২১ জুলাই রকেট ফ্যালকন-৯-এর সিআরএস-১৮ মিশনের মহাকাশে উৎক্ষেপণ এবং ২২ ও ২৩ জুলাই অন্যান্য কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
শাবি দলের তত্ত্বাবধায়ক বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী বলেন, নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা অবশ্যই দেশের জন্য গর্বের। আমন্ত্রণ পাওয়া সত্ত্বেও ভিসা-সংক্রান্ত জটিলতায় সেখানে যাওয়া এখন প্রায় অনিশ্চিত। এ রকম একটি প্রতিযোগিতায় দেশ থেকে একটি দল প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়ে যদি সেখানে অংশ নিতে পারে তাহলে ভবিষ্যতে তরুণরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। তাদের স্বপ্ন দেখার পরিধি অনেক ছোট হয়ে যাবে। এ সব বিষয়ে সরকার এবং দেশে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের উচিত এই তরুণ মেধাবীদের পাসে এসে দাঁড়ানো এবং তাদের সর্বাত্মকভাবে সাহায্য করা।
শাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এ ব্যাপারে বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক। তারা এতো কষ্ট করে সারা বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এখানে গেছে। নাসা তাদের আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছে, তাদের অন্যান্য দিক দিয়ে সাপোর্টও দিচ্ছে, তারপরও ভিসা না দেওয়া দুঃখজনক। তিনি আরও বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পিএসের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আবারও আবেদন করতে বলেছেন, তবে ভিসার জন্য সাক্ষাৎকারের সময়তো পাওয়া যাবে না। উপাচার্য বলেন, বিষয়টি নিয়ে খুবই আশা ছিল, স্বপ্ন ছিল। গত কয়েক দিন আগে প্রধানমন্ত্রীর সামনে বলেছিলাম, তারা নাসায় যাচ্ছে। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করবেন বলে জানান উপাচার্য।
নাসার বিভিন্ন গবেষণার তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে 'লুনার ভিআর' নামে একটি অ্যাপ তৈরি করে শাবির দলটি। অ্যাপটির মাধ্যমে নাসার অ্যাপোলো-১১ অভিযান, মহাকাশযানটির অবতরণ এলাকা, চাঁদ থেকে সূর্যগ্রহণ দেখা ও চাঁদকে একটি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি আবর্তন করা যায়।
এর আগে ইন্টারন্যাশনাল কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং কনটেস্ট-২০১৮ (আইসিপিসি) ঢাকা আসরে বুয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল শাবির দল 'সাস্ট ডেসিফ্রেডর'। পরে আইসিপিসির চূড়ান্ত পর্ব পর্তুগালের ইউনিভার্সিটি অব পোর্টোতে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে চূড়ান্ত পর্বের প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য ভিসার আবেদন করলে তা বাতিল হয়ে যায়। পরে শেষ মুহূর্তে তাদের ভিসা হয় এবং তারা চূড়ান্ত পর্বে অংশ নেয়।