গাইবান্ধায় নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের রমরমা ব্যবসা চলছে। প্রতিটি গাইড ৪০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের স্থানীয় পুস্তক ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ডোনেশন দিয়ে এ ধরনের বই বাজারজাত করছে এক শ্রেণির প্রকাশনী সংস্থা। ফলে শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশ ঘটছে না। গাইবান্ধার পুস্তক বিক্রয়ের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের রমরমা ব্যবসার চিত্র। এসব গাইডের নাম পাঞ্জেরি, লেকচার, অনুপম, বুুকভিশন, স্কয়ার ইত্যাদি। দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি গাইড ৪০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে। অধিক লাভের আশায় এক শ্রেণির প্রকাশনী সংস্থা এসব গাইড বাজারজাত করছে। দৃশ্যত এসব উত্তর সম্বলিত গাইড। কিন্তু শিক্ষার্থীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিক্রি হচ্ছে সহায়ক বই হিসেবে।
গাইবান্ধা শহরের পশ্চিমপাড়ার অভিভাবক নাজমা খাতুন বলেন, গাইডের দামও বেশি। ফলে দরিদ্র অভিভাবকরা বেশিদামে বই কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। জেলার অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গাইবান্ধা আহম্মেদ উদ্দিন শাহ শিশু নিকেতন স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ মাজহারউল মান্নান বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী, অনুশীলনমূলক ও সৃজনশীল বই হতে হবে। যা প্রশ্ন সৃষ্টিকারক হবে। শিক্ষার্থীরা বই পাঠের পর মাথা ঘাটিয়ে উত্তর বের করবে। কিন্তু এ ধরনের গাইড বইয়ে উত্তর জুড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশ ঘটছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাইবান্ধা শহরের এক পুস্তুক বিক্রেতা বলেন, গাইড বই বিক্রির অভিযোগে পার্শ্ববর্তী বগুড়া জেলা শহরের চারজন পুস্তক ব্যবসায়ীর জরিমানা আদায় করেছে সেখানকার প্রশাসন। অথচ গাইবান্ধায় ডোনেশন দিয়ে গাইড বই চালানো হলেও বিক্রি বন্ধে প্রশাসনের উদ্যোগ নেই।
জেলা পুস্তুক ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিন্টু মিয়া বলেন, সরকার গাইড বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু কিছু ব্যবসায়ী সহায়ক বই হিসেবে এগুলো চালিয়ে দিচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এগুলো সহায়ক বই নয়। এ ধরনের বই বিক্রি না করতে সমিতির সদস্যদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সমিতির উদ্যোগে অনেক বই জব্দও করা হয়েছে। তারপরও বিক্রি বন্ধ করা যাচ্ছে না। একই বিষয়ে লেকচার পাবলিকেশন লিমিটেডের স্থানীয় বিক্রয় প্রতিনিধি শাহজাহান আলী দাবি করেন, আমাদের কোম্পানির বই বৈধ। এগুলো সহায়ক বই হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।
ডোনেশন প্রসঙ্গে গাইবান্ধা সাদুল্লাপুর বহুমুখী পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. এনশাদ আলী বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের গাইড কিনতে বলি না। তবে কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চুপিসারে এসব গাইড চালাচ্ছে।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, গাইড বিক্রি বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কড়া নির্দেশনা রয়েছে। তারপরও শিক্ষকরা ডোনেশন নিয়ে শিক্ষার্থীদের গাইড কিনতে বলছেন।তিনি বলেন, কারা গাইড বই কিনতে বলে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।