নির্বাচন ছাড়া প্রাথমিক শিক্ষকদের অন্য কোনো কাজে নয় - দৈনিকশিক্ষা

নির্বাচন ছাড়া প্রাথমিক শিক্ষকদের অন্য কোনো কাজে নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক |

নির্বাচনের ভোটগ্রহণ বাদে পাঠদান-বহির্ভূত অন্য সব কাজ থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরত রাখতে ফের চিঠি দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষাদান ছাড়াও যুগ যুগ ধরে প্রাথমিক শিক্ষকদের দিয়ে  ১২/১৪টি সরকারি কাজ করানো হচ্ছে। গত বিশ বছরে প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনগুলোর দাবির মুখে কয়েকটি কাজ থেকে রেহাই দেয়া হয়েছে।

গত বিশ বছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও প্রতিমন্ত্রী এবং সচিবদের কাছে বহুবার দাবি জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের নেতারা। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে খোলাবাজারে চাল বিক্রির দায়িত্ব থেকে বিরত রাখার হচ্ছে। শিক্ষকদের এইসব দাবির বিষয়ে মন্ত্রী, উপদেষ্টারা আশ্বাস আর চিঠি চালাচালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছেন। গত ২৭ জানুয়ারি নতুন করে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের কাছে চিঠি দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের কোনো বাড়তি দায়িত্ব না দিতে অনুরোধ জানিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। বর্তমানে ৬৫ হাজার ৯০২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে সারাদেশে। তিন লাখ ৭৫ হাজার সহকারী শিক্ষক ও ৪২ হাজার প্রধান শিক্ষক রয়েছেন এগুলোতে। প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকা বাকি বিদ্যালয়গুলোতে চলতি দায়িত্ব দিয়ে চালানো হচ্ছে।

সাধারণ প্রাথমিক শিক্ষকরা দৈনিক শিক্ষাকে জানান, প্রতি মাসে ছাত্র হাজিরা খাতায় নাম ওঠানো, শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন উপস্থিতি-অনুপস্থিতি হিসাব সংরক্ষণ, বাড়ি বাড়ি পরিদর্রশন, উপকরণ তৈরি, দৈনিক পাঠ পরিকল্পনা তৈরি, বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারি তথ্য, প্রাথমিক শিক্ষক সমাপনী সার্টিফিকেট লেখা, বছরে তিনটি পরীক্ষা ছাড়াও মডেল টেস্ট, সমাপনী পরীক্ষার নির্ভুল তথ্য পূরণসহ বিশাল কাজ শিক্ষকদের করতে হয়। এর পরও স্কুলের বাইরে নানা ধরনের কাজ করতে গিয়ে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদর আহ্বায়ক ও দৈনিক শিক্ষার সম্পাদকীয় উপদেষ্টা মো: সিদ্দিকুর রহমান বলেন, যুগ যুগ ধরে বিভিন্নধরনের শুমারী সহ ১২/১৪ ধরনের কাজ করাতে বাধ্য করা হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষকদের।  ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রাথমিক শিক্ষকদের দাবির মুখে খোলাবাজারে চালবিক্রির মনিটরিং থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এখনও কমপক্ষে ১২টি কাজ করানো হয় যার সঙ্গে শিক্ষার কোনো সম্পর্ক নেই। এসব কাজে যুক্ত থাকলে শিক্ষাদান ব্যাহত হয়। 

সিদ্দিকুর রহমান বলেন,  ভোটার  তালিকা প্রণয়ন ও  হালনাগাদ করা, ভোটগ্রহণ, শিশু জরিপ, কৃষিশুমারি,  উপবৃত্তি তালিকা প্রণয়ন, শিওরক্যাশের জন্য বাাংকের ‍ফরম পূরণ করিয়ে দেয়া ও টাকা প্রাপ্তিতে সহযোগিতা,  ভিটামিনযুক্ত বিস্কুুট শিশুদের খাওয়ানো ও হিসাব সংরক্ষণ, কাঁচা-পাকা ল্যাট্রিনের হিসাব-তথ্য সংগ্রহ করা, কৃমির ট্যাবলেট, ভিটামিন এ ক্যাপসুলসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া নানা কাজ, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ প্রাথমিকের অনুষ্ঠানে হাজিরা ছাড়াও নানা কাজ শিক্ষকদের দিয়ে করানো হয়।

প্রাথমিক শিক্ষক নেতা জাহিদুর রহমান দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, শিক্ষাবিষয়ক এনজিওর মোর্চার প্রধান রাশেদা কে চৌধুরী ২০০৭-২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে গণশিক্ষা উপদেষ্টা থাকাকালে প্রাথমিক শিক্ষকদের আশ্বাস দিয়েছিলেন পাঠদান বহির্ভূত কাজ থেকে শিক্ষকদের বিরত রাখতে অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে চিঠি দেয়া হবে। 

জাহিদুর রহমান, বলেন, শুনেছি চিঠি দেয়া হয়েছিলো, কিন্তু কোনো সুফল পাইনি। এখনও ১২/১৪ ধরনের কাজ করতে হয়। ইদানিং দেখি কতিপয় সাংবাদিক সেই রাশেদা কে চৌধুরীকে ‘শিক্ষাবিদ’ হিসেবে উপস্থাপন করছেন, তার মতামত প্রকাশ করছেন। কিন্তু এই রাশেদাই ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ব্রাকের হাতে তুলে দেয়ার উদ্যোক্তাদের অন্যতম। সেই সময় শিক্ষক নেতারা তীব্র প্রতিবাদ না করলে আজ দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের ব্রাক এনজিও কর্মকর্তাদের অধীনে কাজ করতে হতো। যেটা ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে পরীক্ষামূলক শুরু করা হয়েছিলো এবং সিলেটের শিক্ষকরাই প্রথম প্রতিবাদ করেন।   

রংপুরের হরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, 'বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষক সংখ্যা চার থেকে পাঁচজন। পাঁচটি শ্রেণিতে ক্লাস নিতে হয় নানা বিষয়ে তাদের। প্রধান শিক্ষককে প্রশাসনিক নানা দায়িত্ব পালনের জন্য উপজেলা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে যেতে হয় প্রায়ই। ক্লাস নিতে হয়। বাকি চার শিক্ষকের মধ্যে যদি কেউ পিটিআই ট্রেনিংয়ে থাকেন, মাতৃত্বকালীন ছুটিতে যান, তবে দুই থেকে তিনজন শিক্ষক দিয়ে পুরো স্কুল চালাতে হয়। ক্লাসরুমে পাঠদানের বাইরেও শিক্ষা-সংক্রান্ত নানা কাজেই শিক্ষকের অনেক সময় দিতে হয়। পরীক্ষা নেওয়া, খাতা দেখা, প্রাথমিক সমাপনী, বিদ্যালয়ের ক্যাচমেন্ট এরিয়া জরিপ, ভর্তিসহ নানা কাজ শিক্ষকদেরই করতে হয়।'

মন্ত্রণালয় সূত্র দৈনিক শিক্ষাকে জানায়, শিক্ষকদের দাবির মুখে গত ২৭ জানুয়ারি সব মন্ত্রণালয়ের সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আধা সরকারি পত্র দিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন। চিঠিতে বলা হয়, শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ৯ মাসব্যাপী সিইনএড প্রশিক্ষণের পরিবর্তে দেড় বছরব্যাপী ডিপিইনএড প্রশিক্ষণ দেওয়ার ফলে শিক্ষকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ প্রশিক্ষণ গ্রহণে ন্যস্ত থাকে।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য নতুন পদ সৃজন ও নতুন শিক্ষক নিয়োগ করা সত্ত্বেও শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত ১ :৩৬। আর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭০ ভাগ মহিলা শিক্ষক। তাদের ছয় মাসব্যাপী মাতৃত্বকালীন ছুটি, প্রশিক্ষণ ইত্যাদির কারণে পদস্থ শিক্ষকদের মধ্যে প্রকৃত শিক্ষক সংখ্যা প্রায়শই কম থাকে। ফলে প্রায় সব শিক্ষককে অতিরিক্ত ক্লাস গ্রহণসহ শিখন কার্যক্রমে অতিরিক্ত সময় নিয়োজিত থাকতে হয়। এর মধ্যেই শিখন বা বিদ্যালয় সম্পৃক্ত নয়, এরূপ সরকারি কার্যক্রম সম্পাদনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ কর্তৃক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। ফলে শিক্ষকদের শিখন কার্যক্রমে পর্যাপ্ত সময় প্রদান ও শিখন মান বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে এবং প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রযাত্রাকে আরও বেগবান করতে শিক্ষকদের শিখন কার্যক্রমে নিয়োজিত থাকার পরিবেশ ও সুযোগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বিদ্যালয় বা শিখন সংশ্নিষ্ট নয়, এরূপ কার্যক্রমে শিক্ষকদের বিরত রাখা প্রয়োজন। এ প্রেক্ষাপটে শুধু নির্বাচন কার্যক্রম ছাড়া অন্যান্য কার্যক্রম থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দায়িত্ব প্রদান না করার বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনাযোগ্য বলে মনে করি। এ ক্ষেত্রে সংশ্নিষ্ট সচিবের ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ কামনা করা হয় এ চিঠিতে।

অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0078608989715576