নিরব যন্ত্রণার ‘উত্ত্যক্ত’ কখনো রক্তাক্ত - দৈনিকশিক্ষা

নিরব যন্ত্রণার ‘উত্ত্যক্ত’ কখনো রক্তাক্ত

শাহিনুল আশিক |

বাংলাদেশে নারীদের উত্যক্ত করা যেন একটি সামাজিক ব্যাধি৷ উত্যক্তকারীরা হয়ে উঠছে বেপরোয়া৷ এসবের শিকার হওয়া নারীর জন্য থাকে শুধুই নীরব যন্ত্রণা। বেশিরভাগ সময়ে মান-সম্মানের ভয়ে চুপ থাকেন তারা। সেই যন্ত্রণা সহ্যের বাঁধ অতিক্রম করলে জন্ম নেয় প্রতিবাদ। আবার সেই প্রতিবাদও প্রভাবশীদের ভয়ে অনেক ক্ষীণ হয়ে আসতে বাধ্য হয় কিংবা একেবারে হারিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, প্রতিবাদের পরিণতি কখনো বা  হয় রক্তাক্ত।

সম্প্রতি রাজশাহীতে স্কুল-কলেজ ছাত্রীদের উত্ত্যক্তের ঘটনা বাড়ছে। ইতোমধ্যেই কয়েকটি ঘটনা আলোচনায় এসেছে। যা  ভয়াবহ। এমন ঘটনায় গত বছরের ৩০ নভেম্বর নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজে অশালীন আচরণের জন্যে এক ছাত্রকে চড়-থাপ্পর দেয় দুজন ছাত্রী। এছাড়া রাজশাহীর বাঘায় এমন ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটেছে হত্যাকাণ্ডের মত ঘটনাও।

চলতি বছরে গত কয়েক দিনে রাজশাহীর বাঘা, চারঘাট ও মোহনপুরে নারী উত্যক্তের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে বাঘায় একজন খুন হয়। এছাড়া চারঘাটে ছাত্রের ছয় মাসের কারাদণ্ড হয়। এ ছাড়া মোহনপুরে ছাত্রলীগ নেতাসহ সাত জন মিলে সর্বমোট ১৪ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।  

নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েক কলেজছাত্রী বলেন, হঠাৎ করেই উত্ত্যক্তের শিকার হতে হয় মেয়েদের। এই পরিস্থিতি অনেক বিব্রতকর। অনেক সময় প্রতিবাদ করার ইচ্ছে থাকলেও সম্মানের ভয়ে নিরবে চলে আসতে হয়।

তারা আরো বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে আশে-পাশে দোকান গড়ে উঠেছে। সেই দোকানগুলোতে বসে থাকে বখাটেরা। সেখান থেকেই বেশি উত্ত্যক্ত করা হয় স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের। এছাড়াও রাস্তায় চলতিপথে উত্ত্যক্তের শিকার হয় ছাত্রীরা। মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়ার সময় অশালীন মন্তব্য করে চলে যায় বখাটেরা। তাদের তো ধরা বা কিছু বলা যায়না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে পুলিশি কার্যক্রমের ভূমিকা অনেক জরুরি। রাস্তায় পুলিশের টহল বাড়ানো হলে বখাটেরা ধরা পড়বে বলে মনে করেন এই শিক্ষার্থীরা।    

গত ১৪ জানুয়ারি রাজশাহীর বাঘায় উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় স্কুলছাত্রীর মামা নাজমুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। প্রধান আসামি সুমন আলীসহ ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন, নিহত নাজমুলের বাবা আজিজুর রহমান।

এই ঘটনার পরে থেকে খানপুর জেপি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জনসহ বিক্ষোভ মানববন্ধন ছাড়াও নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে।
বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, প্রধান আসামি সুমনসহ বেশ কয়েকজন পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।  

গত ১৬ জানুয়ারি মোহনপুরে স্কুলছাত্রীকে উক্ত্যক্ত করার দায়ে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতিসহ ৭ জনকে  গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই স্কুলছাত্রী দশম শ্রেণিতে পড়ে। গত তিন থেকে চার মাস ধরে আসামি হোসাইন বিভিন্নভাবে প্রেম নিবেদনসহ কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। ঘটনার দিন বিদ্যালয়ের মাঠে পাশে ওই ছাত্রীকে ধরে হোসাইন কু-প্রস্তাব দেয়। এছাড়া তার সহযোগীরা অকথ্য ভাষায় কথা বলে। এক পর্যায়ে তারা ওই স্কুলছাত্রীর হাত ধরে টানাটানিও করে।

মোহনপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, এই ঘটনায় ওই স্কুলছাত্রীর বাবা রাতে বাদি হয়ে সাত জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

গতকাল ১৮ জানুয়ারি শনিবার চারঘাটে ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করায় ছাত্রকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রামম্যাণ আদালত। সন্ধ্যায় চারঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দণ্ডপ্রাপ্ত হলেন, তারেক হোসেন। তিনি বাঘা শাহদৌলা সরকারি কলেজের ১ম বর্ষের ছাত্র।

জানা গেছে, উপজেলার সরদহ সরকারি কলেজে অর্নাস ১ম বর্ষের ছাত্রীকে তারেক উত্ত্যক্ত করে আসছিল। কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার সময় চারঘাট বাজারের কাছে তারেক ওই ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করে। ভুক্তভোগি ছাত্রী আশে-পাশের লোকজনকে জানায়। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তারেককে ৬ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেন।

রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ হবিবুর রহমান বলেন, সামাজিক বন্ধন নাজুক। ভয় উঠে গেছে। হারিয়েছে শাস্তির ব্যবস্থাও। এই সব অপরাধে অতিদ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণ মানুষকে সচেতন জরুরি  উল্লেখ করে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার কথাও বলেন তিনি। 

রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ইফতেখায়ের আলম বলেন, আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা জরুরি। কমিউনিটি পুলিশের মাধ্যমে সভা সমাবেশ করা হচ্ছে। এতে মাদক, উত্ত্যক্তকরণ, বাল্য বিয়েসহ নানা বিষয়ে সচেতনামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশেপাশে অযথা ছেলেদের চলাফেরা কমাতে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, প্রতিনিয়ত মেয়েরা উত্ত্যক্তের শিকার হয়। কেউ প্রকাশ করে কেউ চেপে যায়। অনেক সময় মেয়েরা নিজের বা পরিবারের সম্মানের জন্য নিরবে এমন নির্যাতন সহ্য করে।

 

এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0044629573822021