নিস্তেজ হয়ে না পড়া পর্যন্ত পিটিয়েছি : অনিক - দৈনিকশিক্ষা

নিস্তেজ হয়ে না পড়া পর্যন্ত পিটিয়েছি : অনিক

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় নেতৃত্ব দেয়া আসামি অনিক সরকার ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত এই তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক দুই দফায় ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে শতাধিকবার আবরারকে আঘাত করেন। শনিবার (১২ অক্টোবর) জবানবন্দিতে তিনি বলেছেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত আবরার নিস্তেজ হয়ে না পড়ে ততক্ষণ পর্যন্ত ধাপে ধাপে আমিসহ অন্যরা তাকে পিটিয়েছি।’

এদিকে আবরার হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার আরেক আসামি মাজেদুর রহমান নওরোজকে গতকাল পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। এজাহারভুক্ত আরেক আসামি মোয়াজ আবু হুরায়রাকে ঢাকার উত্তরা থেকে গতকাল সকালে গ্রেফতার করা হয়েছে।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার ফজলুর রহমান বলেন, অনিক সরকার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলাম তাঁর খাস কামরায় আসামির জবানবন্দি নেন। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

আবরার হত্যা মামলায় এ নিয়ে মোট তিনজন আদালতে জবানবন্দি দিলেন। তাঁদের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার জবানবন্দি দেন বুয়েট ছাত্রলীগের উপসমাজকল্যাণ সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল এবং পরদিন জবানবন্দি দেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিওন।

জবানবন্দিতে অনিক বলেন, ‘আগে থেকেই অর্থাৎ ঘটনার চার-পাঁচ দিন আগে আবরার আমাদের টার্গেটে ছিল। উদ্দেশ্য ছিল, ওর কাছ থেকে হলের কিছু শিবিরকর্মীর নাম জানা। ঘটনার দিন সে (আবরার) গ্রামের বাড়ি থেকে আসার পর আমাদের মধ্যে সিদ্ধান্ত হয় সন্ধ্যার পর তাঁকে ২০১১ নম্বর কক্ষে ডাকা হবে। এরপর রাত ৮টার পর আবরারকে ওই কক্ষে ডাকা হয়। সঙ্গে তাঁর মোবাইল ও ল্যাপটপ আনা হয়। তাঁকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ওই সময় আবরার চুপ ছিল। একপর্যায়ে তাঁর মোবাইল ও ল্যাপটপ ঘেঁটে উসকানিমূলক কিছু তথ্য পাই আমরা। এরপর মারধর শুরু হয়। প্রথমে চড়-থাপ্পড় মারে মেহেদি। ইফতিও মারতে থাকে। একপর্যায়ে সামসুল আরেফিন ক্রিকেট স্টাম্প নিয়ে আসে। এরপর আমি (অনিক) স্টাম্প দিয়ে আবরারের পায়ে পেটাতে থাকি। আমি দুই দফায় আবরারকে অনেক পেটাই। কক্ষে থাকা ইফতি এবং তানভীরও স্টাম্প দিয়ে পেটায়। ওই সময় মেহেদি হাসান রবিন রুমে এসে তাকে পেটায়। একপর্যায়ে আবরার নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এর মধ্যে বমি করে। এরপর আবরারকে কোলে করে সিঁড়িঘরের পাশে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ ও চিকিৎসকদের খবর দেয়া হয়। চিকিৎসক এসে ওকে মৃত ঘোষণা করেন।’

আবরার ফাহাদের ওপর যে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে তার বর্ণনা উঠে এসেছে অনিক ও অন্যদের  জবানবন্দিতে। এর আগে এই হত্যাকাণ্ডের রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন ইফতি মোশাররফ সকাল ও মেফতাহুল ইসলাম জিওন। ইফতি জানিয়েছিলেন, আবরারের হাঁটু, পা, পায়ের তালু ও বাহুতে আঘাত করছিলেন অনিক সরকার। একই কায়দায় অন্তত ২২ জন দফায় দফায় আবরারকে পেটান। ক্যান্টিনে রাতের খাবার খেয়ে এসে আবরারকে নিস্তেজ অবস্থায়ও ফের পেটানো হয়। রাত ১১টার দিকে অনিক স্টাম্প দিয়ে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে এলোপাতাড়ি পেটান।

আদালতে মাজেদ : আবরার হত্যাকাণ্ডের পর আসামির তালিকায় থাকা মাজেদুল ইসলামকে গত শুক্রবার সিলেট থেকে গ্রেফতারের পর গতকাল আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তিনি আদালতকে  জানান, তাঁর নামটি ভুল বলেছে পুলিশ।

এই বুয়েট ছাত্র সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার নাম মাজেদুর রহমান নওরোজ। পুলিশ ভুল করে মাজেদুল ইসলাম লিখেছে।’ আবরারের বাবা ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় যে মামলাটি করেন সেখানে আসামির তালিকায় ৮ নম্বরে মাজেদুল ইসলামের নাম রয়েছে।

মোয়াজ গ্রেফতার : আবরার হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ও বুয়েটের সিএসই বিভাগের ১৭তম ব্যাচের ছাত্র মোয়াজ আবু হুরাইরাকে গতকাল সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টর থেকে গ্রেফতার করা হয়। ডিএমপির উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, আবরার হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত এজাহারভুক্ত ১৫ জনসহ ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হলো। এঁদের মধ্যে অমিত সাহাসহ চারজনের নাম আবরারের বাবার করা মামলায় না থাকলেও হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0076529979705811