নিয়োগ-বেতন জটিলতায় সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীরা - দৈনিকশিক্ষা

নিয়োগ-বেতন জটিলতায় সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীরা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বিপাকে পড়েছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্তরা। কারণ অনেক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত নয়। তাই মনোনীত প্রার্থীদের অনেকে ওইসব প্রতিষ্ঠানে যোগদান দেননি। যারা যোগ দিয়ে ক্লাস নিচ্ছেন, তারা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। এছাড়া ভৌত বিজ্ঞানের বিষয়টি পুরনো নীতিমালায় না থাকায় চাকরিতে যোগ দেয়া শিক্ষকদের এমপিও থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। মহিলা কোটায় জটিলতার কারণে সুপারিশপ্রাপ্ত অনেক শিক্ষক এমপিও পাচ্ছেন না। এভাবেই বহুমুখী জটিলতায় পড়ে আছেন শিক্ষক প্রার্থীরা। এক বছর ধরে এই পরিস্থিতি চলছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ চাকরিতে সুপারিশকারী প্রতিষ্ঠান বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মধ্যকার সমন্বয়হীনতার কারণে জটিলতার নিরসন হচ্ছে না। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদেনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদটি লিখেছেন মুসতাক আহমদ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রোববার রাজধানীর এনটিআরসিএ কার্যালয়ে দেখা যায়, কয়েকশ’ ভুক্তভোগী চাকরি প্রার্থী অভিযোগ নিয়ে এসেছেন। তারা সংস্থাটির অভিযোগ কেন্দ্রে লিখিতভাবে অভিযোগ দাখিল করছেন। আবার কেউ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের কাছে সরাসরি অভিযোগ দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। তথ্য কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে, এ ধরনের দুই থেকে আড়াইশ’ অভিযোগ জমা আছে।

জানতে চাইলে সংস্থাটির চেয়ারম্যান এসএম আশফাক হুসেন বলেন, ‘এটি বেশ পুরনো ইস্যু। বর্তমানে প্রায় ২শ’ প্রার্থীর সমস্যা আছে। তবে আমরা কেবল সুপারিশকারী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মাউশির। বেতন-ভাতা বা এমপিও দেয় তারা। এখন এ বিষয়টি তাদেরই নিষ্পত্তি করতে হবে।’

জানা যায়, ২০১০ সালের এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী বাংলা, ইংরেজি, সমাজবিজ্ঞান ও ব্যবসা শিক্ষা- এই ৪টি বিষয়ে ৩ জন শিক্ষকের পদ ছিল। ২০১৮ সালের এমপিও নীতিমালায় এই ৪টি বিষয়ে ৪ জন শিক্ষকের পদ অনুমোদিত হয়েছে। ২০১৮ সালে চাহিদা আহ্বানের সময় এই এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো অনুমোদিত ছিল না। প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা ভুল করে বা আগাম নীতিমালার খবর সামনে রেখে চাহিদা দিয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পদের শূন্যতা যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন দিয়েছে। ২০১৯ সালের মে মাসে এমপিও জনবল কাঠামো কার্যকর করে পরিপত্র জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০১৮ সালের এমপিও নীতিমালা জারির পর সৃষ্ট পদে ব্যবসায় শিক্ষা, ভৌত বিজ্ঞানসহ ভুল সুপারিশের সমস্যা মিটে যাওয়ার কথা। এ কারণে সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকরা এমপিওভুক্তির আশায় আবেদন করে। কিন্তু ৪ আগস্ট মাউশি আরেকটি পরিপত্র জারি করে নতুন সৃষ্ট পদে এমপিওর জন্য শর্ত আরোপ করে যে, এই নীতিমালা ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের আগে নিয়োগকৃতদের ক্ষেত্রে কার্যকর নয়। ফলে প্রায় সব এমপিও আবেদন বাতিল করে দেন বিভাগীয় উপপরিচালকরা। আবার রহস্যজনক কারণে কোনো কোনো উপপরিচালক নতুন সৃষ্ট পদের ফাইল ছেড়ে দিয়েছে বলেও ভুক্তভোগীরা জানিয়েছে।

এছাড়া মহিলা কোটায় জটিলতার কারণে সুপারিশপ্রাপ্ত অনেক শিক্ষক এমপিও হতে পারছেন না। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য একাধিকবার মানববন্ধন, এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন, মাউশি মহাপরিচালক বরাবর স্মারকলিপি পেশ করার পরও কোনো সুরাহা না হওয়ায় হতাশ প্রায় ১০০০-এর মতো মাধ্যমিক শিক্ষক। ভুক্তভোগী শিক্ষক মো. বিল্লাল হোসেন আক্ষেপ করে বলেন, চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে নিয়োগ পেয়ে ১০ মাস বিনা বেতনে নিয়মিত পাঠদান করে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে দেখার কেউ নেই।

মাউশিতে খোঁজ নিতে গেলে নাম প্রকাশ না করে এক কর্মকর্তা জানান, এনটিআরসিএ’র সুপারিশ নিয়ে কর্মকর্তাদের নেতিবাচক অভিজ্ঞতা আছে। সাধারণ শিক্ষায়, ইসলামী শিক্ষায় পাস করা প্রার্থীকে মাদ্রাসায় আরবি বিষয়ের প্রভাষক করা হয়েছে। আবার মাদ্রাসায় নিবন্ধন করা কিন্তু স্কুলের ধর্ম বিষয়ের শিক্ষক করা হয়েছে। শূন্যপদের প্রকৃত তথ্য না নিয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। আবার পদ এমপিওভুক্ত কিনা সে তথ্য না নিয়েও সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া ভৌত বিজ্ঞান এমপিও নীতিমালায় নেই, কিন্তু নিয়োগ করা হয়েছে। এমপিও নীতিমালায় ৪ বছরের ডিগ্রিধারী গ্রাজুয়েট লাগবে আইসিটি বিষয়ের জন্য; কিন্তু ৬ মাসের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নেয়া ব্যক্তিদেরও সুপারিশ করা হয়েছে। এভাবে নানা কারণে এনটিআরসিএ শিক্ষক নিয়োগ করতে গিয়ে ‘হযবরল’ করে ফেলেছে। ফলে সুপারিশপ্রাপ্তরা ভোগান্তিতে পড়েছে। আরেক কর্মকর্তা বলেন, শূন্যপদের প্রকৃত তথ্য জানে মাউশি। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানপ্রধান থেকে যে শূন্যপদের তালিকা নিয়েছে সেটি প্রকৃত ছিল না। আবার এমপিও এবং যোগদান ইস্যুতে মাউশিকে পাশ কাটিয়ে এনটিআরসিএ সরাসরি অনেক নির্দেশনা শিক্ষার মাঠ প্রশাসনকে দিয়েছে, যা কর্মকর্তারা আমলে নেননি, বাস্তবায়নও হয়নি। সব মিলে জটিলতা লেগে আছে।

জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর সারা দেশে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ৩৯ হাজার ৫৩৫টি শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে এনটিআরসিএ। ওইসব পদের বিপরীতে নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার চাকরি প্রার্থী ২৫ লাখ ৭৯ হাজার ১৯৬টি আবেদন করেন অনলাইনে। তাদের মধ্য থেকে স্কুল, কলেজ এবং মাদ্রাসার শিক্ষক পদে ৩৯৫৩৫ জনকে সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু এনটিআরসিএ থেকে চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেও এমপিওভুক্ত না হওয়ায় চরম হতাশায় শিক্ষকরা।

প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.010906934738159