নিজ বিদ্যালয়ে পরীক্ষার আসন না দেয়ার সরকারি নির্দেশনা অমান্য করেই ঢাকার দোহার উপজেলার মালিকান্দা মেঘুলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের আসন দেয়া হয়েছে। নিজ প্রতিষ্ঠানেই তারা পরীক্ষা দেবে। অথচ নকল ও অসদুপায় অবলম্বন ঠেকাতে প্রায় দুই যুগ আগে থেকে নিজ প্রতিষ্ঠানে আসন না দেয়ার বিধান চালু রয়েছে। এ নিয়ে উপজেলার অন্যান্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। দৈনিক শিক্ষার কাছে তারা লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে মেঘুলা কলেজ কর্তৃপক্ষ এমন অবৈধ কাজটি গত দুই বছর ধরে করে আসছেন। স্কুলটির প্রধান হলেন কেন্দ্র সচিব। তার নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অবৈধ সুবিধা পাইয়ে দিয়ে ভালো ফলাফল করার পরিকল্পনা তাদের। কেন্দ্র সচিবের বলেন, স্কুলটির ক্যাম্পাসেই একটি কলেজ ভবনে এসএসসি পরীক্ষা দেবে তারা। কক্ষ পরিদর্শক থাকবেন অন্য স্কুলের শিক্ষকরা। এতে স্বজনপ্রীতির সুযোগ থাকবে না।
তবে, পরীক্ষা সংশ্লিষ্টদের দাবি, মেঘুলা ছাড়া অন্যত্র কেন্দ্র করলে অধীনস্ত কেন্দ্রে সময়মতো প্রশ্ন পৌঁছানো যায় না। সকাল সাড়ে নয়টায় এসএমএস পাওয়ার পর প্রশ্নের প্যাকেট খুলে প্রশ্ন নিয়ে ভেন্যু কেন্দ্রে যেতে পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়। পরে পরীক্ষার সময় বাড়াতে হয়। এমন ঝামেলা এড়াতে একই কেন্দ্রে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। এতে স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুমোদন রয়েছে।
ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম আমিরুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কেন্দ্র ও ভেন্যু কেন্দ্র হয়ে থাকে। এতে বোর্ডের কোনও ভূমিকা থাকে না।
আগামীকাল ৩রা ফেব্রুয়ারি সারা দেশে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হবে। ইতোমধ্যে পরীক্ষার্থীদের জন্য কেন্দ্র নির্ধারণ সম্পন্ন হয়েছে।
অভিভাবকরা জানান, এসএসসি পরীক্ষার রুটিনে ৯নং নির্দেশনায় স্পষ্ট লেখা রয়েছে, কোনো পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা (সৃজনশীল বা রচনামূলক, তত্ত্বীয়), বহুনির্বাচনী ও ব্যবহারিক নিজ বিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হবে না। ‘পরীক্ষার্থীদের স্থানান্তরের মাধ্যমে আসন বিন্যাস করতে হবে।’ কিন্তু এ নির্দেশনা অমান্য করে মালিকান্দা মেঘুলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের আসন ওই প্রতিষ্ঠানের কলেজ ভবনে রাখা হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, মালিকান্দা মেঘুলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের বিশেষ সুবিধা দেয়ার জন্যই কেন্দ্রসচিব এমন অনিয়ম করেছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ অন্য স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
এ বিষয়ে মালিকান্দা মেঘুলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অজয় কুমার রায় বলেন, আমার স্কুলের শিক্ষার্থীদের সিট কলেজ বিল্ডিংয়ে পড়েছে। কলেজ বিল্ডিংয়ে আলাদা ভেন্যু করা হয়েছে। ক্যাম্পাস এক হলেও ভেন্যু আলাদা এতে কোনো সমস্যা নেই। আমরা তো আর ওই কেন্দ্রের দায়িত্ব পালন করবো না। ওই কেন্দ্রের দায়িত্ব পালন করবে কবি নজরুল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
কবি নজরুল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, সরকারি নির্দেশনা রয়েছে নিজ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সিট ফেলা যাবে না। কিন্তু মালিকান্দা মেঘুলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ক্ষেত্রে এ নির্দেশনা মানা হয়নি। কেন্দ্র দুটি হলেও ক্যাম্পাস একটি। তাই ওই কেন্দ্রের শিক্ষার্থীরা আলাদা সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করবে। আমার জন্য বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং।