আমাদের দেশে এমন কিছু প্রতিষ্ঠান আছে, যেগুলোর প্রচুর নামডাক কিন্তু সে অনুযায়ী কাজ পাওয়া যায় না তাদের কাছে। এমনই একটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে একটি সঠিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য গঠন করা হয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু সাফল্যের দ্বারে পৌছতে পারেনি। কেননা সীমাহীন দুর্নীতি, জালসনদ বিক্রিসহ বিভিন্ন কারণে প্রতিষ্ঠানটি অনেক দুর্নাম কুড়িয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি সঠিকভাবে কাজ করলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মুখ থুবড়ে পড়ত না। দেশের প্রায় প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের পদশূন্য রয়েছে। যার ফলে নিয়মিত শিক্ষাদান ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষকের অভাব হলে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা কোনোভাবেই সঠিকভাবে চলতে পারে না। এ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। কয়েক লাখ নিবন্ধনধারী বেকার জীবনযাপন করছে। শেষ আশা হিসেবে অনেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন শিক্ষক হওয়ার। কিন্তু আদৌ আশা পূরণ হবে কি?
২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ২২ অক্টোবর হতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মাত্র কয়েক হাজার নিবন্ধিতকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল যেখানে ছিল হ-য-ব-র-ল অবস্থা। বর্তমান যুগকে ডিজিটাল যুগ হিসেবে ধরা হচ্ছে অথচ কম্পিউটার (আইসিটি) শিক্ষক নিবন্ধিতরা নিয়মানুযায়ী আবেদন করেও গত তিনবছর অতিবাহিত হওয়ার পরও ফলাফল প্রকাশ পায়নি। কম্পিউটার নিবন্ধিত বেকাররা কর্তৃপক্ষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ফলাফল না পেয়ে আদালতে রিট করে। আদালত তাদের পক্ষে রায় দিলেও কর্তৃপক্ষ অজানা কারণে তাদের নিয়োগ দিচ্ছেন না। বেকারদের বোবাকান্না দেখার যেন কেউ নেই।
চূড়ান্তভাবে প্রিলিমিনারী, লিখিত ও ভাইভা পাস করেও নিয়োগ হয় না, এমন ঘটনা বিরল। কিন্তু ত্রয়োদশ নিবন্ধনধারীদের কপালে এমনই হয়েছে। গেজেট ও পরিপত্র অনুযায়ী শূন্যপদে ত্রয়োদশ নিবন্ধনধারীদের এখনও নিয়োগ হয়নি। ভাইভা পাশ করার পর তাদের বাবা-মা ও আত্মীয়স্বজন অনেক খুশি হয়েছিল। কিন্তু আশা হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছে।
১-১২তম শিক্ষক নিবন্ধিতরা নিয়োগের আশায় আদালতে প্রায় ২০০টি রিট দায়ের করেন। ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ডিসেম্বর ১৬৬টি রিটের রায় দেয় আদালত যেখানে নির্দেশনা ছিল যে ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয়ভাবে মেধাতালিকা করে নিয়োগ দেওয়ার জন্য। কিন্তু দিন যায়, মাস যায়, নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি আসে না। আর কত দেরি? আর কত গড়িমসি করবে এনটিআরসিএ? শিক্ষামন্ত্রণালয় কেন কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না? এমন হাজারো প্রশ্ন বেকার শিক্ষক নিবন্ধিতদের মাথায় বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে। দ্রুত গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মেধাবী নিবন্ধিতদের নিয়োগ দেওয়া হলে শিক্ষাক্ষেত্রে আসবে সাফল্যের বন্যা, এমনই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক : সহকারী শিক্ষক, মমিনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধনবাড়ী, টাঙ্গাইল।
[ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন ]