টঙ্গীর গাজীপুরা কাজিপাড়া এলাকায় বুধবার (২৪ জুলাই) দুর্বৃত্তের হাতে নিহত স্কুল ছাত্র তৌসিফুল ইসলাম মুন্নার (১৩) গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফলের রায় তাঁতেরকাঠীতে চলছে শোকের মাতম। ঢাকার গাজীপুর থেকে লাশ নিয়ে আসা হচ্ছে এমন খবরে মুন্নার পরিবারের আত্মীয়-স্বজনসহ পাশের কয়েক গ্রামের শত শত লোকজন সকাল থেকে তাদের বাড়িতে ছুটে আসে।
এ্যাম্বুলেন্সে দুপুরের দিকে লাশ এসে পৌঁছলে অবতারণা হয় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের। নাতির লাশ দেখে বাকরুদ্ধ হন সত্তোরোর্ধ দাদা শাহজাহান হাওলাদার। চাচি, চাচাতো ভাইবোন, নানা-নানী, মামাতো ভাইবোনসহ পরিবারের স্বজনের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে রায় তাঁতেরকাঠীর বাতাস।
তৌসিফুল ইসলাম মুন্না ঢাকার উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের শাহীন ক্যাডেট স্কুল এ্যান্ড কলেজে অষ্টম শ্রেণির। বাবা মিজানুর রহমান ওরফে জাহাঙ্গীর বনানীতে একটি ম্যানপাওয়ার অফিসে চাকরি করেন। টঙ্গীর গাজীপুরা চন্দ্রিমা হাউজিংয়ের বনানী কটেজের একটি ভাড়া বাসায় জাহাঙ্গীর তার মুন্নাসহ তিন ছেলে ও স্ত্রী মুকুল বেগমকে নিয়ে বসবাস করেন। বুধবার সকালে বাসার ভেতরে ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলাকেটে ও পেটে আঘাত করে মুন্নাকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। টঙ্গী পূর্ব থানার পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। এরপর ময়না তদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে পটুয়াখালীর বাউফলের রায় তাঁতেরকাঠী গ্রামের বাড়িতে লাশ নিয়ে আসা হয়।
দুর্বৃত্তের হাতে মুন্না নিহত হওয়ায় আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকায় নেমেছে শোকের ছায়া। চাচাতো ভাই সিফাত ও আ. রহমান বিলাপ করে বলেছেন, আমার জোড়ের ভাইকে ফিরিয়ে দাও। দাদা শাহজাহান হাওলাদার ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে কেবল তাকাচ্ছেন এদিক-সেদিক। তাকে ঘিরে বাড়ির সামনে স্কুল মাঠে অবস্থান করেন স্থানীয়রা।
নৃশংস এই খুনের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন মুন্নার মামা হাফিজুর রহমান। এদিকে বাড়িতে ছেলের লাশ নিয়ে এসে অচেতন হয়েছেন বাবা মিজানুর রহমান জাহাঙ্গির। মা মুকুল বেগম পাগল প্রায়। তবে ছেলে হত্যায় মুকুল বেগমের সন্দেহের তীর তার (মুন্নার) বন্ধু-বান্ধবের দিকে। বুধবার সকালে প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছোট ছেলে তামিমকে নিয়ে স্কুলে যান মুন্নার মা। ফিরে এসে বাইরে থেকে বাসার ছিটকিনি লাগানো পান। ছিটকিনি খোলার পর প্রথমে তামিম বাসার ভেতরে ঢোকে। মুন্নাকে তার রুমে রক্ত মাখা পড়ে থাকতে দেখে দৌঁড়ে মায়ের কাছে আসে। মা মুকুল বেগম ছুটে গিয়ে বিছানার ওপর নৃশংসভাবে নিহত ছেলে মুন্নার রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। বাসার আলমিরার লক ভাঙা থাকলেও স্বর্ণালঙ্কার কিংবা কোন টাকা পয়সা না নিয়ে দুর্বৃত্তরা মুন্নার ডিএসএলআর ক্যামেরা ও বাসায় ব্যাবহৃত একটি মোবাইলফোন নিয়ে যায়। মুকুল বেগম বলেন, ‘মুন্না ক্যামেরায় ছবি তুলত প্রায়ই। বন্ধু-বান্ধবের (মুন্নার বন্ধু) সঙ্গে ক্যামেরা নিয়ে কোন কিছু হতে পারে। তারাই হয়তো এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে।
মুন্নার খুনের ঘটনায় ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন স্থানীয়রাও। স্থানীয় নাজিরপুর ইউপির চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহিম ফারুক, পটুয়াখালী জেলা পরিষদের সদস্য হারুন-অর-রশিদ খান, মুন্নার মামা প্রথম আলোর বাউফল প্রতিনিধি এবিএম মিজানুর রহমানসহ স্থানীয় বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষকরা মুন্নার জানাযা নামাজে অংশ নেন। দিনে-দুপুরে বাসায় ঢুকে এমন নির্মম হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করেন তারা। এ ঘটনায় তিন জনকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশের একটি সুত্র জানিয়েছে।
কয়েক হাজার লোকের উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার জানাযা শেষে রায় তাঁতেরকাঠীর গ্রামের বাড়ির সামনে প্রাইমারি স্কুল সংলগ্ন পারিবারিক গোরস্থানে মুন্নার লাশ দাফন করা হয়।