নিউজিল্যান্ডে এক কিশোর (টিনএজ) স্কুলছাত্রের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। ওই কিশোরের পরিবার জানিয়েছে, ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে তার ওপর ভয়ানক নিপীড়ন চালানো হয়েছে। এ কারণে তাদের ছেলেটি গত সপ্তাহে আত্মহত্যার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। এ সমস্যা থেকে উত্তরনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে তার পরিবার।
১৪ বছর বয়সী ওই মুসলিম কিশোরটিকে গত সোমবার সন্ধ্যায় বাবা-মা অকল্যান্ডের হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। ছেলেটি ওই হাসপাতালে তিনদিন নিবিড় তত্ত্বাবধানে ছিল। এখন সে পরিবারের পরিচর্যায় বাড়িতে অবস্থান করছে। একজন পারিবারিক মুখপাত্রের মাধ্যমে তার বাবা-মা জানিয়েছেন, বাইরের কোনো ধরনেরসহায়তা ছাড়া তাদের সন্তানের পরিচর্যায় তারা অসহায় বোধ করছেন।
ওই মুখপাত্র জানান, এই পরিচর্যা করতে গিয়ে তারা অবসাদগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি চাপ অনুভব করছেন। ছেলটির অবস্থাও তথৈবচ। তাকে সেই বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে যেখানে সে আত্মহননের প্রচেষ্টা চালিয়েছিল।
তিনি জানান, ছেলেটি এখনো সুস্থ হয়নি। তারা তাকে (বাবা-মা) নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন অবস্থায় রয়েছেন।
জানা গেছে, ওই কিশোর অকল্যান্ড সেকেন্ডারি স্কুলে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু গত বছরের শেষের মাসগুলো থেকে এখন পর্যন্ত সে স্কুলে অনুপস্থিত রয়েছে। কারণ, সে বলছে, তার ওপর নিপীড়নের মাত্রা বেড়ে গেছে। বিকল্প মাধ্যমে সে শিক্ষা গ্রহণ করা শুরু করেছে। তবে স্কুলটির নাম জানাননি ওই পারিবারিক মুখপাত্র।
পরিবারের ওই মুখপাত্র জানান, গত বছরের শেষের দিকে নিপীড়নের মাত্রা বেড়ে গিয়েছিল। এবং ছেলেটি 'নিজেকে রক্ষা করতে' স্কুলে ছুরি নিয়ে যেত।
তিনি জানান, এক চিঠিতে ছেলেটি বলেছে, স্কুলে তাকে প্রহার করা হয়েছে। 'টেক্সট মেসেজ' এবং ফোনের মাধ্যমে তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। আইএসআইএস এবং সন্ত্রাসীসহ বিভিন্ন উপনামে তাকে ডাকা হচ্ছে।
ওই মুখপাত্র জানান, কিছু ছেলে তার (কিশোরটির) গলায় ছুরি রেখে হুমকি দিয়েছে।
তিনি জানিয়েছেন, ছেলেটিকে হত্যা করার হুমকি দিয়েছিল অন্য ছাত্ররা। তাকে হুমকি দিয়ে নিয়মিত 'টেক্সট মেসেজ' এবং ফোনকল পাঠিয়েছিল তারা।
এ কারণে ভয়ানক মানসিক চাপের মধ্যে ছিল ছেলেটি।
তিনি জানান, ছেলেটি ওই ছাত্রদের নম্বরগুলো ব্লক করে দিয়েছে। সে এখন একজন জেনারেল ফিজিসিয়ান (জিপি) এবং মনোবিজ্ঞানীর চিকিৎসাধীন রয়েছে।
মুখপাত্রটি বলছেন, ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দিয়েছিল ছেলেটি। ছেলেটি একটি ই-মেল বার্তায় বন্ধুদেরকে বলেছিল, সে আত্মহত্যা করার কথা ভাবছে।
তিনি বলেন, ছেলেটির আত্মহত্যার পরিকল্পনার বিষয়টি তার বন্ধুরা স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়।
তিনি জানান, কিন্তু স্কুল যে কাজটি করেছিল তা খুবই হতাশাজনক। তার পিতামাতাকে একটি সভায় ডেকে আনা হয়। এরপর স্কুল থেকে তাদের ছেলেকে বাড়ি নিয়ে যেতে বলা হয়।
মুখপাত্র জানান, এই ছেলেটিকে সাহায্য করতে তার পরিবার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারা এ বিষয়ে অন্যদের খুব একটা সমর্থন পায়নি।
তিনি বলেন, ছেলেটির পরিবারের ভাষাগত দক্ষতা কম। তারা নিউজিল্যান্ডে তাদের অধিকার সম্পর্কে অনেক কিছুই অবগত নয়। এ কারণে তারা স্কুলটির উপর ওই বিষয়ে নির্ভর করেছিল।
এদিকে, স্কুলটির প্রিন্সিপাল মন্তব্য করেন, ছাত্রদের নিজস্ব বিষয়ে স্কুল কোনো মন্তব্য করতে পারে না। তবে নিপীড়ন গ্রহণযোগ্যস নয়।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও কল্যাণ শীর্ষ অগ্রাধিকার। যেকোনো ধরনের পীড়ন অগ্রহণযোগ্য। আমরা স্কুলে ইতিবাচক পরিবেশ তৈরির জন্য কঠোর পরিশ্রম করি।
অন্যদিকে, নিউজিল্যান্ডের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ক্যাটরিনা ক্যাসি জানিয়েছেন, ১১ ফেব্রুয়ারি ছেলেটির পরিবারের পক্ষ থেকে ওই নিপীড়নের বিষয়ে অভিযোগপত্র পেয়েছেন তিনি।
তিনি বলছেন, আমরা ওই বিষয়ে আলোচনা করতে স্কুলের সাথে কাজ করেছি।
তিনি মন্তব্য করেন, প্রতিটি শিশু এবং তরুণের জন্য স্কুলের পরিবেশ নিরাপদ হওয়া দরকার। আমরা প্রত্যাশা করি, প্রতিটি স্কুল এমন একটি সংস্কৃতিবলয় তৈরি করবে যা ইতিবাচক আচরণ চর্চা করবে।
সূত্র : নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড