নিঃসন্তান দম্পতিও তুলছে শিক্ষা সহায়ক ভাতা - দৈনিকশিক্ষা

নিঃসন্তান দম্পতিও তুলছে শিক্ষা সহায়ক ভাতা

যশোর প্রতিনিধি |

যশোরের চৌগাছার মাধবপুর উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (নতুন সরকারিকরণকৃত) সহকারী শিক্ষক হারুন অর রশীদ এবং তার স্ত্রী দু’জনই সম্প্রতি সরকারিকরণকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। মধ্যবয়সী এই দম্পতি নিঃসন্তান। কিন্তু সন্তান না হলে কি সন্তান লালনের জন্য সরকারের দেয়া শিক্ষা সহায়ক ভাতার ৫০০ টাকা না নিয়ে বঞ্চিত থাকবেন! ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাস থেকে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে শিক্ষা সহায়ক ভাতা তুলে নিচ্ছেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসে গিয়ে ঘটনার সত্যতা জানার পর জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা নিঃসন্তান দম্পতি। আমার ভাইয়ের মেয়েকে নিজের মেয়ে হিসেবে লালন-পালন করছি। সে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তার কাগজপত্র শিক্ষা অফিসে জমা দিয়েছিলাম। সেই হিসেবে শিক্ষা সহায়তা ভাতা পাই।

এটা অন্যায় হলে আর নেবো না। হারুন অর রশীদ দাবি করেন তিনি একা নন। এমন অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকাই আছেন যাদের সন্তান না থাকলেও তারা শিক্ষা সহায়তা ভাতা নিচ্ছেন। 
এদিকে উপজেলার বকসীপুর সরকারি (নতুন সরকারিকরণকৃত) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জয়নুর রহমান ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে একটি বাড়তি ইনক্রিমেন্ট নিচ্ছেন। সর্বশেষ আগস্ট মাসেও তিনি এই বাড়তি ইনক্রিমেন্ট নিয়েছেন বলে বেতন শিটে দেখা গেছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসে গিয়ে তার সার্ভিস বুক যাচাই করে এর সত্যতা মিলেছে। সার্ভিস বুকে দেখা গেছে ১ জুলাই তার মূল বেতন ১৭ হাজার ৬২০ টাকা অব্যাহত আছে। তৃতীয় টাইম স্কেল অনুযায়ী যা হওয়ার কথা ১৬ হাজার ৭৮০ টাকা। অর্থাৎ সমপর্যায়ের অন্য শিক্ষক থেকে তিনি প্রতি মাসে ১ হাজার ৭২৬ টাকা বেশি উত্তোলন করছেন। তার সার্ভিস বুকে দেখা গেছে দুটি ফিক্সেশন করা আছে। প্রথমটি অনুযায়ী তিনি একটি ইনক্রিমেন্ট বেশি নিচ্ছেন। এরপরে সার্ভিসবুকে রিভাইজ ফিক্সেশন করা আছে এবং সেখানে তিনি বর্তমানে ১৬ হাজার ৭৮০ টাকা মূল বেতন পাবেন বলা থাকলেও সেটি না মেনে পুরনো ফিক্সেশনে তার বেতন পাওয়ায় উপজেলা শিক্ষা অফিসের গাফিলতি প্রমাণিত হয়।

প্রায় তিন বছর যাবৎ তিনি এই ইনক্রিমেন্ট বেশি নিচ্ছেন। জানতে চাইলে জয়নুর রহমান বলেন হিসাব রক্ষণ অফিসের ভুলে একটি ইনক্রিমেন্ট বেশি পাচ্ছি। এই ভুল শুধু আমার নয়, খোঁজ নিলে দেখা যাবে আরো অনেকেই বেশি ইনক্রিমেন্ট নিচ্ছেন। তিনি আরো বলেন কয়েকজন শিক্ষক নিঃসন্তান হওয়ার পরও শিক্ষা সহায়তা বিল নিচ্ছেন। তিনি বলেন, আমার যেহেতু ভুল হয়ে গেছে। দ্রুত অফিসে গিয়ে সংশোধন করে নেবো। শুধু নিঃসন্তান দম্পতির শিক্ষা সহায়তা ভাতা বা ইনক্রিমেন্ট বেশি দেয়াতেই থেমে নেই উপজেলা শিক্ষা অফিসের দুর্নীতি। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন এই অফিসে চলতি দায়িত্বে কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ।

এরপর থেকেই অফিসটি দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে উপজেলার পিইডিপি-৩ প্রকল্পের আওতায় ১১৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি করে ল্যাপটপ প্রদান করা হয়। রাণীয়ালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আশরাফুন্নেছাকে দিয়ে প্রাপ্তি স্বাক্ষর শিটে স্বাক্ষর করানোর পর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন সেটি রেখে দেন। তিনি সেটি তার ছেলেকে দিয়েছেন ব্যবহারের জন্য। আশরাফুন্নেছাকে বলেন বিষয়টি কাউকে বলার দরকার নেই। এছাড়া জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ থাকার পরও তিনি শিক্ষক প্রতি ২শ’ টাকা করেছেন। যে সকল শিক্ষকরা এই চাঁদার টাকা দিতে চাননি। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার হুমকি দিয়েছেন। জুলাই মাসে শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্ট পাওয়ার সময়ে একজনের সার্ভিস বুকের মধ্যে অন্যজনের কাগজপত্র রেখে শিক্ষকদের কাছ থেকে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের যশোর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক বরাবর একটি অভিযোগে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।


এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন (চলতি দায়িত্ব) বলেন, কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে শিক্ষা সহায়তা ভাতা ছাড় করা হয়। হারুন অর রশীদ নিঃসন্তান। তবুও শিক্ষা সহায়তা ভাতা তুলছেন অভিযোগ পেলাম। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো। এছাড়া বাড়তি ইনক্রিমেন্ট দেয়ায় জয়নুরকে টাকা ফেরত দিতে চিঠি দেয়া হয়েছে। ১১৭টি ল্যাপটপ বিতরণ করা হয়েছে। রাণীয়ালি স্কুলেও ল্যাপটপ দেয়া হয়েছে। আত্মসাতের অভিযোগ সঠিক নয়। এছাড়া শিক্ষা সপ্তাহে কোনো চাঁদাবাজি করা হয়নি। ক্লাস্টার ভিত্তিক শিক্ষকরা চাঁদা তুলে অনুষ্ঠান করেছে। কারো সঙ্গে কোনো জোর করা হয়নি।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম বলেন, তদন্তে দুর্নীতির প্রমাণ পেলে জড়িত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040888786315918