নিয়োগ ও সনদ বাণিজ্যসহ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ - দৈনিকশিক্ষা

নিয়োগ ও সনদ বাণিজ্যসহ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ

ঝিনাইগাতী প্রতিনিধি |

শেরপুরের ঝিনাইগাতী মহিলা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, নিয়োগ ও সনদ বাণিজ্য, ম্যানেজিং কমিটি গঠনে স্বজনপ্রীতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি স্থানীয় সংসদ সদস্য, দুদক ও ময়মনসিংহের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালকের কাছে ওই প্রতিষ্ঠানের দুই শিক্ষক এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তবে অধ্যক্ষ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

লিখিত অভিযোগে শিক্ষক পি আর মুহম্মদ রাহুল জানিয়েছেন, তিনি ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করে কলেজের ডিগ্রি শাখায় ইংরেজির প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। গত আট বছর ধরে কোনো বেতন ছাড়াই শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন তিনি। তাছাড়া কলেজের পরিচালনা পর্ষদে শিক্ষক প্রতিনিধি এবং জাতীয় নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্বও পালন করেছেন। গত ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবরে এমপিও হওয়ার পর তাকে অধ্যক্ষ নিজের বাড়িতে ডেকে নিয়ে যান। এমপিওর তালিকায় নাম তুলতে চাইলে উপরের অফিসে ১৫ লাখ টাকা দিতে হবে বলে জানান তিনি। কিন্তু অধ্যক্ষের এ প্রস্তাব তিনি নাকচ করে দেন।

মুহম্মদ রাহুল অভিযোগ করেছেন, এরপর অধ্যক্ষ করোনাকালে গোপনে কাগজপত্র জাল করে তারিখ পিছিয়ে প্রচুর টাকার বিনিময়ে আবু হানিফ নামে একজনকে প্রভাষক (ইংরেজি) পদে নিয়োগ দেন। অথচ কলেজে গত আট বছরে ডিগ্রি শাখায় অন্য কোনো ইংরেজির শিক্ষকই ছিলেন না। টাকার বিনিময়ে অধ্যক্ষ রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতির শিক্ষকসহ তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীও নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন মুহম্মদ রাহুল।

তিনি জানিয়েছেন, কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির অধিকাংশ সদস্যই অধ্যক্ষের স্বজন। কমিটিতে অধ্যক্ষ ছাড়াও রয়েছেন তার স্ত্রী, ভগ্নিপতি, ভাগ্নে ও বেয়াই। এদের মধ্যে স্ত্রী মাহমুদা সিদ্দীকা এইচএসসি পাস। অথচ তিনি প্রভাষক হিসেবে ইসলাম শিক্ষা পড়ান।

লিখিত আবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, জাল স্নাতক (সম্মান) ও নিবন্ধন সনদ ব্যবহার করে এনে অধ্যক্ষ স্ত্রীকে চাকরি দিয়েছেন। দর্শন বিভাগের প্রভাষক আফরোজাকেও চাকরি দিয়েছেন নকল নিবন্ধন সনদ দিয়ে। এমপিওর তালিকায় নাম পাঠানোর সময় তিনি এসব দম্ভভরে সবার সামনেই বলেন বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

একই কলেজের দর্শন বিভাগের প্রভাষক যমুনা খাতুন শেরপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, এমপিওভুক্ত করার জন্য অধ্যক্ষ তার কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। না হলে তার নাম এমপিওতে থাকবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন।

যমুনা খাতুন জানান, গত মার্চ থেকে তিনি মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। এরই মধ্যে তিনি জানতে পেরেছেন, ফুলপুর উপজেলার কাতুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে অধ্যক্ষ দর্শন বিভাগে চাকরি দিয়েছেন।

যমুনা খাতুন জানান, তিনি ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে কলেজে পড়াচ্ছেন। অথচ অন্য একজন এখন কলেজের শিক্ষক! এ ব্যাপারে তিনি তদন্ত করে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।

এ ছাড়া ঝিনাইগাতী উপজেলার বেশ কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অশোভন মন্তব্য করার অভিযোগ এনেছেন। ধানশাইল ইউপি চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম ও গৌরীপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান মন্টু দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, অধ্যক্ষ খলিল একজন উগ্রপন্থি, গণবিরোধী ও স্বাধীনতার শত্রু। তিনি উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করার পাশাপাশি আইয়ুব খানের শাসনের প্রশংসা করায় তাকে আমরা সভা থেকে বের করে দিয়েছিলাম।

কলেজের গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি বেলায়েত হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, অধ্যক্ষ খলিল ছাত্রজীবনে শিবির ও পরে জামায়াতের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তার কিছুই ছিল না। নিয়োগ বাণিজ্য করে এখন তিনি কোটিপতি। ঝিনাইগাতীতে তিনতলা ভবন করেছেন। শেরপুর বাস টার্মিনালে জমি কিনেছেন।

ঝিনাইগাতীর ইউএনও রুবেল মাহমুদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, “প্রভাষক নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে। ডিসি স্যারের কাছে অভিযোগ যাওয়ার পর তিনি আমাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। অচিরেই তদন্ত শুরু করব।”

ইউএনও বলেন, “২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে অধ্যক্ষ খলিল আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বঙ্গবন্ধুর নামে কটূক্তি করেছিলেন। তখন চেয়ারম্যানরা
প্রতিবাদ করেন এবং তাকে বহিষ্কারের সুপারিশ করে জেলা প্রশাসক ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের অফিসে চিঠি পাঠানো হয়।”

ময়মনসিংহ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক ড. আজহারুল ইসলাম অজু দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, “উপযুক্ত ডকুমেন্ট পেলে তদন্ত কমিটি করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যায় হয়ে থাকলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা তাকে, মহাপরিচালক শিক্ষা বোর্ড ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জানাতে পারেন।”

কলেজের অধ্যক্ষ খলিলুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, “আর্থিক বিষয়ে আনা অভিযোগ শতভাগ মিথ্যা।”

তিনি বলেন, “আমি কোনো দল করি না। তবে সব দলের ভালো কাজের প্রশংসা করি। এটা আমার আদর্শ।”

তিনি আরও বলেন, “কিছু লোক প্রতিহিংসাবশত আমার বিরুদ্ধে লেগেছে।”

সাম্প্রতিক নিয়োগ কীভাবে হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সর্বশেষ নিয়োগ হয়েছে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে।”

তবে শেরপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী ফজলুল হক চাঁন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, “২০১২ খ্রিষ্টাব্দের পর ওই কলেজে কোনো শিক্ষক কিংবা কর্মচারী নিয়োগ হয়েছে বলে জানি না। নিয়োগ হলে এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিশ্চয়ই কিছু জানতাম।”

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038511753082275